সাবের হোসেন চৌধুরী : বনের জমি দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় নয়, বন কর্মকর্তার খুনিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে

আগের সংবাদ

সর্বাত্মক অভিযানে যৌথবাহিনী

পরের সংবাদ

চলতি বছর তৈরি পোশাক রপ্তানি ছাড়াবে ৫০ বিলিয়ন ডলার : বিজিএমইএ সভাপতি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চলতি বছর তৈরি পোশাক রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের (পিডব্লিউসি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। করোনাপরবর্তী সময়ে ও ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যের রোডম্যাপ তৈরির অংশ হিসেবে ‘ফ্রম শার্টস টু শোরস : আ ব্লæ প্রিন্ট ফর বাংলাদেশ আরএমজি ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক গবেষণাটি করে পিডব্লিউসি।
গতকাল উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে গবেষণা প্রতিবেদনের খসড়া প্রকাশ করা হয়। এতে পিডব্লিউসি বলেছে, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর ক্ষেত্রে কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানির হার বর্তমানে ৪৪ থেকে ৬২ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই বৈশ্বিক রপ্তানি চাহিদা ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকেও কৃত্রিম তন্তুনির্ভর পোশাক তৈরিতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
এ সময় পোশাক খাতে বিগত ৩ বছরে টেকসই পোশাক শিল্প নির্মাণে উদ্যোগ ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, রপ্তানিতে নতুন বাজার তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এসব বাজারে রপ্তানি আগের চেয়ে বেড়েছে। যা বিগত ১৪ বছরে দশ গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি পণ্য বহুমুখীকরণও বেড়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কৌশলগত কারণে তৈরি পোশাক নিয়ে ভার্চুয়াল মার্কেটে উপস্থিতি বাড়ানো জরুরি। একই সঙ্গে এই খাতে স্থানীয় বিনিয়োগও বৃদ্ধি করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর কীভাবে রপ্তানি আয় বাড়ানো যায় তা নিয়ে আরো গবেষণার আহ্বান বিজিএমইএ সভাপতি।
ফারুক হাসান বলেন, পোশাক খাতকে বিশ্ব বাজারে আরো জোড়ালোভাবে উপস্থাপন এবং প্রচারের জন্য গবেষণা করেছি যার ফলে বিশ্ববাজারে আমাদের পোশাক রপ্তানি বাড়বে। বর্তমানে বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশ হচ্ছে কৃত্রিম তন্তু বা ম্যান মেড ফাইবারের (এমএমএফ) তৈরি পণ্য।
২০৩০ সালে এমএমএফ পণ্য রপ্তানি মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ ছাড়াবে। তবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে এমএমএফের হিস্যা এখনো অনেক কম; ৩০ শতাংশের নিচে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৩ সালে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক রপ্তানি ছিল প্রায় ৭৯৪ বিলিয়ন বা ৭৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি পণ্যের হিস্যা ছিল ৪৬ শতাংশ। ২০২২ সালে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বেড়ে হয় ৯৫৩ বিলিয়ন বা ৯৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার; যেখানে এমএমএফের হিস্যা ছিল ৫০ শতাংশ। পিডব্লিউসি বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি ১ হাজার ১২১ বিলিয়ন বা ১ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি ডলার ছাড়াবে। সেখানে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পণ্যের হিস্যা হবে ৬০ শতাংশ।
প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে (২০২২ সালের হিসাব) চীন, ভিয়েতনাম, তুরস্ক ও ইতালি কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে মোট পোশাক রপ্তানির বিপরীতে এমএমএফে চীনের হিস্যা ৬২ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৫৬ শতাংশ, তুরস্কের ৪৮ শতাংশ ও ইতালির ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২৭ শতাংশ হচ্ছে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পণ্য।
ফারুক হাসান বলেন, করোনা মহামাবীর পূর্বে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থছরে আমাদের সামগ্রিক রপ্তানি আয় ছিল ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ পোশাক রপ্তানির শেয়ার ছিল ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ। সে বছরটিতে আমাদের এক ধাক্কায় পোশাক রপ্তানি নেমে আসে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে।
বিলিয়ন ডলার থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা প্রায় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশোক রপ্তানি ১০২৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে মোট রপ্তানি পোশাকের শেয়ার পৌঁছেছে ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এই শেয়ার ৮৫ দশমিক ৪২ শতাংশে পৌঁছে গেছে এবং এ সমযে আমাদের অর্জিত প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
আর ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে পোশাক রপ্তানি ছিল ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে আমি ও আমার বোর্ড দায়িত্ব নেয়ার পর এপ্রিল ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২ এই ১ বছরে পোশাক রপ্তানি ছিল ৩৯৪০ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিল-মার্চ ২০২২-২৩ এ রপ্তানি পৌঁছে ৪৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে, আর এপ্রিল-মার্চ ২০২৩-২৪ এ পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো- ২০২৪ এর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রতিটি মাসে এর আগে যে কোনো বছরের একই মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা একক মাস হিসেবে এ যাবৎ সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের মাস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়