নীরব-মজনুসহ বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড : নাশকতার তিন মামলা

আগের সংবাদ

অপশক্তিকে রুখে দেয়ার অঙ্গীকার : বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

পরের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার সংগ্রামের ক্ষেত্রে নানা পথে, নানা উপায়ে, নানা কৌশলে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। রণাঙ্গনের প্রত্যক্ষ যুদ্ধের পাশাপাশি গণমাধ্যমের সহায়তায় প্রচার-প্রচারণা, কূটনৈতিক তৎপরতা তথা বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সহায়তার অনুরোধ বা সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করা ইত্যাদি উপায়ও রণকৌশলের মধ্যে পড়ে।
১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় স্বৈরশাসকদের একনায়কতন্ত্র এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঊষালগ্নেই শোষণের শিকার হয়। তার প্রকাশ ঘটে রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণের প্রশ্নে। যার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে। এরপর খুব বেশি দিন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী শোষণমূলক শাসন কায়েম রাখার জন্য জারি করে সামরিক শাসন। তার বিরুদ্ধে শোষিত জনগণ রুখে দাঁড়ায়। সে প্রতিবাদ ১৯৯৯-এ রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে।
এ গণঅভ্যুত্থানকে ত্বরান্বিত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত ৬ দফা কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল ছাত্র সমাজের ১১ দফা কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন। তৎকালীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সামরিক সরকারপ্রধান ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় না। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের সকল জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনগণ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয় তারা। শাসনক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর তর্জনী। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু উত্তাল জনসমুদ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অপকৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখতে স্বৈরাচারী সামরিক সরকার বেগবান করতে চায় তার দমন নীতি। সৈন্য পাঠিয়ে শুরু করে হত্যা-লুণ্ঠন-নির্যাতন। আলোচনার এক পর্যায়ে স্বৈরাচারী সামরিক সরকারের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু সবই বুঝতে পারেন তার দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে। ১৯৭১-এর ২ মার্চ পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
এবারে আসি বেতার প্রসঙ্গে। পাকিস্তান আমলে বলা হতো ‘রেডিও পাকিস্তান’। যে কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার করা হতো সেই কেন্দ্রের নাম যুক্ত করে বলা হতো। যেমন রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা। কিন্তু অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই বলা হতো ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি’। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বেতারে সম্প্রচার করতে দিতে চায়নি, তৎকালীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সরকার। কিন্তু জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল বেতার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক রকম জোর করেই বাধ্য করে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করেন। এভাবেই প্রগতিশীল বেতারকর্মীরা হয়ে ওঠেন স্বাধীনতার শব্দসৈনিক। আর এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র। মূল ভূমিকায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান এবং চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেলাল মোহাম্মদ। বেলাল মোহাম্মদ লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২ মে পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুটি স্থানিক পর্যায় ছিল, তা হচ্ছে ২৬ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত চট্টগ্রামের কালুরঘাট এবং ৩ এপ্রিল থেকে ২ মে ১৯৭১ পর্যন্ত রামগড় সীমান্তবর্তীমুক্ত অঞ্চল।’
বেলাল মোহাম্মদ তার ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ শীর্ষক গ্রন্থে (পুনর্মুদ্রণ, ২০১৫) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন। প্রথম চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের যে দশ জন মূল ভূমিকা পালন করেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় তাদের নাম ঐতিহাসিক কারণেই উল্লেখ করা প্রয়োজন। তারা হলেন : বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম স›দ্বীপ, আবদুল্লাহ আল-ফারুক, মুস্তফা আনোয়ার ও কাজী হাবিবউদ্দীন এবং প্রকৌশল বিভাগের সৈয়দ আবদুর শাকের, রাশেদুল হোসেন, আমিনুর রহমান, শরফুজ্জামান ও রেজাউল করিম চৌধুরী।
