মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী : অর্ধেকের বেশি নারীরই হয় বাল্যবিয়ে

আগের সংবাদ

একগুচ্ছ নির্দেশনা নিয়ে ফিরলেন ডিসিরা : হয়রানিমুক্ত মাঠ প্রশাসনের বার্তা

পরের সংবাদ

চুপ থাকার উপায় কী?

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাঠের মাঝখানে গোল হয়ে একদল ছেলেমেয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখ বন্ধ।
তারা ‘চুপ থাকা গেম’ খেলছে।
হঠাৎ সাফোয়ান নীরবতা ভেঙে বলে উঠল, ‘কেউ কিন্তু কথা বলো না!’
নভো বলল, ‘আরে তুমিই তো কথা বলছ?’
সাফোয়ান বলল, ‘আমি কথা বলছি না। কথা বলতে নিষেধ করছি।’
নভো বলল, ‘এটাই তো কথা।’
আলামিন ধমকের সুরে বলল, ‘অ্যাই চুপ করো।’
আরাফ বলল, ‘ভাইয়া, তুমি এত জোরে কথা বলছ কেন? জোরে কথা বললে ভয় লাগে।’
আলামিন বলল, ‘স্যারি। আমার ভুল হয়ে গেছে।’
সবাই চুপ করল।
একটু পরে মুন্তাহা বলল, ‘উফ! কানের কাছে একটা মাছি ভনভন করছে।’
রাকিন বলল, ‘মারো। জোরে থাপ্পড় মারো।’
মুন্তাহা বলল, ‘জোরে থাপ্পড় মারলে ব্যথা পাব তো!’
রাকিন বলল, ‘তাহলে আস্তে মারো।’
মুন্তাহা বলল, ‘না, আর থাপ্পড় মারতে হবে না। মাছিটি চলে গেছে।’
আলামিন বলল, ‘গুড। কথা বন্ধ।’
মুন্তাহা বলল, ‘ওকে।’
সাফোয়ান বলল, ‘আরে! মাছিটা তো আমার কাছে চলে এসেছে। ভনভন করছে। তোমরা কি শুনতে পাচ্ছ?’
রাকিন বলল, ‘হ্যাঁ, খুব পাচ্ছি। ভন্ভন্ ভন্ভন্। শন্শন্ শন্শন্। তন্তন্ ঘন্ঘন্।’
রাকিনের কথা শুনে সবাই হেসে ফেলল।
সাফোয়ান বলল, ‘বুদ্ধি দাও তো রাকিন, কী করে মশাটাকে তাড়াই?’
রাকিন বলল, ‘আরে বুদ্ধি তো দিলামই। জোরে থাপ্পড় মারো।’
সাফোয়ান থাপ্পড় মারল।
কিন্তু থাপ্পড়টি মাছির গায়ে লাগল না। লাগল ওর নিজের গালে।
নিজের হাতের থাপ্পড় খেয়ে সাফোয়ান বেশ ব্যথা পেল। বলল, ‘ও মা গো! আর একটু হলে আমার দাঁত পড়ে যেত।’
সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
নভো বলল, ‘থাপ্পড়ে কি কখনো দাঁত পড়ে সাফোয়ান?’
রাকিন বলল, ‘সাফোয়ানের দাঁত নরম তো তাই নড়েচড়ে। নড়বড় করে।’
মুন্তাহা বলল, ‘সেদিন না সুতা দিয়ে বেঁধে তোমার দাদু তোমার দাঁত ফেলে দিল সাফোয়ান?’
সাফোয়ান বলল, ‘ফেলেছে তো একটা। আরো দুই তিনটা নড়ে। ওগুলোও ফেলতে হবে।’
মুন্তাহা বলল, ‘ও আচ্ছা! কিন্তু তোমার দাঁত কি ইঁদুরের গর্তে দিয়েছ?’
‘সাফোয়ান বলল, ‘ইঁদুরের গর্তে দেয়ার জন্য বালিশের নিচে রেখেছিলাম। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি দাঁত নেই।’
মুন্তাহা বলল, ‘ওমা বলো কি! বাসায় কি ভূত এসেছিল?’
‘সাফোয়ান বলল, ‘আরে না। আমরা কষ্ট করে ইঁদুরের গর্ত খুঁজতে যাব, তাই ইঁঁদুর নিজেই এসে আমার দাঁত নিয়ে গেছে।’
মুন্তাহা বলল, ‘ও তাই বলো! তাহলে তো তোমার দাঁত ইঁদুরের দাঁতের মতো হবে।’
রুবাই রেগে বলল, ‘হ্যাঁ, তোমাকে বলেছে! সাফোয়ানের দাঁত হবে হাতির দাঁতের মতো। মোটা মোটা। লম্বা লম্বা। বাঁকা বাঁকা।’
আলামিন বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ওরে! এত কথা বললে কিন্তু খেলা বন্ধ করে দেব।’
রাকিন বলল, ‘দাও। দাও। এই খেলা আর ভালো লাগছে না। তারচে’ চল আমরা অ্যাডভেঞ্চারে যাই।’
আলামিন বলল, ‘না রাকিন, খেলা শেষ না করে অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়া যাবে না।’
নভো বলল, ‘তুমি ঠিক বলেছ আলামিন। ইউ আর কারেক্ট।’
আলামিন বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ নভো। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।’

