পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটা : ফুটপাতেও মধ্যবিত্তের ভিড়!

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আয়েন উদ্দীন : দেইখ্যা লন তিনশ, বাইছ্যা লন তিনশ, একদাম তিনশ, যেটাই লন তিনশ- রাজধানীর নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাতের দোকানিদের হাঁকডাকের শব্দ এটি। তবে এ ধ্বনি এখন পুরো রাজধানীজুড়েই। ক্রেতা-বিক্রেতার দরদামে জমজমাট হয়ে উঠেছে ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা, যা শেষ সময়ে আরো বাড়ার প্রত্যাশা।
কোন পণ্য নেই ফুটপাতে? শার্ট, প্যান্ট, জুতা, সালোয়ার, কামিজ, রং-বেরঙের থ্রি-পিস, গেঞ্জি, পাজামা-পাঞ্জাবি, কসমেটিকস, টুপি, আতর সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে এখানে। জাঁমজমকপূর্ণ আলো ঝলমলে মার্কেটে পোশাকের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় নি¤œ আয়ের পাশাপাশি মধ্যআয়ের মানুষদেরও ভরসার স্থান হয়ে উঠছে এ ফুটপাত। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যেই।
সরজমিন দেখা গেছে, কাঠের চৌকিতে পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, বাচ্চাদের জামাসহ নানা ধরনের জিনিসের পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। সব বয়সি নারী-পুরুষের জন্য রং-বেরঙের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। সারি সারি এসব দোকান থেকে পছন্দমতো জামা-কাপড় ও শার্ট কিনছেন নগরবাসী। এসব শার্ট রাজধানীর বিভন্ন কারখানা থেকে সংগ্রহ করে এখানে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতে অল্প আয়ের মানুষ সাধ্যের মধ্যে পণ্য কিনতে পেরে যেমন খুশি, তেমনই দোকানিরাও পণ্য বিক্রি করে খুশি। ঈদ উপলক্ষে ফুটপাতের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে শিশুদের ফ্রক, টি-শার্ট ছাড়াও বাহারী ডিজাইন ও নানা রঙের পোশাক। পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের পায়জামা পাঞ্জাবি। তবে অধিকাংশ দোকানে ছেলেদের পোশাক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্যান্ট, শার্ট ও টিশার্ট।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একেকটি প্যান্ট ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শার্ট ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের টি-শার্ট ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর বাচ্চাদের পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে শার্ট, টি-শার্ট, জিন্স, প্যান্ট ও জুতা পাওয়া যাচ্ছে। এসব পণ্য ৫০ থেকে শুরু ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল বায়তুল মোকররমের সামনে ফুটপাতে গেঞ্জি, গামছা, টুপি বিক্রি করছেন আমির হোসেন। এখানে ৪০ টাকা ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এসব জিনিসপত্র। মানুষের ভিড়ও দেখা যায়। তিনি বলেন, বছর ঘুরে আবারো আসছে ঈদ উৎসব। তাই শপিং মলগুলোর মতো ফুটপাতের দোকানগুলোতেও জমে উঠেছে কেনাকাটা। সীমিত লাভে মাল (পণ্য) ছাইড়া দিচ্ছি।
মতিঝিল এলাকার শার্ট বিক্রেতা আহমেদ আলী জানান, বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এখানে সারাক্ষণই ভিড় লেগে থাকে। বিক্রিও ভালো। বিভিন্ন অফিসের বড় কর্মকর্তারা এখান থেকে কেনেন।
মার্কেটের বাইরে ফুটপাতে বেচাকেনা জমজমাট হয়ে উঠেছে নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব ও মৌচাকের ফুটপাত এলাকায়। সকাল থেকে শুরু হয়ে বেচাকেনা চলে প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত। নিউমার্কেট ফুটওভার ব্রিজের নিচের ফুটপাতে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছিলেন আজিমপুরের বাসিন্দা মাসুদ। সঙ্গে স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, এখানে মানভেদে ২০০-৩০০ টাকায় পাঞ্জাবি, ১৬০ টাকায় শিশুদের টি-শার্ট ও ফ্রক এবং ২৬০ টাকায় শার্ট পাওয়া যাচ্ছে। বড় মেয়ের জন্য ফ্রক কিনেছেন তিনি।
নামিদামি শপিং মলে কেনাকাটার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফুটপাতের দোকানে ছুটছেন নগরীর অনেকই। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা সাধ্যের মধ্যে সেরাটা খুঁজে নেন এ ফুটপাত থেকেই। তাতেই পরিবারের চাহিদাও মেটে অনায়াসেই। দাম নিয়েও সন্তোষ জানান ক্রেতারা।
নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে আদুরের মেয়ের জন্য গোলফ্রক কিনেছেন আবদুর রহমান রহমান। তিনি একটি বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, ফুটপাতে শুধু নি¤œবিত্তরাই কিনে না। আমাদের মতো মধ্যবিত্তরাও এখন ভিড় করছে। বড় বড় মার্কেটগুলো পোশাকের অনেক দাম। তাই এখন সাধ্যের মধ্যে পছন্দের কাপড় ফুটপাত থেকে কিনছি।
ঈদ সামনে রেখে বসে নেই মৌসুমি হকাররাও। বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে থামা গাড়িগুলোর দিকে একেকজন ছুটছেন। কারো হাতে আতর, কারো হাতে টুপি, কারো হাতে নামাজ শিক্ষার বিভিন্ন ধরনের বই-সামগ্রী।
রমজানের প্রথম দিকে ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা তেমন জমজমাট ছিল না। আর দুই-এক দিন ধরে বেচাকেনা বেশ জমজমাট জানিয়েছেন ফুটপাতের দোকানি, ব্যবসায়ীরা। রমজানের শেষ সপ্তাহে বিক্রি আরো বাড়ার প্রত্যাশা দোকানিদের। নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাতে চৌকি নিয়ে পাঞ্জাবি, পাজামা ও প্যান্ট বিক্রি করছেন ভ্রামামাণ ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, মাস শেষ হলো মাত্র। যারা গার্মেন্টস ও বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন, তাদের অনেকেই এখনো বেতন-বোনাস পায়নি। কয়েকদিনের মধ্যে সবার হাতে টাকা চলে আসবে। তখন বিক্রি জমে উঠবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়