খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা উধাও

পরের সংবাদ

আমাদের সাহিত্যনির্ভর মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পৌঁছে দিতে শিল্প, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধকে গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প নেই। সাহিত্যে এবং চলচ্চিত্রে আমাদের অনেক গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ এসেছে বারবার। কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, লেখক, চলচ্চিত্রকাররা মুক্তিযুদ্ধকে উপন্যাস, গল্প, কবিতার বইয়ের পাতায় এবং সেলুলয়েডে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রত্যেকেই সৃজনশীলতার শ্রেষ্ঠ প্রকাশের ব্যাপারে অধিকতর মনোযোগও দিয়েছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে সাহিত্যনির্ভর মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের সংখ্যা কম নয়। দেশের প্রখ্যাত লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি সাহিত্যিকদের রচনানির্ভর চলচ্চিত্রগুলো বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে আলোচনার ঝড় তুলেছে। প্রশংসিত হয়েছে। দর্শকেরও মন জয় করে নিয়েছে। শিল্পের অন্যতম একটি মাধ্যম চলচ্চিত্র। বলা হয় চলচ্চিত্র মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি। আবার চলচ্চিত্র সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ধারকও বটে। সময়ে সময়ে চলচ্চিত্রের বয়ানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বাংলাদেশের সুস্থধারার চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশজুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রগুলোর অনেকগুলোয় যেমন সরাসরি যুদ্ধের ভয়াবহতা উঠে এসেছে, তেমনি আবার কিছু চলচ্চিত্রে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধকে উপস্থাপন না করে পরোক্ষভাবে এর ভয়াবহতাকে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এ কথা সত্য, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যত চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে, তা আমাদের ইতিহাসের সম্পদ হয়ে থাকবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ঘটনাবলি এবং এ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে যে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে তাই মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ তিন ভাবে এসেছে। প্রথমত, সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ, দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধোত্তর পরিবেশের ঘটনাবলি এবং তৃতীয়ত, ভিন্ন কোন প্রেক্ষাপটে রচিত কাহিনিচিত্রে ফ্ল্যাশব্যাক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রগুলোর কিছু তৈরি হয়েছে সরাসরি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিকে তুলে ধরে। বাকিগুলো মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধকালীন নির্যাতিত মানুষ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যেসব চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে তার কিছু তৈরি হয়েছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই। বাংলার সাহসী তরুণ যুবারা যখন দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্নে হাতে তুলে নিয়েছিল রাইফেল, তখনই দেশের এই দুর্দশা ও সংগ্রামকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেয়ার ইচ্ছায় কিছু তরুণ শক্ত হাতে ধরেছিলেন ক্যামেরা, জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধকালীন বিভিন্ন দৃশ্য সেই ক্যামেরায় ধারণ করে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, স্বাধীন একটি দেশের পক্ষে জনমত তৈরি করতে। পৃথিবীর বড় বড় সব যুদ্ধ, বিপ্লব ও মুক্তিসংগ্রাম অবলম্বন করে নির্মিত হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র। তার অনেকটা সফল, কিছুটা সমালোচিত। সেই ধারাবাহিকতা কিংবা ছোঁয়া যা-ই বলি না কেন, সেটা আমাদের অর্থাৎ ঢাকাই চলচ্চিত্র শিল্পেও লেগেছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে পাক হানাদারবাহিনীর কাছ থেকে। এই নয় মাসের সংগ্রামের চিত্র কখনো যুদ্ধাকারে, কখনো গ্রামীণ পরিবেশে ওই সময়কার মানুষের জীবনযাপনের মাধ্যমে, আবার কখনো মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেয়া যোদ্ধাদের পথচলার গল্প সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দি করেছেন অনেকে।
মূলত যুদ্ধ শুরুর আগেই আমাদের চলচ্চিত্রে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সেটা হয় ১৯৭০ সালে। এ সময় আমাদের প্রকৃত মুক্তির আকাক্সক্ষা আর সংগ্রামকে যে চলচ্চিত্রটি মূর্ত করে তোলে তার নাম ‘জীবন থেকে নেয়া’। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র না হলেও মুক্তির আকাক্সক্ষা যে পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে প্রবল ছিল এবং সেই বিস্ফোরণ যে কোনো সময় ঘটতে পারে সেটা আমজাদ হোসেনের লেখনীর মাধ্যমে জহির রায়হান সেলুলয়েডের পর্দায় অত্যন্ত সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন। বলা যায়, এটি এ নির্মাতার জীবনঘনিষ্ঠতায়, মহাকাব্যিক গভীরতায় সর্বোপরি বিষয়ের মহত্বে এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। জহির রায়হান তার ‘আর কতদিন’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি শুরু করেন যুদ্ধবিরোধী মানবতাবাদী চলচ্চিত্র ‘লেট দেয়ার বি লাইট’। কিন্তু এটি আলোর মুখ দেখেনি।
