পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

নারীর জীবনের মূল সংকট বৈষম্য : মহিলা পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তারা

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নারীর জীবনের মূল সংকট বৈষম্য। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নারী সমাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের পথে সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক বাধার বিস্তার ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে নারীকে উন্নয়নের লক্ষ্য হিসেবে দেখার পরিবর্তে উন্নয়নের বাহন হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিও সমাজের সর্বস্তরে প্রসার ঘটাতে হবে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার পরিষদের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে ‘বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ করি, সমতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করি’ সেøাগানের আলোকে ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে সংগঠনটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। ঘোষণা পাঠ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার হোসাইন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শায়লা নাসরিন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী, গেøাবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আদনান মুস্তারি বক্তব্য রাখেন।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আজ জ্ঞান বিজ্ঞানের বিস্তার ঘটেছে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। সমাজে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়েছে। জলবায়ু সংকট বাড়ছে। এর মধ্যে নারীর জীবনে পরিবর্তন হয়েছে। তারা অধিকার সচেতন হয়েছে। নারীর শক্তিতে বিকশিত করতে নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নারীর জীবনের মূল সংকট বৈষম্য, এই বৈষম্য কোনো কোনো জায়গায় আছে তা চিহ্নিত করতে হবে। লড়াকু নারীর জীবনে যে সাহস সঞ্চার হয়েছে তাকে সংগঠিত করে নারী আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সমতা, ন্যায়বিচার ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই। প্রয়োগ বলবৎ করতে হলে সম্মিলিতভাবে নারী আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে; নতুন প্রজন্মকে দৃশ্যমান করতে হবে। আইনজীবীদের সময়োপযোগী প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রযুক্তির বাইরে যেয়েও মহিলা পরিষদকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ড. নাসিম আক্তার হোসাইন বলেন, নারী কি তার নিজের কথা বলতে পারে-এটা আজ মৌলিক প্রশ্ন, এর সঙ্গে নারীর স্বার্থ, গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষিত। এই ডিসকোর্স ভেঙে সমাজকে বিনির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নারীর মুক্তির জন্য দেয়ালের বাইরে এসে কাজ করতে হবে। নারীর কাজের অর্থনৈতিক মূল্য দিতে হবে।
ড. শায়লা নাসরিন বলেন, নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য প্রকৃতির আরোপিত নয় বরং সাংস্কৃতিক-এই বিষয়ে স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক মানস পরিবর্তিত না হলে উন্নয়নকে টেকসই করা সম্ভব নয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লৈঙ্গিক পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তির পরিচয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী-পুরুষকে সম্পত্তিতে সমান অধিকার দিতে হবে।
শাহনাজ সুমী বলেন, কেবল বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে নারীর প্রতি থাকা বৈষম্য নানা মাত্রা নিয়ে সামনে হাজির হচ্ছে। বৈষম্য দূর করতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বাংলাদেশে অসাম্যতার বিরুদ্ধে একটা লড়াই চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ নারীদের জন্য সংবেদনশীল পরিবেশ নেই। রাষ্ট্র ও সমাজ নারীর প্রাপ্যটুকু দিতে চায় না। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নারীকে নতুনভাবে নেতৃত্বের কথা বলা হলেও এখানে বৈষম্য আছে। ‘বৈষম্য যে অপরাধ’ এটা নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব না হলে বৈষম্য যাবে না।
মালেকা বানু বলেন, বৈশ্বিক ও জাতীয় নারী আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় নারীকে যুক্ত করতে নারীবান্ধব বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণীত হলেও আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আছে।

জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং হলেও সামাজিক রীতিনীতি, প্রথায় এখনো বৈষম্য আছে: ধর্মভীরুতার নামে পশ্চাৎপদতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নারী আন্দোলনসহ সব সামাজিক আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়