বেলাল মোহাম্মদ আরো উল্লেখ করেছেন : দলভুক্ত কর্মীগণ ছাড়া নৈমিত্তিকভাবে যারা অনুষ্ঠান প্রচার ঘোষণায় অংশ নিয়েছিলেন তারা হলেন : কবি আবদুস সালাম, এম এ হান্নান, হাবিবুর রহমান জালাল, সুলতানুল আলম, তমজিদা বেগম, তৎকালীন ক্যাপ্টেন ভুইয়া, মাহমুদ হোসেন (শহীদ) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
বেলাল মোহাম্মদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম দিককার সম্প্রচারের স্থানসমূহেরও উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত সময় কালের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুটি স্থানিক পর্যায় ছিল। তার ভাষায় ‘২৬ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত চট্টগ্রামের কালুরঘাট এবং ৩ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত রামগড় সীমান্তবর্তীমুক্ত অঞ্চল। কালুরঘাট পর্যায়ে চট্টগ্রাম বেতারের ১০ কিলোওয়াট শক্তি সম্পন্ন ট্রান্সমিটার এবং পরবর্তী পর্যায়ে ট্রান্সমিটার ভবন থেকে স্থানান্তরিত একটি এক কিলোওয়াট শক্তির মিডিয়াম ওয়েভ ট্রান্সমিটার ও অন্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রথমত ২০০ ওয়াট শক্তির ওপরে ৪০০ ওয়াট শক্তির শর্ট ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা হয়।
অতঃপর আগরতলা হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ৫৭/৮ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড থেকে পরিচালিত হয়, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের, ধারণা ও সম্প্রচার কার্যক্রম।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী সংগঠক ও বার্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কামাল লোহনীও তার ‘মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশ বেতার’ (মে, ২০১৬) গ্রন্থে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে লিখেছেন। আরো অনেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রসঙ্গে বিক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। সেগুলোও মূল্যবান। কামাল লোহানী এ বিষয়ে যা লিখেছেন, তার মর্মকথা হলো চট্টগ্রামের পর বগাফার জঙ্গল ও আগরতলা থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। তারপর কলকাতা পর্ব। প্রবাসী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার (১০ এপ্রিল, ১৯৭১) পর।

২৫ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ) ১৯৭১ কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন থেকে কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটি বাড়ি থেকে পরিচালিত হতে থাকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব কার্যক্রম। নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত অনুষ্ঠান ছাড়াও রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবী কবি সাহিত্যিক এবং ছাত্রনেতারাও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। প্রচারিত হতো বাংলা ছাড়াও ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় নির্মিত অনুষ্ঠানমালা। দেশাত্মবোধক গান রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, কথিকা, কবিতা, ছোটগল্প নাটক প্রভৃতি সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে ঘোষিত হতো স্বাধীনতার মর্মবাণী, গুরুত্ব, মুক্তিযুদ্ধের বার্তা এবং স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত প্রসঙ্গ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত প্রচার করা হতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণী। এতে করে তিনি অনুপস্থিত থেকেও ছিলেন স্বমহিমায় উপস্থিত। তিনিই ছিলেন প্রবাসী সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি। জননেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম পালন করতেন উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। প্রেস, তথ্য, বেতার, ফিল্ম অ্যান্ড ডিজাইনের দায়িত্বে ছিলেন আবদুল মান্নান, তৎকালীন একজন এসএনএ।
আমরা এখানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ঘোষণায় একটি অংশ, একটু দীর্ঘ হলেও উদ্ধার করতে চাই। তাহলে এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে।
আজ মঙ্গলবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭৮
২৫ মে ১৯৭১ সাল
(ঝরমহধঃঁৎব ঞঁহব)
৭.০০ অ.গ
আসসালামু আলাইকুম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাদের প্রথম অধিবেশন শুরু করছি।
অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে … মিটারে … কিঃ সাঃ এ।
অধিবেশনের প্রথমে শুনুন তেলাওয়াতে কালামে পাক ও তার বাংলা তরজমা।
৭.১০ … … …. ….
