পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও আইওএম মিশনপ্রধানের

আগের সংবাদ

পাহাড়ে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : দ্বিতল সড়কে শতবর্ষী গাছ কেটে র‌্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত স্থগিত

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : আন্দোলনের মুখে বন্দরনগরীর টাইগারপাস-সিআরবির দ্বিতল সড়কে শতবর্ষী গাছ কেটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-চউক। র‌্যাম্পের পুনঃনকশা করে আন্দোলনকারী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। আন্দোলনকারী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কিছু করা হবে না বলেও জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চউকের সম্মেলন কক্ষে সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনপুম সেনের নেতৃত্বে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে চউক চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীরা সভায় জানিয়ে দেয়, টাইগারপাস-সিআরবি এলাকার দ্বিতল সড়ক নষ্ট করে ও গাছ কেটে ওই স্থানে কোনো র‌্যাম্প তারা চান না। চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নিউমার্কেট-কদমতলি এলাকা থেকে যেসব যানবহান উঠবে সেগুলোর জন্য টাইগারপাস-সিআরবির দ্বিতল সড়কে একটি র‌্যাম্প নির্মাণের প্রস্তাব আছে চউকের প্রকল্প পরিকল্পনায়। বিষয়টি জানার পর গত সোমবার থেকে আন্দোলনে নামে চট্টগ্রামের একাধিক নাগরিক সংগঠন। এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানায় সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসেন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম এবং সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতারা।
সভার শুরুতে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ড. অনুপম সেন বলেন, সভ্যতার আগ্রাসনে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্ভার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন দরকার, কিন্তু পরিবেশ বিঘিœত হলে সব উন্নয়নই ব্যর্থ হয়ে যাবে। টাইগারপাসের দ্বিতল সড়ক এক অপূর্ব সুন্দর জায়গা। সেখানে আমার মনে হয় না র‌্যাম্পের কোনো প্রয়োজন আছে। র‌্যাম্প হলে সেটা একটি কুৎসিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এত র‌্যাম্পের দরকার কেন হবে? আরবান প্ল্যানিং হবে এমন, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ অবশ্যই বজায় রাখতে হবে এবং জঞ্জাল যেন সৃষ্টি না হয়। এলিভেটেড মানেই ওপর দিয়ে দূরদূরান্তের গাড়ি যাবে। সব রাস্তায় সেটাকে কেন নামাতে হবে?
এরপর চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৩৫টা র‌্যাম্পের দাবি ছিল। আমরা কমিয়েছি। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। শতবর্ষী গাছ কাটা হবে না। ছোট কিছু গাছ কাটা হবে। প্রয়োজনে র‌্যাম্পের সাইজ আরো ছোট করতে বলেছি। চউকের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, শতবর্ষী গাছ কাটা যাবে না। শুধু একটি শতবর্ষী গাছের ডাল কাটা যাবে। র‌্যাম্প যদি এখানে তুলতে চাই ডিজাইন আরেকটু মডিফাই করব। সবার মতামতের ভিত্তিতে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। সেখানে র‌্যাম্প দরকার না হলে, করব না। চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, র‌্যাম্পের বিষয়টি জনঘনত্ব অনুসারে ঠিক করা হয়। প্রতি বছর গাড়ি বাড়ছে। ৫০-১০০ বছর পরে গাড়ি যে বাড়বে তার উপর ডিজাইন। এলাকার গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রস্তাব করা হয়। চট্টগ্রাম শহরে পরিবেশ বিধ্বংসী কিছু করব না। গাছ কেটে আমরা কোনো র‌্যাম্প করব না।
এ সময় আন্দোলনকারীরা টাইগারপাস-সিআরবি অংশে র‌্যাম্পটি বাতিলের দাবি জানাতে থাকেন। নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ইব্রাহিম হোসেন বাবুল বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের সেন্টিমেন্টের বাইরে তারা (চউক) কিছু করবেন না। আমরা বিশেষজ্ঞদের নাম দিব। সবাই মিলে যেটা ঠিক করব, সেভাবে হবে। কবি-সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, চট্টগ্রামের জনগণ এটা চায় না। এখানে র‌্যাম্প করবেন না। এখানে টোল দিয়ে উঠতে হবে। সাধারণ মানুষ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে না। এখানে কোনো র‌্যাম্প করবেন না।
সবশেষে চউক চেয়ারম্যানের উদ্দেশে ড. অনুপম সেন বলেন, ঢাকা বা কোলকাতায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এত র‌্যাম্প নেই। এটা ধনী লোকের জন্য। নিচের রাস্তা যদি বারবার খোড়েন সেটাও ছোট হয়ে যায়। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে এই দ্বিতল সড়ক দেখেছি। চমৎকার সুন্দর সেই অংশটি যেন কোনভাবে নষ্ট না হয়। দ্বিতল রাস্তা কোনভাবে নষ্ট করা যাবে না এবং গাছও কাটা যাবে না। এখানে র‌্যাম্প করা যাবে না।
সবার বক্তব্য শুনে ঈদের পর আন্দোলনকারী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন চউক চেয়ারম্যান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক শফিক আহমেদ চৌধুরী, ডা. মনজুরুল করিম বিপ্লব, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, পিপলস ভয়েস সভাপতি শরীফ চৌহান, প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ, ন্যাপ নেতা মিটুল দাশগুপ্ত, সাংস্কৃতিক সংগঠক প্রণব চৌধুরী, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, রাজনীতিবিদ হাসান মারুফ রুফি, আন্দোলনকারী রিতু পারভি প্রমুখ।

এদিকে আন্দোলনের মুখে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাম্পের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চউকের বোর্ড সদস্য, প্রকল্প পরিচালক ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এ সময় প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শতবর্ষী গাছ রক্ষা করে র‌্যাম্পের নকশা করা হয়। ঈদের পরে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করার কথা ছিল। এই র‌্যাম্প নির্মাণ করতে বড় কোনো গাছ কাটা পড়বে না। ছোট ছোট ৪৪টি গাছ কাটা পড়বে। দ্বিতল সড়কে কাজ করা হবে না। নিচের রাস্তা থেকে র‌্যাম্পটি তোলা হবে। নাগরিক সমাজের আপত্তির বিষয়টি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে কাজ করা হবে, না হলে অন্যভাবে করা হবে। চউকের বোর্ড মেম্বার ও নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান বলেন, টাইগারপাসের এই দ্বিতল সড়ক এশিয়ার অন্যতম সুন্দর রাস্তা। ৪৪টি গাছের গুরুত্বপূর্ণ আবেদন আছে। র‌্যাম্পের প্রস্থ কমিয়ে সমাধান করা হলেও ৪৪টি গাছ থাকবে না। ফলে সেই আবেদন নষ্ট হবেই। তবে র‌্যাম্প না হলে পলোগ্রাউন্ড টাইগারপাসের কানেকটিভিটি হচ্ছে না। বিকল্প কোনো পথ বের করা যায় কিনা, তা চউককে অনুরোধ করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়