মির্জাপুরে ডাকাতের হামলায় ট্রাকচালক নিহত

আগের সংবাদ

রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি : ত্রিশ হাজার টাকায় নাগরিকত্ব!

পরের সংবাদ

পুরনো পাফোস

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এবার মঞ্চে আসবেন আমাদের পুরনো ‘পাফোস’ সালমা রুহী। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে আছি মঞ্চের দিকে, পুরনো পাফোস সালমা রুহীকে দেখতে। ‘আঞ্জুম রুহী’ নামে ফেসবুক চালাতে চালাতে নিজের ‘সালমা রুহী’ নামটাই ভুলে গেছি।
সম্বিত ফিরে পেয়ে ছুটে গেলাম মঞ্চের দিকে। গুণীজন গিয়াস আহমেদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা স্মারক নিতে গিয়ে তার মুখে ‘এইটা আপনার প্রাপ্য’ কথাটা শুনে আপ্লুত হয়েছি। মাইক্রোফোন হাতে কিছু বলতে গিয়ে আবেগে গলা কেঁপে উঠল। নিজেকে নিজে ভুলে যাওয়া এই আমাকে, এত বছর পরও মনে রাখা, এত বছর পরও সম্মানে ভূষিত করা!
একটা কাচের টুকরো যখন, সম্মানিত কারো হাত থেকে ‘শুভেচ্ছা স্মারক’ হিসেবে পাওয়া হয়, তখন সেটা হীরের টুকরোর চেয়েও দামি হয়ে যায়। শুভেচ্ছা স্মারক হাতে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ফিরে গেলাম ৩০ বছর আগে ‘পাঠক ফোরাম’ জগতে।
আমাদের লেখালেখির জগৎটা এখনকার অনলাইন যুগের মতো এত মসৃণ ছিল না। এখন তো মোবাইল বা কম্পিউটারে অভ্রতে টাইপ করে কত সহজেই লেখালেখি করা যায়। আমরা সাদা কাগজে লিখতাম, কতবার কাটাছেঁড়া হয়ে, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা নষ্ট করে একটা লেখা তৈরি হতো। তারপর, হলুদ খাম কিনে পোস্ট অফিসের চিঠির বাক্সে ফেলে লেখা ছাপার হওয়ার প্রহর গোনা।
হকার মঙ্গলবার বাসায় ‘ভোরের কাগজ’ দিয়ে গেলে, যার হাতে পাঠক ফোরাম পাতাটা প্রথম পড়ত, সঙ্গে সঙ্গে সে তোশকের নিচে লুকিয়ে ফেলত। আর নিজের লেখা ছাপলে, সেদিন পাঠক ফোরাম হয়ে যেত যক্ষের ধন!
এখন তো ফেসবুকে আমরা সবাই সবাইকে দেখে আর লাইক-কমেন্ট করে পরিচিত। কিন্তু তখন অদেখা পাঠক ফোরাম সদস্যও হয়ে গিয়েছিলাম একজন আরেকজনের খুব পরিচিত। নিজেদের মাঝে চিঠিপত্রও আদান-প্রদান হতো, যা ছিল পেনফ্রেন্ড নামে পরিচিত।
হ্যাঁ, এতক্ষণ বললাম, ভোরের কাগজ পাঠক ফোরামের তিন দশক বর্ষপূর্তি উৎসবের কথা।
অনুজপ্রতিম বোরহান উদ্দিনের কথায়, নভেম্বরের প্রথম দিকে এই উৎসবের রেজিস্ট্রেশন করলাম। বিভিন্ন কারণে নভেম্বরের উৎসবটা পিছিয়ে হলো ফেব্রুয়ারিতে।
হলরুমে ঢুকে, যাকে দেখছি তাকেই খুব পরিচিত লাগছে। মনে হচ্ছে সবাই সবার কত আপনজন, কত পুরনো সম্পর্ক। অথচ এর আগে কারো সঙ্গে আমার দেখা হয়নি, কথা হয়নি। কাজল, নীলা, কলি, পলি, শিপলু, মনোয়ারা, অদ্বিতী আপুসহ এমন অনেকেই একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছি। যেন বাবার বাড়িতে অনেক বছর পর, সব বোন নাইয়র গিয়েছি।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত কেক কেটে, অনুপ্রেরণামূলক বিভিন্ন কথায় অনুষ্ঠান শুরু করলেন। শ্যামল দা’র মুখে অসময়ে চলে যাওয়া সঞ্জীব দা’র স্মৃতিচারণ আমার চোখ ভিজিয়েছে। গুণীজনদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা স্মারক ও পাঠক ফোরামের তিন দশক পূর্তি সংকলন ‘অন্তরবন্ধু’ নেয়াটা ছিল এক অন্যরকম অনুভূতির। অন্তরবন্ধুতে নিজের পরিচিতি দেখে বারবার আবেগে আপ্লুত হয়েছি।
