রাজধানীতে ৬ বছরের শিশুকে গণধর্ষণের অভিযোগ

আগের সংবাদ

সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

মন কেড়েছে ঈদের সিনেমা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ বছর ৫১টি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। এছাড়া মুক্তি পেয়েছে চারটি হিন্দি ও একটি কলকাতার সিনেমা। চলতি বছরে প্রথম মুক্তি পেয়েছিল সানী সানোয়ার ও ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত ‘ব্ল্যাক ওয়ার : মিশন এক্সট্রিম-২’। ১৩ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়া আরিফিন শুভ অভিনীত এ সিনেমাটিকে ব্যবসায়িক দিক থেকে অ্যাভারেজের তকমা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। বছরের প্রথম মাসে আরো মুক্তি পেয়েছে আবু রায়হান জুয়েল পরিচালিত পরীমনি অভিনীত ‘অ্যাডভেঞ্জার অব সুন্দরবন’ ও খন্দকার সুমন পরিচালিত ‘সাঁতাও’। দুটি সিনেমাই ফ্লপ। ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় ছয়টি সিনেমা। এগুলো হলো- প্রদীপ ঘোষ পরিচালিত পরীমনি অভিনীত ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’, মো. মাহবুবুর রশিদের ‘ভাগ্য’, রকিবুল আলম রকিবের ‘কথা দিলাম’, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ‘মন দিয়েছি তারে’, শামীম আহমেদ রনীর ‘বুবুজান’ ও ইন্দ্রদীপ রায় চৌধুরী পরিচালিত ‘মায়ার জঞ্জাল’। সব সিনেমাই ফ্লপ। এসব সিনেমা নিয়ে ছিল না কোনো আলোচনাও।
স্বাধীনতার মাস মার্চ। এ মাসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিত চারটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। চারটি সিনেমাই ব্যবসায়িক দিক থেকে ফ্লপ। এগুলো হলো- ফাখরুল আরেফীন খানের ‘জে. কে ১৯৭১’, খিজির হায়াত খান পরিচালিত ‘ওরা ৭ জন’, পঙ্কজ পলিতের ‘একটি না বলা গল্প’ ও অনন্য মামুন পরিচালিত এবং রিয়াজ ও জাকিয়া বারী মম অভিনীত ‘রেডিও’।
এপ্রিল মাসে ছিল রোজার ঈদ। এ ঈদকে কেন্দ্র করে সিনেমার বাজার বেশ জমে উঠেছিল। এ সময় মুক্তি পেয়েছিল আটটি সিনেমা। এর মধ্যে ছিল শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত তপু খান ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’। মুক্তির পর সিনেমাটিকে হিট বলেই ঘোষণা দিয়েছিল প্রযোজনা সংস্থা আরটিভি। কিন্তু বছরের শেষ দিকে প্রযোজনা সংস্থা থেকে দাবি করা হয়েছে, এ সিনেমাটি আসলে ফ্লপ হয়েছিল। পুঁজিও ফিরে আসেনি। এই ঈদে মুক্তি পেয়েছিল ক্যারিয়ারে প্রথমবার অনন্ত জলিল ও বর্ষার নিজস্ব প্রযোজনার বাইরের সিনেমা ‘কিল হিম’। মো. ইকবাল পরিচালিত এ সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে সাফল্য পেয়েছে। এ সিনেমায় বর্ষাকে দেখা গেছে ভিলেন চরিত্রে। বেশ প্রশংসিতও হয়েছে তার অভিনয়। অনন্ত জলিল ছিল বরাবরের মতোই আলোচিত। ঈদে সজল ও পূজা চেরি অভিনীত এবং নাদের চৌধুরী পরিচালিত ‘জ¦ীন’ সিনেমাটি বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। ব্যবসায়িক সাফল্যও দাবি করেছেন নির্মাতা। সাইফ চন্দনের পরিচালনায় বুবলী ও আদর আজাদ অভিনীত ‘লোকাল’ সিনেমাটি ঈদে আলোচনায় ছিল। তবে ব্যবসায়িক সাফল্য নেই। একই ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত অপু বিশ্বাস ও জয় চৌধুরী অভিনীত এবং সোলায়মান আলী লেবু পরিচালিত ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’ সিনেমাটি ছিল ফ্লপ। ফ্লপের তালিকায় ছিল একই সময় মুক্তিপ্রাপ্ত বাপ্পি চৌধুরী অভিনীত সুমন ধর পরিচালিত ‘শত্রæ’, আবু তৌহিদ হীরণ পরিচালিত ‘আদম’ ও সৈকত নাসির পরিচালিত ‘পাপ : প্রথম চাল’।