নভো বলল, ‘উয়েলকাম।’
আলামিন বলল, ‘এখন থেকে আমরা সবাই দুই মিনিট চুপ থাকব। কেউ কোনো কথা বলব না।’
নভো বলল, ‘ঠিক আছে। কিন্তু তুমি অ্যাকশন দাও।’
আলামিন বলল, ‘ওকে দিচ্ছি। ফাইভ ফোর থ্রি টু ওয়ান জিরো অ্যাকশন।’
আবার খেলা শুরু হলো।
তখন মাঠের ওপর দিয়ে একঝাঁক বালিহাঁস টিউটিউ শব্দ করতে করতে উড়ে যাচ্ছিল।
সাফোয়ান বলে উঠল, ‘দ্যাখো দ্যাখো, কত্তগুলো পাখি উড়ে যাচ্ছে!’
আলামিন বলল, ‘যেতে দাও।’
সাফোয়ান বলল, ‘পাখিরাও কিন্তু কথা বলছে।’
আলামিন বলল, ‘কথা নয়। ওটা হলো পাখির ডাক।’
রাকিন বলল, ‘কিচিরমিচির। কিচিরমিচির।’
সাফোয়ান বলল, ‘আরে তুমি কিচ্ছু জানো না। আমার কাছে শোন। একটা পাখি আর একটা পাখিকে বলছে- টিউটিউ। মানে হলো- তোমার কী অবস্থা? অন্য পাখিটা বলছে, কিউপিউ। মানে- এই তো ভালোই।’
রুবাই বলল, ‘সাফোয়ান! তুমি যদি পাখির মতো এত কথা বলো আমি কিন্তু বাসায় চলে যাব।’
সাফোয়ান বলল, ‘ঠিক আছে। এই যে মুখে সুপার গøু দিলাম। আর কথা বলব না।’
সাফোয়ানের কথা শুনে মাঠে আবার হাসির রোল পড়ল।
কেউ বলল, মুখে সুপার গøু দিলে দুই ঠোঁট জোড়া লেগে যাবে। কেউ বলল, দারুণ মজা হবে। কেউ বলল, সাফোয়ানকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
হট্টগোল চলল প্রায় এক মিনিট।
শেষে আলামিনের ধমকে সবাই চুপ করল এবং আবার খেলা শুরু হলো।
এমন সময় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এলো পূর্ণ।
ওর বাম পায়ে ব্যান্ডেজ করা। গতকাল খেলতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।
সবাইকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পূর্ণ বলল, ‘আরে! তোমরা এভাবে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কী করছ?’
কেউ পূর্ণর কথার উত্তর দিল না।
পূর্ণ আবার বলল, ‘তোমরা আমার সঙ্গে কথা বলছ না কেন? কী করছ তোমরা?’
আলামিন বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ঘোড়ার ডিম করছি।’
আলামিনের কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে লাগল।
কিন্তু পূর্ণ কেঁদে ফেলল। বলল, ‘আমি কী দোষ করেছি? আমার সঙ্গে এত বাজেভাবে কথা বলছ কেন আলামিন ভাইয়া?’
আলামিন নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলল, ‘স্যারি পূর্ণ। আমরা চুপ থাকা গেম খেলছি। তুমি যদি খেলতে চাও তাহলে সার্কেলে দাঁড়াও।’
পূর্ণ খুশি হয়ে বলল, ‘ও তাই! আমি খেলব।’
আলামিন বলল, ‘তাহলে নভোর পাশে দাঁড়াও।’
পূর্ণ সার্কেলে দাঁড়াল।
আবার চুপ থাকা শুরু হলো।
ঠিক সেই সময় একটি বিড়াল ডেকে উঠল- ‘মিঞাউ।’
সাফোয়ান চমকে উঠে বলল, ‘ও মাই গড! খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। অ্যাই বিড়াল চুপ কর।’
ব্যাপার হলো- নভোকে বাসায় না পেয়ে ওর বিড়ালটা মাঠে চলে এসেছে। ওর পায়ের কাছে এসে মিঞাউ মিঞাউ করে ডাকছে।
নভো সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালটাকে কোলে তুলে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘আমরা চুপ থাকা গেম খেলছি ডাংকু। প্লিজ তুমিও চুপ থাক।’
সঙ্গে সঙ্গে ডাংকুর চুপ মেরে গেল।
এই দেখে আলামিন অবাক হয়ে বলল, ‘বাহ! নভোর বিড়াল তো ভালোই বোঝে।’
বিড়ালটা তখনই ডেকে উঠল, ‘মিঞাউ!’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়