দেয়ালচাপা পড়ে শ্রমিক নিহত

আগের সংবাদ

জাপানযাত্রা ঠেকালেন মন্ত্রী

পরের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ জরুরি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতি নির্মূলে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি থাকলেও যাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই, তারা সরকারের অভ্যন্তরে বা সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে দুর্নীতি দূর হবে না। কারণ তারা দুর্নীতি করেই যাবে। অথবা দুর্নীতি দমনে ভেতর থেকে বাধার সৃষ্টি করবে। আর সেটাই বর্তমানে হচ্ছে। না হলে বাজারে কোনো কিছুর অভাব নেই। অথচ দ্রব্যমূল্য কমছে না। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বাজারে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু তার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। তার মানে সর্ষের ভেতর ভূত রয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, কোনো শ্রমিক দুর্নীতি করে না, কৃষক দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে সাদা কলারওয়ালা কিছু শিক্ষিত লোক। এদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার শত্রæদের হাতে নিহত হওয়ার আগে জুলাই মাসে পৃথক পৃথক সমাবেশে ইঞ্জিনিয়ারদের তিনি বলেছিলেন, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে তোমাদের মা-বাবার টাকা ছাড়াও সরকার তথা জনগণের কত টাকা খরচ হয়েছে এটা মাথায় রেখো। তাদের দাবি আছে তোমাদের কাছে। তাই যে দায়িত্বই পালন কর না কেন, সেটা সঠিকভাবে করবে। ব্রিজ-কালভার্ট বা ভবন নির্মাণ করে ঠিকাদার। সে অধিক লাভের আশায় নির্মাণকাজে অনিয়ম বা দুর্নীতি করতে পারে। সে সঠিকভাবে কাজ করে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব ইঞ্জিনিয়ারের। আর ইঞ্জিনিয়ার যদি টাকা খেয়ে ঠিকাদারকে অনিয়ম করতে দেয়, তাহলে অল্প কিছুদিন পরেই ওই ব্রিজ-কালভার্ট বা ভবন ভেঙে পড়ে প্রাণহানি ঘটাতে পারে। একই কথা তিনি ডাক্তারদেরও বলেছিলেন এবং অনুরূপ উপদেশ দিয়েছিলেন। শিক্ষকদের সমাবেশে বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষায় পাস-ফেল করানো নয়, তাদের মানুষ করতে হবে। তার এই কথাগুলো অনেকেই মানেননি। যে জন্য অকালে প্রাণ দিতে হলো তাকেই। একই ধারা অব্যাহত রয়েছে আজো।
শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলকভাবেই অনুষ্ঠিত হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহতের ডাক এবং অগ্নিসন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবারো ভোট দিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী করল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া দল আওয়ামী লীগকে। নবনির্বাচিত সংসদে আওয়ামী লীগ ২২৪ আসনে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। বিরোধী জাতীয় পার্টি ১১ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতল ৬২টি আসনে। এদের মধ্যে ৪৮ জনই নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে।
ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৬ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়েছে। যার মধ্যে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রীরা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়ে নিজ নিজ দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। এর আগে তারা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির পিতার সমাধিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা সেখানে মন্ত্রিপরিষদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেন এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে মতবিনিময় করেন ও দিকনির্দেশনা দেন।
নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নতুন সরকারের যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দুর্নীতি রোধ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা ইত্যাদি। এর মধ্যে দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বলতে গেলেই আসে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম আর চক্ষু লজ্জার কথা। যাদের এই তিনটার কোনোটা নেই তারাই হয় দুর্নীতিবাজ, তারা পণ্যসামগ্রী গুদামজাত ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। আমাদের দেশে যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানে না, পাকিস্তানিদের ২৫ বছরের শোষণ ও তাদের বৈষম্যমূলক আচরণ সম্পর্কে অজ্ঞ বিশেষ করে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান, তার আত্মত্যাগ, জেল-জুলুম, স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জাতিকে উদ্বুদ্ধ করা সম্পর্কে জানে না তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম আসবে কীভাবে? বর্তমানে যাদের বয়স ৫৫ বছরের কম তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানেও না। আর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানবেইবা কি করে? বঙ্গবন্ধুকে তো স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে হত্যা করল স্বাধীতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা। যাদের মধ্যে ছিলেন জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, লে. কর্নেল ফারুক, লে. কর্নেল রশিদ, মেজর ডালিম, মেজর শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর নূর, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন প্রমুখ।
তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, তিন ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, ভগ্নিপতি মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শিশুসহ তার পরিবারের কতিপয় সদস্য এবং ভাগিনা যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং জেলখানায় জাতীয় চার নেতা যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন সেই সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকেও হত্যা করেছে তারা।
জাতির পিতাকে হত্যার দিনই মুক্তিযুদ্ধের সেøাগান জয়বাংলা হয়ে গেল পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ বেতার হলো রেডিও বাংলাদেশ। রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় বন্ধ হয়ে গেল বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ। এরই মধ্যে এক গভীর রাতে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতা নিয়ে নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতায় এসে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য হ্যাঁ, না ভোটের আয়োজন করলেন যেখানে তিনি একাই প্রার্থী। ওই নির্বাচনে শতকরা ২ ভাগ লোকও ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি যদিও রেডিও, টেলিভিশনে প্রচার করা হলো শতকরা ৯৭ ভাগের অধিক। জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী করলেন শাহ আজিজকে যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গিয়েছিলেন পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতা হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে বক্তব্য রাখতে। তিনি মন্ত্রী করেছিলেন রাজাকার জয়পুরহাটের আলীম ও ফরিদগঞ্জের মাওলানা আবদুল মান্নানকে। যুদ্ধাপরাধ মামলায় যারা গ্রেপ্তার ও যাদের শাস্তি হয়েছিল জিয়াউর রহমান তাদের মুক্ত করে দিলেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লিগসহ যেসব সাম্প্রদায়িক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে তাদেরও এ দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন জিয়াউর রহমান। এখানেই শেষ নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার যাতে করা না যায় সে জন্য খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করেন জিয়াউর রহমান। তাছাড়া খুনিদের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয় তার সময়ে। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের (১৯৭১) ভাষণ প্রচার বন্ধ করা হয়, যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তার এই ডাকে সাড়া দিয়েই তো বাংলার মুক্তিপাগল মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ৯ মাস ধরে যুদ্ধ করে হানাদার পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা ছিনিয়ে আনে। যে যুদ্ধে শহীদ হন ৩০ লাখ বাঙালি, সম্ভ্রম হারান আড়াই লাখ মা-বোন।
যে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে সংবর্ধনা দিয়েছিল, যদিও বাংলাদেশকে তখনো তারা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। বঙ্গবন্ধু খরচের কথা ভেবে সাধারণ হোটেলে থাকতে চাইলেও তারা তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদায় থাকতে দেন লন্ডনের বিলাসবহুল হোটেলে। বঙ্গবন্ধুকে আমন্ত্রণ জানানো হয় লন্ডনের ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বঙ্গবন্ধু যখন সেখানে যান, তখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বাইরে বেরিয়ে এসে নিজে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান এবং বরণ করে ভেতরে নিয়ে যান। এই দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় আমরা দেখেছি এবং বিশ্ববাসীও দেখেছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া ছাড়াও দুনেতা সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্রিটিশ রয়াল এয়ার ফোর্সের একটি বিমান দেয় সে দেশের সরকার। সেই বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৪ সালে সাবেক পশ্চিম জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিট বাংলাদেশের