মে মাসে এসে আমদানিকৃত সিনেমা শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ বাংলাদেশি প্রেক্ষাগৃহে দর্শক সমাগম ঘটিয়েছে। এ মাসে মুক্তি পাওয়া দুটি দেশি সিনেমা অরণ্য আনোয়ার পরিচালিত ও পরীমনি অভিনীত ‘মা’ ও যুবরাজ শামীমের ‘আদিম’ ছিল ফ্লপ। এসব সিনেমা নিয়ে ছিল না কোনো আলোচনাও।
জুন মাসে আবারও আসে ঈদুল আজহা। এ মাসের শেষের দিকে ছিল কুরবানির ঈদ। তার আগের মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে মুক্তি পায় পাঁচটি সিনেমা। এগুলো হলো- সৈকত নাসির পরিচালিত ও অধরা খান অভিনীত ‘সুলতানপুর’, বাবুল রেজার ‘আমি টোকাই’, মনতাজুর রহমান আকবরের ‘যেমন জামাই তেমন বউ’, রোজিনার ‘ফিরে দেখা’ ও আমিনুল ইসলাম বাচ্চুর ‘ফুলজান’। এর মধ্যে ‘সুলতানপুর’ সিনেমায় অধরা খানের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে ‘ফিরে দেখা’র মাধ্যমে রোজিনা পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে ব্যবসায়িক দিক থেকে সব সিনেমাই ছিল ফ্লপ। একই মাসে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পায় পাঁচটি সিনেমা। এর মধ্যে শাকিব খান অভিনীত ‘প্রিয়তমা’ ছিল ব্লকবাস্টার। আরশাদ আদনান প্রযোজিত ও হিমেল আশরাফ পরিচালিত এ সিনেমার নায়িকা ছিলেন কলকাতার ইধিকা পাল। একই সময় মুক্তিপ্রাপ্ত রায়হান রাফির ‘সুড়ঙ্গ’ ছিল সুপারহিট। এ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় নাটকের অভিনেতা আফরান নিশোর। তার সঙ্গে নায়িকা ছিলেন তমা মির্জা। অন্যদিকে কুরবানির ঈদে চয়নিকার পরিচালনায় ‘প্রহেলিকা’ সিনেমার মাধ্যমে আট বছর পর পর্দায় ফিরেন জনপ্রিয় অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। এতে তার নায়িকা ছিলেন শবনম বুবলী। সিনেমাটির ব্যবসায়িক সাফল্য ছিল অ্যাভারেজ। অন্যদিকে এ ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত অপু বিশ্বাসের প্রযোজনায় প্রথম সিনেমা (সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত) ‘লাল শাড়ি’ সাফল্য পায়নি। বন্ধন বিশ্বাস পরিচালিত এ সিনেমায় অপুর নায়ক ছিলেন সাইমন সাদিক। এই ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত আরেক সিনেমা ‘ক্যাসিনো’ ছিল ফ্লপ। সৈকত নাসির পরিচালিত এ সিনেমার পাত্রপাত্রী ছিলেন নিরব ও শবনম বুবলী।
আগস্টে মুক্তি পায় চার সিনেমা। এগুলো হলো- এফ এম শাহীনের শিশুতোষ সিনেমা ‘মাইক’, সোহেল রানার ছেলে মাশরুর পারভেজ পরিচালিত ‘গোয়িং হোম’, হৃদি হকের পরিচালনায় ফেরদৌস অভিনীত ‘১৯৭১ সেই সব দিন’, মোহাম্মদ নুরুজ্জামান পরিচালিত শিশুতোষ সিনেমা ‘আম কাঁঠালের ছুটি’। সবকটি সিনেমাই ছিল ফ্লপ।
