ডিএমপি কমিশনার : নির্বাচন ঘিরে সৃষ্টি করা হচ্ছে নাশকতার পরিবেশ

আগের সংবাদ

দুই শতাধিক আসনেই মূল প্রতিদ্ব›দ্বী আ.লীগের ‘স্বতন্ত্র’

পরের সংবাদ

তুলা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার : বাংলাদেশে আমদানি কমতে পারে ১৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৬০ শতাংশ টেক্সটাইল বর্জ্য রপ্তানি করে। সমস্ত রপ্তানিকৃত তুলা বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে, বাংলাদেশ তার মোট তুলা আমদানির প্রায় ১৫ শতাংশ কমাতে পারে। একই সঙ্গে ২০৩০ সাল নাগাদ টেক্সটাইল শিল্পের পানির চাহিদা অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় ৩ গুণ দ্রুত বাড়বে। ডেনমার্ক ভিত্তিক সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ সংস্থার ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অবস্থায় পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়নে সার্কুলার ইকোনমি বা বৃত্তাকার অর্থনীতির বিকাশ জরুরি। এই বৃত্তাকার অর্থনৈতিক মডেলে শুধু পরিবেশবান্ধব কলকারখানা স্থাপন নয়, বরং শিল্পের বর্জ্যকে শিল্পের উপকরণ হিসেবে পুনরায় ব্যবহার, সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
স¤প্রতি রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ’বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে সার্কুলারিটি, ডিকার্বোনাইজেশন ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার’ শীর্ষক সংলাপে এক উপস্থাপনায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ ও দেশের খ্যাতনামা বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পোশাক শিল্পে যেসব পদ্ধতিগত পরিবর্তন আসছে তা নিয়ে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের সহযোগিতায় লাইটক্যাসল পার্টনার্স ‘বুনন ২০৩০’ নামে একটি বিস্তৃত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সেই কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে, আগামী দিনে এই খাতের সার্কুলারিটি অর্থনৈতিক মডেল কী হতে পারে তা তুলে ধরতে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
এতে সম্মানীত অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি প্রতিনিধি ড. জাকি উজ জামান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান, বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান, টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, এইচ অ্যান্ড এম- এর স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট এবং পাবলিক এফেয়ার্স ম্যানেজার ফয়সাল রাব্বি প্রমুখ।
লাইটক্যাসল পার্টনার্সের পক্ষে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্টানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন, বিজনেস কনসালট্যান্ট সামিহা আনোয়ার, মৃন্ময় সোবহান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।
‘নীতি কর্মশালা : বুনন ২০৩০: সার্কুলারিটি এবং প্রতিযোগিতামূলক কৌশল সংলাপ’ শীর্ষক উপস্থাপনায় বলা হয়, বিস্ময়কর হলেও সত্য যে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পোশাকের ব্যবহার ১০২ বিলিয়ন আইটেমে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে গ্রিনহাইজ গ্যাস নিঃসরণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। দেশে পোশাক খাত বছরে প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার টন টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপাদন করে। বাংলাদেশ বছরে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের কাঁচামাল আমদানি করে, একই সঙ্গে উচ্চমানের ঝুট রপ্তানি করে। তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শুধু পরিবেশগত নয় বরং অর্থনৈতিক বিবেচনায় সবুজ কারখানার গুরুত্ব অনেক বাড়ছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিজিএমইএর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০০টির বেশি শিল্পবান্ধব কারখানা রয়েছে। এটা আশাব্যঞ্জক খবর বটে। তাই দেশে আনুমানিক সাড়ে ৩ হাজার কারখানার মধ্যে অধিক সংখ্যক সবুজ কারখানা স্থাপনের পাশাপাশি ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ কমানো এবং পরিবেশ সুরক্ষায় টেক্সটাইল বর্জ্যরে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতির দিকে মনোনিবেশ করা জরুরি।
ড. জাকি উজ জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং এ ভালো করছে। যদিও বাংলদেশ সবুজ কারখানা স্থাপনে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে, আর মূল দূষণকারী দেশের মধ্যেও বিবেচিত নয়। তারপরও আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুনগুলো ভালোভাবে অনুুসরণ করলে কারখানাগুলো আরো পরিবেশ বান্ধব হবে।
মো. আরিফুল হক বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যগুলোরও গুণগত মান যথেষ্ট ভালো হতে হবে। অন্যথায় ভোক্তারা এইসব পণ্য কেনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
ভিদিয়া অমৃত খান সবুজ কারখানার প্রসার ঘটাতে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবদিক বিচার বিশ্লেষণ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রসঙ্গত পোশাক শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে চার মিলিয়ন বা ৪০ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুধু এই খাত থেকে রপ্তানি আয় ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। তাই সার্কুলার অর্থনীতি গ্রহণ করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই খাতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়