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়ে আসছে। এ দেশের সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রগুলো। এ চলচ্চিত্রগুলোর অনেকগুলোতে যেমন সরাসরি যুদ্ধের ভয়াবহতা উঠে এসেছে। সেইসঙ্গে কিছু চলচ্চিত্রে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধকে উপস্থাপন না করে পরোক্ষভাবে এর ভয়াবহতাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপস্থাপন করা হয়েছে যুদ্ধের স্বীকার হওয়া শরণার্থী বা পালিয়ে বেড়ানো মানুষের জীবনাবেগকে। এছাড়াও কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে যুদ্ধ পূর্বকালীন ও যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে এর প্রভাব ও রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতা নিয়ে। আমরা এখানে সাহিত্য আশ্রয়ী বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের কথা আলোচনা করবো। প্রখ্যাত লেখক সেলিনা হোসেন রচিত মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ অবলম্বনে ১৯৯৭ সালে একই নামে হাঙ্গর নদী গ্রেনেড ছবিটি নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম। একজন সন্তানহারা মায়ের গল্প নিয়েই ছবির গল্প। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চিত্রনায়িকা সুচরিতা। ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘একাত্তরের যীশু’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র। লেখক শাহরিয়ার কবির-এর লেখা ‘একাত্তরের যীশু’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ। ছবির প্রধান প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ুন ফরীদি, জহির উদ্দিন পিয়ার, আবুল খায়েরসহ আরও অনেকে। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। এটি তার নিজের লেখা আগুনের পরশমনি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন এবং এটিই তার পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর সহ আরো অনেকে। বাংলাদেশ সরকারের অনুদানের নির্মিত আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম ২০০৬ সালে ‘খেলাঘর’ ছবিটি নির্মাণ করেন। এটি মূলত মাহমুদুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনির ‘খেলাঘর’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। চিরন্তন প্রেমের এই ছবিতে অভিনয় করেছেন রিয়াজ, সোহানা সাবা, আরমান পারভেজ মুরাদ, গাজী রাকায়েত, আবুল হায়াত। বিশিষ্ট কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস অবলম্বনে ২০০৪ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিটি নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ভিত্তিক এই ছবিতে অভিনেতা রিয়াজ দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা। ২০১১ সালে মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত একই নামের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র আমার বন্ধু রাশেদ পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম।
১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পে। অভিনেতা তৌকীর আহমেদ পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘জয়যাত্রা’ মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। বিখ্যাত কাহিনিকার ও নির্মাতা প্রয়াত আমজাদ হোসেনের গল্পে এটি নির্মিত। ‘জয়যাত্রা’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন একদল মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। যৌথভাবে চিত্রনাট্য রচনা করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও এবাদুর রহমান। ‘গেরিলা’ ছবিটিতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। চলচ্চিত্রটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অংশগ্রহণ করে এবং ২০১১ সালের ১৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেটপ্যাক বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। ‘৭১ এর মা জননী’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন শাহ আলম কিরণ। ছবিটি লেখক আনিসুল হক রচিত উপন্যাস ‘জননী সাহসিনী ৭১’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরাঙ্গনাদের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। এতে বীরাঙ্গনা জননীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নিপুণ। নির্মলেন্দু গুণ রচিত নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ কবিতা অবলম্বনে মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য লিখেছেন মাসুদ পথিক নিজেই। বাংলাদেশ সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটিতে নেকাব্বর চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুয়েল জহুর এবং ফাতেমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিমলা। এছাড়া আরো অভিনয় করেছেন প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণসহ আরো ১৫ জন কবি। চলচ্চিত্রটিতে কাহিনিচিত্রের পাশাপাশি তথ্যচিত্রের আবহকে ধারণ করার চেষ্টা করে, প্রেম, প্রকৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের গাথা সূত্রে তথ্যের ইমেজ ধরে আবহমান বাংলার নিবিড় সংস্কৃতি, জীবনের অন্তর্গত দর্শন, তথা জীবনবোধকে তুলে ধরা হয়েছে। চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ এর চিত্রকর্ম ‘নারী’ এবং কবি কামাল চৌধুরীর ‘যুদ্ধশিশু’ কবিতা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’ চলচ্চিত্রটি। কাহিনি, চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক মাসুদ পথিক। ২০১৯ সালে মুক্তি পয় চলচ্চিত্রটি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান পায় ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’। এই চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের একজন সংগ্রামী বীরাঙ্গনার গল্প চিত্রিত হয়েছে। নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণের পর এটা মাসুদ পথিকের দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের নিয়ে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি ১৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়। এটি ৪৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সর্বাধিক ৮টি বিভাগে পুরস্কৃত হয়। হুমায়ূন আহমেদ রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘অনিল বাগচীর একদিন’ পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর অনিশ্চয়তা, মানবিকতা, স্বপ্ন, সম্প্রীতি প্রভৃতি অনুষঙ্গকে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলা এই শক্তিশালী উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম নির্মাণ করেছেন ‘অনিল বাগচীর একদিন’। এর আগে তিনি খেলাঘর এবং আমার বন্ধু রাশেদ নামে দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। আহমদ ছফার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় রচিত এবং একই নামে প্রকাশিত ‘অলাতচক্র’ উপন্যাস অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্য ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্র ‘অলাতচক্র’ নির্মিত হয়েছে। চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেছেন হাবিবুর রহমান। ‘অলাতচক্র’ চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত বাংলাদেশি লেখক আহমেদ ও ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রগতিশীল নারী তায়েবার মধ্যকার অস্ফুট ভালোবাসা, মানসিক টানাপড়েনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক চিত্রায়িত হয়েছে। মূল উপন্যাসের দুই প্রধান চরিত্র- দানিয়াল ও তায়েবা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল এবং জয়া আহসান। অলাতচক্রের দৃশ্য ত্রিমাত্রিক ক্যামেরায় ধারণকৃত। এটি একই সঙ্গে বাংলাদেশে এবং বাংলা ভাষায় নির্মিত প্রথম ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্র।
আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ নানা ব্যঞ্জনা নিয়ে যেভাবে এসেছে আমাদের চলচ্চিত্রে ঠিক সেভাবে আসেনি এখন পর্যন্ত। আমাদের সাহিত্যিকদের অনেক কালজয়ী উপন্যাস, গল্প নিয়ে এখনো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। সেগুলো অবলম্বনে নির্মিত হতে পারে বিশ্বসেরা চলচ্চিত্র। আমাদের এখানে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে সাহিত্যআশ্রয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। যারা এতদিন মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে ছবি তৈরি করেছেন তারা নিজেদের মতো লেখা কাহিনির চলচ্চিত্ররূপ দিয়ে এসেছেন। সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র করতে গেলে নানা দায়বদ্ধতা থাকে, সাহিত্যে অনুগত থাকার এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকে। আবার সাহিত্যকে ঠিকঠাক মতো ধারণ করার সক্ষমতা, দক্ষতা ও মেধা থাকার ব্যাপারটিও রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় আমাদের এখানে যথেষ্ট সংখ্যক সাহিত্যনির্ভর মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র এখনো হয়নি। শওকত ওসমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আমজাদ হোসেন, সেলিনা হোসেন, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন, শাহরিয়ার কবির, মইনুল আহসান সাবের, শওকত আলী, মাহমুদুল হক, মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখের লেখা অনেক উপন্যাস গল্প এখনো চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়নি। আগামি দিনগুলোতে হয়তো আমরা তেমন সাহিত্যনির্ভর মুক্তিযুদ্ধের সেরা সব চলচ্চিত্র দেখতে পাবো, তেমন প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়