সেপ্টেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ৯টি সিনেমা। এর মধ্যে সাতটি দেশি ও দুটি হিন্দি সিনেমা। দেশি সিনেমাগুলোর মধ্যে ডিপজল অভিনীত মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘ঘর ভাঙা সংসার’, ফেরদৌস ও নিপুণ অভিনীত দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘সুজন মাঝি’, মোহাম্মদ রাব্বি মৃধা পরিচালিত ‘পায়ের তলায় মাটি নেই’, মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘দুঃসাহসী খোকা’ ও এসডি রুবেল অভিনীত ও পরিচালিত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ ছিল একেবারেই ফ্লপ। এ মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত ‘অন্তর্জাল’ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু সিয়াম, বিদ্যা সিনহা মিম অভিনীত এ সিনেমাটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। অন্যদিকে একই মাসে কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্টি জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানাকে নিয়ে নির্মিত ‘এম আর নাইন’ নিয়েও প্রত্যাশার পারদ ছিল তুঙ্গে। আসিফ আকবর পরিচালিত এ সিনেমাটিও ছিল ফ্লপ। এ মাসে বলিউডের শাহরুখ খান অভিনীত ‘জওয়ান’ ও সালমান খানের ‘কিসি কা ভাই কিসি কা জান’ নামে দুটি সিনেমাও মুক্তি পায়।
অক্টোবর মাস ছিল কেবলই মুজিবময়। ১৩ অক্টোবর মুক্তি পায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত বহুল আলোচিত সিনেমা ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ভারতের শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত এ সিনেমায় মুজিবের চরিত্রে রূপদান করেছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারের জন্য মাইলফলক বলেই এ অভিনেতার দাবি। অবশ্য মুজিবের চরিত্রে তিনি বেশ প্রশংসিতও হন। নভেম্বরে মুক্তি পায় চারটি সিনেমা। এগুলো হলো ওয়ালিদ আহমেদ পরিচালিত ‘মেঘের কপাট’, অরুণা বিশ্বাস পরিচালিত ‘অসম্ভব’, আরিফুর জামারের ‘যন্ত্রণা’, রাইসুল ইসলাম অনিকের ‘ইতি চিত্রা’ ও মানিক মানবিক পরিচালিত ‘আজব ছেলে’। এর মধ্যে অসম্ভবের মাধ্যমে প্রথমবার সিনেমার নির্মাতা হিসেবে অভিষেক হয়েছে অরুণা বিশ্বাসের। এ সিনেমায় গাজী নূরের অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
ডিসেম্বর বিজয়ের মাস হলেও এ মাসে দেশের চেয়ে ভারতের সিনেমাই বেশি (রণবীর কাপুরের ‘অ্যানিম্যাল’ ও জিতের ‘মানুষ’) মুক্তি পেয়েছে। উজ্জ্বল কুমার পরিচালিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ নামে একটি দেশি সিনেমা মুক্তি পেলেও সেটি ছিল ফ্লপ। এদিকে চলতি বছরকে ভারতীয় তথা হিন্দি সিনেমার বছর বললেও ভুল হবে না। কারণ ঈদের বাইরে ঢাকাই সিনেমা কোনো আলোচনায় ছিল না। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে ভারতীয় সিনেমা। দীর্ঘদিন দেশি প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি সিনেমা মুক্তি বন্ধ থাকলেও চলতি বছরের মাঝামাঝি বছরে ১০টি ভারতীয় সিনেমা আমদানি ও প্রদর্শন করার অনুমতি দেয় সরকার। সেই অনুমতির সূত্র ধরে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ ও ‘ডানকি’, সালমান খানের ‘কিসি কা ভাই কিসি কা জান’ ও রণবীর কাপুরের ‘অ্যানিম্যাল’ প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে। এর মধ্যে ‘জওয়ান’ ও ‘ডানকি’ আন্তর্জাতিক মুক্তির দিনেই বাংলাদেশে প্রদর্শিত হয়। সিনেমাগুলো দেশে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙা রেখেছিল।

: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়