গুণীজনদের হাতে আজীবন সম্মাননা তুলে দেয়া হচ্ছিল আর পুরো অডিটোরিয়াম হাততালিতে মুখর হয়ে উঠছিল। এ যেন সিনিয়র-জুনিয়রের সম্মাননা না, ‘আয় বন্ধু বুকে আয়’ কোনো গানের কলি…!
আমাদের অনেক ‘পাফোস’ বন্ধুর সঙ্গে তাদের নতুন প্রজন্মদের দেখে খুব ভালো লাগছিল। সবার সঙ্গে সবার গল্প, নতুন-পুরনো প্রজন্মের কলকাকলীতে পুরো দিনটা যেন এক প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
এবার আসি অতিথি আপ্যায়নে, আয়োজকরা দূর-দূরান্ত থেকে আসা আমাদের আপ্যায়নেও কোনো ত্রæটি রাখেনি। বিখ্যাত স্টার হোটেলের কাচ্চি বিরিয়ানি দিয়ে হলো মধ্যাহ্নভোজ। সারাদিন আনলিমিটেড চা-কফি। বিকালে গরম গরম চিতই পিঠার সঙ্গে অনেক ধরনের ভর্তা। ডায়াবেটিস, অ-ডায়াবেটিস- সবার হাত জিলেপির রসে টইটম্বুর দেখে মজা পাচ্ছিলাম। যেন বিয়ে বাড়ির পাত্র-পাত্রীর কবুলের পরে মিষ্টিমুখের পর্ব চলছে। তখন বাঙালির ভুঁড়িভোজের সবশেষ আয়োজন, ‘পান’ খাওয়াকে খুব মিস করেছি।
খাওয়া, আড্ডা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র?্যাফেল ড্র- সবকিছুতেই ছিল প্রাণের ছোঁয়া। বিজয়ী বড়-ছোট ‘র?্যাফেল ড্র’তে নাম শুনে, হৈ-হল্লা করে যেভাবে টোকেন নিয়ে দৌড়ে স্টেজের সামনে যাচ্ছিলেন, দেখে মনে হচ্ছিল- কে বলে তিন দশক আগের আমরা বুড়িয়ে গেছি? আমরা চিরসবুজ, বয়স একটা সংখ্যা মাত্র…!
যাদের কথা না বললেই নয়, বোরহান উদ্দিন, মুকুল শাহরিয়ার, সরফরাজ উদ্দিন পারভেজ, দন্ত্যস সফিক ও আরো অনেকেই- যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের এই আয়োজনে আমরা নতুন-পুরনো পাফোস মিলে চমৎকার একটা দিন কাটালাম। তারা উদ্যোগ না নিলে হয়তো সারাদিনের এই মিলনমেলা বসত না। বোরহান উদ্দিনের সাবলীল উপস্থাপনা অনুষ্ঠানকে আরো প্রাণবন্ত করেছে। সরফরাজ অনুষ্ঠানের সবদিক তদারকির পাশাপাশি মানুষ হাসাতে ব্যস্ত ছিল। বিদায়ের সময় বলছিল- আপা, পরেরবার আমার বাসায় উঠবেন। যেন ভাই তার বোনকে দাওয়াত করছে।
সফিক ভাই ও মুকুল শাহরিয়ার ভাইয়ের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো।
সবার প্রতি ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইল। আমরা বেঁচে থাকলে আবারো এমনই একটা মিলনমেলায় বসব, সেদিন এই দিনটির স্মৃতিচারণ করে আবেগে আপ্লুত হব। অনেক ভালোলাগা, ভালোবাসা, আদর, সম্মান ও সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরে এলাম। যার রেশ থাকবে এমন আরেকটা দিনের অপেক্ষায়। জয়তু ভোরের কাগজ, জয়তু পাঠক ফোরাম, জয়তু আয়োজকরা।
সালমা রুহী : আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়