নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে ইফতার মেয়র আতিকের

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

অস্কারে ওপেনহাইমারের জয়ধ্বনি : কী আছে এ সিনেমায়

প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

Now I am become Death,
the destroyer of worlds!
বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর একজন উদ্ধৃত করেছিলেন এই বাক্যটি। নিউক্লিয়ার উইপেন কিংবা পারমাণবিক বোমার জনক হিসেবে ইতিহাস যাকে স্বীকৃতি দেয় তার নাম জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহাইমার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ম্যানহাটন প্রকল্পের লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির পরিচালক ছিলেন এ মার্কিন ইহুদি নাগরিক। নিজ কাজ কিংবা গবেষণায় আত্মমগ্ন থাকার অভিপ্রায়ে ১৯২০-এর দশকে ওপেনহাইমার নিজেকে বৈশ্বিক বিষয়াবলি থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন, এমনকি সে সময় সংবাদপত্র পাঠ করা কিংবা রেডিও শুনতেন না তিনি। সেই মানুষটিই জার্মানিতে অ্যাডলফ হিটলারের উত্থানের পরপরই রাজনীতিতে আগ্রহী হন এবং পথপরিক্রমায় ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠনসহ কমিউনিজম দর্শনে প্রবেশ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন গুজব রটে যায় হিটলার জার্মানিতে পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছেন, তখনই আগস্ট ১৯৪২ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্রিটিশ এবং মার্কিন পদার্থবিদদের নিয়ে তারাও পারমাণবিক বোমা বানানোর জন্য এক প্রকল্প চালায়, যা পরবর্তীকালে ম্যানহাটন প্রকল্প নামে পরিচিত। এই তুখোড় বিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের জীবন এবং ম্যানহাটন প্রকল্পের ওপর কেন্দ্র করে পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান নির্মাণ করলেন অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ‘ওপেনহাইমার’। এবারের অস্কারের আসরের সেরা ছবি, পরিচালক, অভিনেতা, পার্শ্ব অভিনেতা, সংগীত, চিত্রগ্রহণ এবং সম্পাদনার সাতটি পুরস্কার নিজেদের করে নেয় সিনেমাটি।
সমগ্র চলচ্চিত্রটিই ওপেনহাইমারের প্রোজেক্ট ম্যানহাটনের ফ্ল্যাশব্যাক এবং রাশিয়ান কমিউনিস্টের সঙ্গে তার যোগ থাকার অভিযোগের প্রসিকিউশনের ওপর চলতে থাকে। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণহত্যার কারণ যে ওপেনহাইমার ও তার বিজ্ঞানী দলের আবিষ্কৃত অ্যাটম বোমা তা আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না। তাইতো খ্যাপাটে ও তুখোড় মেধাবী ওপেনহাইমার তাই আবিষ্কারের প্রথমে তৃপ্ততার ঢোক গিললেও শেষটায় অনুশোচনায় মুষড়ে পড়েছিলেন। চলচ্চিত্রটিকে ওপেনহাইমারেরে বায়োপিক বলা হলেও এটি সাধারণ বায়োপিক ঘরানার মতো একেবারেই নয়। নির্মাতা ছবিটি নির্মাণ করেছেন ওপেনহাইমারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। পুরো পৃথিবী পারমাণবিক বোমার আবিষ্কার কিংবা হিরোশিমা, নাগাসাকির বিস্ফোরণ কীভাবে দেখে চলচ্চিত্রটি মোটেও সে রকম দৃষ্টিভঙ্গির নয়। ছবিতে উঠে এসেছে এই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে গিয়ে বিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েন, রাজনীতি পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে নানা টানাপড়েনের গল্প।
ছবিতে ওপেনহাইমারের ভূমিকা দারুণভাবে নিভিয়েছেন আইরিশ অভিনেতা কিলিয়ান মার্ফি, যিনি পরিচালক নোলানের ইনসেপশন (২০১০) ও ডানকার্ক (২০১৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেন, সবচেয়ে আলোচনায় আসেন বিবিসির নাট্যধর্মী ধারাবাহিক পিকি ব্লাইন্ডার্স (২০১৩-২০২২) দিয়ে। দুর্দান্ত ছিলেন আমেরিকার সরকারি কর্মকর্তা লুইস স্ট্রসের ভূমিকায় রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, ইউএস জেনারেল লেসলি গ্রোভসের ভূমিকায় ম্যাট ডেমনসহ আরো অনেকে। শুধু তাই নয়, ছবিতে ছিল আলবার্ট আইনস্টাইন, নিলস বোর, এডওয়ার্ড টেলার, আর্নেস্ট লরেন্স, আইজাক রাবি, হান্স বেটে, রিচার্ড ফাইনম্যানের মতো ঐতিহাসিক বিজ্ঞানী চরিত্রগুলোও। যারা বিজ্ঞানকে ভালোবাসেন তাদের জন্য ছবিটি নিঃসন্দেহে অন্যরকম আনন্দের উপলক্ষ হবে। ছবিতে দেখানো ওপেনহাইমারের সঙ্গে নীলস বোরের প্রথম সাক্ষাৎ, ফাইনম্যানের পাশাপাশি ওপেনহাইমারকে হাঁটতে দেখা, বড়পর্দায় আইনস্টানকে দেখতে পারার মতো দুর্দান্ত সব ঐতিহাসিক মুহূর্ত আছে ছবিটিতে। শুধু তাই নয়, নন লিনিয়ার স্টোরিটেলিং, দুর্দান্ত চিত্রগ্রহণ, টান টান থ্রিলার দর্শককে আটকে রাখবে তিন ঘণ্টাজুড়ে। বড়পর্দায় সাদাকালো এবং রঙিন আবহে দুটি আলাদা সময়কে প্যারালালি নিয়ে আসতে পারার চমক একমাত্র ক্রিস্টোফার নোলানের পক্ষেই সম্ভব। অনেকে বলে থাকেন, ক্রিস্টোফার নোলানের চলচ্চিত্র মাথার ওপর দিয়ে যার, তার সিনেমা দুই-তিনবার না দেখলে বোঝার উপায় নেই! এই ব্যাকরণে অবশ্য ‘ওপেনহাইমার’কে ফেলা যায় না। বিশ্ব রাজনীতির এই জটিল থেকে জটিলতর বিষয়কে এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সহজে দেখতে শিখিয়েছেন পরিচালক মহাশয়। এছাড়া লুডভিগ গোরানসনের সংগীত চলচ্চিত্রটির অন্যতম শক্তিশালী একটি দিক, সিনেমার মূল থিমটি বেশ কয়েকটি দৃশ্যে প্রভাব ছড়িয়েছে। আর রিচার্ড কিংয়ের সাউন্ড ডিজাইনও বিশেষভাবে আলোচনার দাবি রাখে। ওপেনহাইমার দর্শন শেষে দর্শকের মন এক ধরনের ধাঁধায় আক্রান্ত হবে, মনে কেবল ঘুরপাক খাবে অসংখ্যা প্রশ্ন আর বিভ্রান্তির। যারা ছবিটা দেখেছেন তাদের মধ্যে ছবির চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘কে ঠিক, কে বেঠিক’ এই উত্তর খোঁজার দোলাচল কি এখনো কেটেছে! বোধ করি কাটেনি এখনো।

: মুহাম্মাদ আলতামিশ নাবিল

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়