তদানীন্তন রাষ্ট্রদূত পরে বিএনপি নেতা লে. জেনারেল মীর শওকত আলীকে বলেছিলেন, তোমাদের দেশের নেতা শেখ মুজিবের মতো এত বড় দেশপ্রেমিক আর দেখিনি। ১৯৭৪ সালে তোমাদের দেশে যখন দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছিল, তখন শেখ মুজিব আমার কাছে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিল। আমি তাকে বললাম আমার তো খাদ্য ঘাটতির দেশ। আমি খাদ্য দেব কোত্থেকে? আমেরিকা খাদ্যে উদ্বৃৃত্ত দেশ। তাদের কাছে খাদ্য চাও। সে তখন অসহায়ের মতো বলল, আমেরিকা টাকা চায়। আমার তো টাকা নেই। আমাকে কিছু টাকা দাও, না হলে আমার মানুষকে বাঁচাতে পারব না। আমি কিছু টাকা দিলাম, অন্য দেশকেও দিতে বললাম। শুনেছি সেই টাকা দিয়ে আমেরিকার খাদ্য কেনা হয়েছিল। কিন্তু সেই খাদ্য তোমাদের দেশে পৌঁছেছে শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর। এমন নেতাকে তোমরা রক্ষা করতে পারলে না। মনে রাখবা এ জন্য তোমাদের অনেক পস্তাতে হবে।
সদ্য স্বাধীন দেশের নেতা হিসেবে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় বঙ্গবন্ধুকে। জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা করার ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দেবেন বলে জিদ ধরলেন। বললেন, মাতৃভাষা বাংলার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল জনগণকে। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে বাংলায় ভাষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছিল জাতিসংঘ। সেই বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনকি সিনেমায় কোনো সরকারি অফিসের দৃশ্যে বঙ্গবন্ধুর বাঁধাই করা ছবি থেকে থাকলে সেই সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের সময় ছবির স্থান কালো করে দেখানো হতো যাতে বোঝা না যায় সেখানে কি ছিল। এই ধারা চলতে থাকে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত। তাই ৬৮-৬৯, ৭০-৭১ সালে যাদের জন্ম তারা বুঝ-জ্ঞান হওয়ার পর দেখেছে সেনাশাসক প্রেসিডেন্ট জিয়া ও এরশাদকে। শুনেছে তাদের জয়গান। সেখানে কোথাও ছিল না বঙ্গবন্ধুর নাম। ইতিহাস ছিল বিকৃত। তারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানবে কী করে? এ সময়ে আওয়ামী পরিবারে যাদের জন্ম কেবল তারাই কিছুটা জানতে পেরেছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। তবে সবাই নয়। আর বাকিরা জেনেছে বিকৃত ইতিহাস।
অন্যদের কথা বাদই দিলাম। অপ্রিয় হলেও সত্য, বর্তমানে যারা খোদ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা, যাদের জন্ম হয়েছে সেই ৬৮-৬৯ ও ৭০-৭১ সালে তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর কথা জানে না। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম আসবে কীভাবে? তাইতো তারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু আর এখন জয় শেখ হাসিনা বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলে। আর করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি। জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মরহুম আবদুর রাজ্জাক, মতিয়া চৌধুরী, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, আবদুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী তারা যখন ছাত্রনেতা ছিলেন থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে, ঢাকা শহরে চলতেন রিকশায় করে। আর এখনকার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রনেতা বাদ, কলেজের ছাত্রনেতারাই চলেন গাড়িতে করে। তাদের ঠিকাদারি ব্যবসাও আছে। এদের সঙ্গে আবার সম্পর্ক ভূমিদস্যু, চোরাকারবারি, মজুতদারদের সঙ্গে। তাই দুর্নীতি নির্মূল হবে কী করে? চাকরি পেতে ঘুষ লাগে। অনেকে আবার খোঁজে ঘুষের চাকরি। কোনো চাকরিতে উপরি আয় আছে সেই চাকরিই সবার প্রিয়। এদের দেশপ্রেম নেই, মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নেই।
কারণ এরা জানে না কী করে এ দেশের জন্ম হলো, কাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেলাম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এখনো সময় আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশের উন্নয়নের জন্য আপনি দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। কিন্তু সরিষায় যদি ভূত থাকে সেই ভূত তাড়াবেন কীভাবে? তাই অনুরোধ, অন্তত ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ অফিসে তরুণ নেতাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখানোর জন্য ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করুন। আর মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ সঠিক ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা।

আবদুল মোতালেব, সাংবাদিক ও লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়