ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : পুরো জেলার গ্রামগুলোর দিগন্ত জোড়া মাঠে দেখা মেলে সাদা রংয়ের ফুলের সঙ্গে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত। এসব ক্ষেত থেকে শুধু কৃষকেরাই লাভবান হননি, পাশাপাশি স্থানীয় বহু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে ‘কালো সোনা’ নামে পরিচিত পেঁয়াজ বীজ চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। গত কয়েক বছরে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার বীজ চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে চাষিদের মধ্যে। উৎপাদিত এসব বীজের বাজার মূল্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এসব বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সাধারণত নভেম্বর মাস বীজতলায় বা জমিতে পেঁয়াজ বীজ বপনের সময়। বীজ পরিপক্ক হতে সময় লাগে ১৩০ দিন। পরাগায়ন না হলে পেঁয়াজ ফুলে পরিপক্কতা আসে না। আর এসব ফুলে পরাগায়নের প্রধান মাধ্যম হলো মৌমাছি। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষক খেতে কীটনাশক ছিটান। কিন্তু সেই কীটনাশকে মারা পড়ছে উপকারী পোকা ও মৌমাছি। এ কারণে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে দিন দিন মৌমাছির আনাগোনা কমে যাচ্ছে। তাই ঝাড়– ও হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়নের চেষ্টা করেন চাষিরা।
এ ব্যাপারে পেঁয়াজের বীজ চাষি রফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছর ১ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছি। তাই এবার ২ একর জমিতে বীজ চাষ করেছি। আমার পেঁয়াজের বীজ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার এসে নিয়ে যায়। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ভীষণ উপযোগী। প্রতিদিন আমার ক্ষেতে প্রায় ৮-১০ জন লোক কাজ করে গাছে পরাগায়ন ঘটায়। তাদের গড়ে ৫০০ টাকা হাজিরা দিতে হয়। এবার সব খরচ বাদ দিয়ে ২ একর জমিতে আমরা ৫-৬ লাখ টাকা লাভ হবে।
আরেক পেঁয়াজের বীজ চাষি গফুর রহমান বলেন, গতবার যারা বীজ চাষ করছেন তাদের প্রায় দ্বিগুণ লাভ হয়েছে। তাই আমিও এবার ১ একর জমিতে বীজ চাষ করছি। আশা করি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারো অনেক লাভবান হবো। কৃষি অফিসার মাঠে এসে আমাদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়।
পেঁয়াজ ক্ষেতে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন স্থানীয় যুবক ও নারীরা। সকাল থেকইে কেউ বীজ ক্ষেতের পরিচর্যা, কেউ সেচ, কেউ আবার পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে ও কেউ হাতের আলতো ছোঁয়ায় পরাগায়ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিক আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা ৭-৮ জন প্রতিদিন কাজ করি। ছেলেদের বেতন ৫০০ টাকা আর নারীদের বেতন ৪০০ টাকা করে। আমরা গাছে পরাগায়ন করি। বীজ তলায় পানি দেই। কীটনাশক স্প্রে করি। এতে আমাদের কর্মস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আলমগীর কবির ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। কীভাবে পরাগায়ন করতে হবে, কী কিটনাশক স্প্রে করতে হবে সে ব্যাপারে কথা বলি। চলতি মৌসুমে জেলায় ১১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৩ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।