৫ মাস পর ডেঙ্গুতে মৃত্যুশূন্য, নতুন রোগী ১৭৯

আগের সংবাদ

প্রতীক পেয়েই প্রচারযুদ্ধ

পরের সংবাদ

বিজয় পতাকা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সবুজ কাঁধে একটা বাঁশ নিয়ে দৌড়াচ্ছে- বাঁশটাতে যেন পুরো বাংলাদেশ…!
বাংলাদেশের ছোট-বড় পতাকা, পতাকা আঁকা মাথায় লাগানো ব্যান্ড, পতাকা আঁকা হাতে বাঁধার ব্যান্ড।
সামনেই বিজয় দিবস, তাই সবুজ এসব বিক্রি করছে। এমনিতে সে ইট ভেঙে সুরকি বানায়, কাজটা খুব কষ্টের। হাতে ফোসকা পড়ে, কিন্তু টাকাটা ভালো পায়। তবে বিশেষ মাসগুলোতে পতাকা বিক্রি করতে তার খুব ভালো লাগে।
সবুজের বয়স কত হবে? চৌদ্দ বা পনেরো বছর। এই বয়সি ছেলেরা স্কুলে পড়ে, অথচ সে এই বয়সে সংসার চালায়।
বাবা তার সাত বছর বয়সি বোনটা মায়ের পেটে থাকতেই অসুস্থতায় মারা যান।
মা মানুষের বাসায় কাজ করে, আর সবুজ এটা-সেটা করে। মা-ছেলের রোজগারে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে তিনজনের সংসারটা চলে।
ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা সবুজের কাছ থেকে পতাকা, ব্যান্ড, স্টিকার কিনে নেয়।
মুক্তিযুদ্ধের কথা মানুষের মুখে শুনেছে। তার দাদু বেঁচে থাকতে, দাদুর কাছেও মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছে।
দেশকে স্বাধীন করতে মুক্তি সেনারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। এই যুদ্ধে কত বাঙালি মারা গেছে, কত মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে ওই পাকিস্তানি হায়েনারা। মুক্তিসেনারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে নিজের দেশ, নিজের মা সমতুল্য মাতৃভূমির জন্য স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এলেই চতুর্দিকে সাজসাজ রব, সবুজের খুব আনন্দ লাগে। স্কুলের ছেলে-মেয়েরা লাল সবুজ কাপড় পড়ে, হাতে পতাকা নিয়ে ঘোরে।
সবুজেরও মন চায়, কিন্তু সে তো স্কুলে পড়ে না। তাই সে পতাকা বিক্রি করে মনের শখ পূরণ করে।
বিজয় দিবসে উপজেলার মাঠে অনেক সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান হয়। সব স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী আসে, সেদিন অনেক পতাকা বিক্রি হয়।
আজকের বিক্রির টাকা দিয়ে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনবে, ছেঁড়া শাড়ি পরে মা মানুষের বাসায় কাজে যায়, তার দেখে খারাপ লাগে।
আহা, আজ যদি বাবা বেঁচে থাকত, মাকে ছেঁড়া শাড়ি পরতে হতো না, কারো বাসায় কাজ করতে হতো না। দু’ভাই বোন স্কুলে যেত- সবুজের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
সবুজের মা মোটামুটি সুন্দরী, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে অনেক বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু সন্তান দুটার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আর বিয়ে করেনি। তবে গ্রামের মাতাব্বর ফজলু মিয়ার চোখ তার মায়ের দিকে। কয়েকবার সবুজের মাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে, অথচ ঘরে তার বউ আছে।
প্রায় ফজলু মিয়া তাদের ঘরে এসে বসে থাকে, বোঝায় সবার খোঁজখবর নিতে এসেছে। কিন্তু চোখ থাকে অন্য দিকে, লোকটাকে সবুজের মোটেও পছন্দ না, দেখলেই ওর রাগ উঠে।
উপজেলার মাঠে আজ সব পতাকা বিক্রি হয়ে গেছে। পতাকা বিক্রির টাকা দিয়ে সবুজ মায়ের জন্য সবুজ জমিনে লাল পেড়ে একটা শাড়ি কিনল।
তার চোখে ভাসছে লাল পেড়ে শাড়ি পরা মায়ের হাঁসি মুখটা।
সবুজ এক হাতে মায়ের জন্য কেনা শাড়িটা, অন্য হাতে পতাকা বিক্রির বাঁশটা নিয়ে দৌড়ে বাড়ি ফিরছে।
একটা পাট ক্ষেতের পাশ দিয়ে সবুজকে বাড়ি ফিরতে হয়, ওর মা মাঝে মাঝে পাট শাক নিতে আসে। প্রায় ওদের পাট শাক ভাজি দিয়ে ভাত খেতে হয়। ছোট বোনটা পাটশাক ভাজি দেখলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। বলে, ‘ভাত খামু না, এই শাক তিতা লাগে…’
সবুজ মাঝে মাঝে বোনের জন্য একটা ডিম নিয়ে যায়। সব দিন নিতে পারে না, টাকায় কুলায় না।
বোনটা ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেতে পছন্দ করে। বোনের ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খাওয়া হাসি মুখটা দেখে, সবুজ সারাদিনের করা পরিশ্রম ভুলে যায়।
ওই যে মায়ের শাক তোলার ঝাকিটা দেখা যাচ্ছে। ঝাকিটার কাছে যেতেই সবুজ ক্ষেতের ভেতর থেকে ধস্তাধস্তি ও চাপা গোঙানির শব্দ শুনতে পায়।
কৌতূহল নিয়ে সবুজ ভেতরে উঁকি দেয়, হাত থেকে মায়ের শাড়িটা পড়ে যায়।
ফজলু মিয়া নামের হায়েনা তার মায়ের মুখ চেপে ধরে সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করছে।
দাদুর বলা কথাগুলো মনে পড়ল- ‘একাত্তরের যুদ্ধে ফজলু মিয়া রুপি হায়েনারা অনেক মা-বোনের ইজ্জতের ওপর হামলা করে। আর তাদের ইজ্জত বাঁচাতে মুক্তিসেনারা হায়েনাদের ওপর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশ রক্ষার্থে, মা-বোনের ইজ্জত রক্ষার্থে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা, অর্জন করে আজকের এই পতাকা, এই বিজয় দিবস…’।
সবুজ পতাকা বিক্রির বাঁশ দিয়ে সজোরে ফজলু মিয়ার মাথায় বাড়ি মারে।
মাকে জড়িয়ে সবুজ বিজয়ের হাঁসি হাসে- মায়ের সম্ভ্রম বাঁচিয়ে আজ যেন আবার সে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে…।
ফজলু মিয়ার মৃত্যুর জন্য সবুজকে বাকি জীবন হয়তো কারাগারে কাটাতে হবে।
কিন্তু তার কোনো দুঃখ নেই। সে যেন একাত্তরের মুক্তিসেনা, মায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করে আবার আজ বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে…।
গুন গুন করে সে গেয়ে উঠে-
আমি গাইবো, গাইবো
বিজয়েরই গান,
যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে
দিয়ে গেছে প্রাণ।

:: পাফোস নম্বর : ১৪০৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়