* চরমপত্র শুনতে পাবেন সকাল ৭টা বেজে … মিনিটে।
* বঙ্গবন্ধুর বাণী পাঠ থেকে শুনতে পাবেন সকাল সাতটা বেজে চল্লিশ মিনিটে।
উল্লেখ্য, কেবল পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত নয়, হিন্দুদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ পবিত্র গীতা, বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘ত্রিপিটক’ এবং খ্রিস্টানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘বাইবেল’ থেকেও পাঠ করা হতো। ধর্ম মেনেই ধর্ম-নিরপেক্ষতার যে নীতি বঙ্গবন্ধু পালন করতেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকেও সেই নীতি অনুসরণ করা হতো।
নাট্যানুষ্ঠানের আকারে প্রচারিত হতো হানাদার বাহিনী ও তাদের কর্তাদের ব্যঙ্গ করে অনুষ্ঠান ‘জল্লাদের দরবার’ ব্যঙ্গাত্মক কথিকা ‘চরমপত্র’ ইত্যাদি। চরমপত্রে এম আর আকতার মুকুল আঞ্চলিক ভাষাও ব্যবহার করতেন। স্বাধীনতাকামী জনগণের কাছে তা অত্যন্ত উপভোগ্য এবং উদ্দীপক হয়ে উঠত।
পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের বাংলাদেশে রেখে যাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বিভিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অনেকেই ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। যেমন- মঞ্জুর কাদের বাবুল ব্যবহার করতেন বাবুল আখতার- এই ছদ্মনাম। বর্তমান প্রবন্ধকার নিজেও একই কারণে সবুজ চক্রবর্তী ছদ্মনামটি ব্যবহার করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। ‘জাগরণী’ ছিল দেশাত্মবোধক গানের অনুষ্ঠান। ‘অগ্নিশিখা’ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান। সাহিত্য বিষয়ক একটি অনুষ্ঠান ছিল ‘রক্তস্বাক্ষর’। রক্তস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কবিরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করতেন। নিয়মিত কাথিকাগুলোও বিভিন্ন নামে প্রচারিত হতো। যেমন বিপ্রদাস বড়–য়া ছিলেন ‘জনতার সংগ্রাম’ শীর্ষক নিয়মিত কথিকার লেখক ও পাঠক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও মুক্তি-সংগ্রামের ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীরা জানতে পেরেছেন ও বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যৌক্তিকতা, কর্মকাণ্ড ও মুক্তিযুদ্ধের বার্তা। দেশবাসীরা আশ্বস্ত হয়েছেন এই ভেবে যে স্বাধীনতার সংগ্রাম চলছে। তরুণরা উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে দলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে। নারীদের নিয়ে বেগম মুশতারি শফি একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতেন। এতে দেশের ভেতরকার নারীরা এবং শরণার্থী শিবিরের নারীরাও উদ্বুদ্ধ হতেন। যেসব নারী প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন, তারাও অনুপ্রাণিত হতেন।
মোট কথা, মুক্তিযোদ্ধা, দেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং বিশ্ববাসীর জন্য ইতিবাচক বিশ্ব জনমতের জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এছাড়া শত্রæপক্ষের মনোবল দুর্বল করার জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকাও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৬ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ বিজয় অর্জনের পরও বেশ কয়েকদিন- ২ জানুয়ারি পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সম্প্রচার চালু রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতা অর্জনে তাই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অবদান গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিস্মরণীয়। বস্তুত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এক গৌরবের অর্জন।
অমর হোক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইতিহাস। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে যারা প্রয়াত তাদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। যারা জীবিত আছেন, তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি। তাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করা এবং তাদের অর্জনকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য কী পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার আশু বাস্তবায়ন করা যায়, তার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের প্রিয় ও গর্বের প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সুচিন্তিত প্রস্তাব পেশ করতে পারেন। এছাড়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারীদের জীবনী ও কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ ও তার ফল গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার জন্যও বাংলা একাডেমির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বাংলা একাডেমির জয় হোক।
জয় বাংলা।
জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়