গাজীপুরে ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সংশয়

পরের সংবাদ

খোঁজ আর প্রত্যাবর্তনের গল্প

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমরা নব্বই দশকে সাদা কাগজে লিখে, কিংবদন্তি হলুদ খামে ভরে পোস্ট অফিসে চিঠির বাক্সে পোস্ট করে লেখা পাঠাতাম বিভিন্ন পত্রিকা অফিসের ঠিকানায়। তারপর অপেক্ষা ছাপার অক্ষরে লেখা দেখার। সেটা কখনোবা প্রতিক্ষায় রূপ নিত! লেখা ছাপা হলে, ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখলে আনন্দের সীমা থাকত না!
সেই আমরাই এখন ঘরে বসে, চলতে-ফিরতে মিনিটে-মিনিটে বিভিন্ন গ্রুপে লেখা পোস্ট করতে পারি অনলাইনের মাধ্যমে।
তখন আমাদের বাসায় ‘ভোরের কাগজ’ রাখা হতো। পত্রিকা পড়তে পড়তে একদিন ভোরের কাগজ পাঠক ফোরামের সদস্য হলাম। নিয়মিত পাফো পাতায় লেখা পাঠাতাম।
ভোরের কাগজের পাশাপাশি রহস্য পত্রিকা ও খবরের কাগজেও লেখা পাঠানো শুরু করলাম। লেখা ছাপাও হতো নিয়মিতই। তখন আমার নামটা মোটামুটি পরিচিত হয়ে গেছে। এখন যেমন ফেসবুক ফ্রেন্ড বানানো হয়, সে সময় ছিল পেনফ্রেন্ড প্রথা। অনেকেই চিঠি পাঠিয়ে পেনফ্রেন্ড হলো। কী সুন্দর সুন্দর আবেগমাখা সেইসব চিঠি! কারো কারো হাতের লেখা দেখে তো আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম; এত সুন্দর হাতের লেখা হয়! এখন তো ভার্চুয়াল মাধ্যমে সবার হাতের লেখা একরকম..!
বিয়ে, সংসার, বাচ্চাকাচ্চা, সব মিলিয়ে লেখালেখি থেকে একটা সময় আমার পুরোপুরি বিচ্যুতি ঘটে। বলা যায়, লেখালেখির জগৎ থেকে আমি নির্বাসনে চলে যাই।
এখন ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে মাকে আবার তার লেখালেখির জগতে ফিরিয়ে এনেছে। কাগজ-কলমে লেখালেখি করা মানুষ আমি। আমাকে হাতে ধরে মোবাইলের কি-বোর্ড ‘অভ্র’তে বাংলা টাইপ শিখিয়েছে আমার সন্তানরা। শিখিয়েছে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে লেখা পোস্ট করতে।
একদিন ‘পেন্সিল গ্রুপ’-এ একটা গল্প খুব ভালো লাগল। লেখক মাইনুল এইচ সিরাজী। নামটা খুব পরিচিত লাগল। শুরু কমেন্ট বক্সের জিজ্ঞেসা :
আমি : আপনি কি নব্বই দশকের পাঠক ফোরাম লেখক, সিরাজী ভাই..?
সিরাজী ভাই : হ্যাঁ, আপনি?
আমি : পাঠক ফোরামের সালমা রুহী। ফেসবুক নাম আঞ্জুম রুহী।
সিরাজী ভাই : আপনি সেই সালমা রুহী যাকে আমরা খুঁজছি…!
সেই সূত্রে অন্যদের কথা জিজ্ঞেস করি। সিরাজী ভাই ফেসবুকে ‘পাঠক ফোরাম’ গ্রুপের লিংক দিয়ে জানালেন- এই গ্রুপে এড হলে সবাইকে পাবেন।
‘পাঠক ফোরাম’ গ্রুপে এড হয়ে দেখি এলাহিকাণ্ড! প্রায় তিন দশক আগে একসঙ্গে লেখালেখির জগতের অনেকেই এখানে। সবার সঙ্গে এড হয়ে এক অন্যরকম ভালো লাগায় মনটা ভরে গেল!
এখন আমি অনলাইনে দু-কলম লেখালেখি করি। তারপরও মাঝে মাঝে আগের লেখার পেপার কাটিংগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে নষ্টালজিক হই।
সে সময়কার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া পেনফ্রেন্ড তাজুল ইসলাম নীরু ভাই চিঠির সঙ্গে তার একটা কবিতার বই আমাকে পাঠিয়েছিলেন। সেই কবিতার বইটা একদিন হাতে পড়ে পুরনো কাগজ ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে। কৌতূহলী হলাম- এত বছর পর সেই কবিকে খুঁজে পেলে কেমন হয়…?
নয়-ছয় ভাবতে ভাবতে ফেসবুকে পাফো বন্ধু অনুজ বোরহানের শরণাপন্ন হই। কবিকে খোঁজার ব্যাপারে আমাকে আশ্বস্ত করলেন। বোরহান আর পাফো বি.স. মুকুল শাহরিয়ারের সহায়তায় কয়েকদিন পর সেই কবির আইডি লিংক পাঠিয়ে দিল। বলল, আপা, দেখেন তো, ইনি কিনা…?
প্রায় তিন দশক আগের ছবির সঙ্গে মিল খুঁজে না পেলেও, কিছুটা মিল পেয়ে আন্দাজে ম্যাসেজ ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলাম। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার পর জানতে পারলাম, ইনিই তিন দশক আগে আমাকে খামের ভেতরে করে চিঠির সঙ্গে কবিতার বই পাঠানো সেই কবি…!
কাকতালীয়ভাবে প্রযুক্তির সহায়তায় ও ফেসবুকের কল্যাণে, তিন দশক আগের পাঠক ফোরাম বন্ধুদের, চিঠির যুগের ‘পেনফ্রেন্ড’কে পেয়ে আনন্দিত হলাম। এই গল্পটা লিখব লিখব করেও লিখতে অনেক দেরি হয়ে গেল।
সালমা রুহী : পাফোস নম্বর : ১৪০৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়