ডেঙ্গুতে কমেছে রোগী ও মৃতের সংখ্যা

আগের সংবাদ

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ৭ জানুয়ারি : সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেবার উদাত্ত আহ্বান > আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ

পরের সংবাদ

মামদো ভূতের কাণ্ড

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এখন মিতুর স্কুল বন্ধ। ছুটিতে পড়াশোনার ফাঁকে নিজের পছন্দমতো কাজ করার সময় পায় বলে মনটা ফুরফুরে, উৎফুল্ল। সারা বিকাল বইগুলো ঝেড়ে-মুছে গুছিয়েছে মিতু। টিনটিন কমিকস, ডিজনি রূপকথার বই। বিশ্ব সাহিত্যের অসংখ্য কিশোর ক্ল্যাসিকস। বাসার অন্য সব অসংখ্য বই। এডভেঞ্চার, কিছু ভূতের গল্পের বই। বইয়ের আলমারিটা খালি করে টেনেটুনে অন্যদিকে সরিয়েছে। মাও কখনো রুমের ফার্নিচারগুলোর জায়গা চেঞ্জ করে। তার পছন্দ, সেও সেটা করে। দেখে বাবা-মা খুশি হন। তাই মিতু আহ্লাদে আনন্দে আটখানা।
পছন্দের বইয়ের সঙ্গে বেশ ভালো সময় কাটল। কিছুদিন থেকে স্ট্যাম্প কালেকশনেরও শখ। ইতোমধ্যে অনেক টিকেট জমেছে। বাবা-মা, চেনাজানা বড়রা, বন্ধু, আত্মীয়রা খুশি মনে ডাকটিকেট দেন। তারা জেনে অবাক, এখন এই হবি তেমন দেখাই যায় না। তাই মিতু টিকেটের সঙ্গে বাড়তি প্রশংসাও পায়। এখন রাতে কিছু স্ট্যাম্প নতুন পাওয়া এলবামে আটকাবে। তাই স্ট্যাম্পগুলো ডাইনিং টেবিলে ছড়িয়ে রেখে সিরিয়ালি ছোট-বড় সাইজ মতো গুছিয়ে নিচ্ছে।
সকালে বাবা গেছে তাদের গ্রামের বাড়িতে। দুদিন পর যাবে তারাও। ফিরবে দাদা-দাদিসহ। মফস্বল শহরে এই একতলা বাড়িটার পেছনে ফলের গাছ, সবজি বাগান। সামনে ফুলের বাগান। বাসা থেকে কিছুটা দূরে নদী। মায়ের সঙ্গে সেদিন বেড়াতে গিয়েছিল। এত সুন্দর, মন ভরে যায়। কার্তিকের শুকিয়ে আসা শীর্ণ নদীর তীরে বেড়িয়ে পড়ন্ত বিকালে ফিরে এলো।
রিকশা এগুচ্ছে, তখনই ঝড়ের মতো শো শো শব্দে এলোমেলো বাতাস ওঠে। গা ছমছম করে। মিতু দেখে একপাশে ঝুড়ি নামা বয়সি বট, পাকুড়, অশ্মত্থ বৃক্ষ। বাবলা কাঁটা গাছেরও দেদার বিস্তার। পেছনে ভাঙাচোরা প্রাচীন বাড়ি। নোনা ধরা দেয়ালের ফাঁকে রাজ্যের লতাগুল্ম। তাদের পাড়া থেকে নদীর ধারে আসা-যাওয়ার পথ বাড়িটার পাশ দিয়ে, তাই ভয় পায় মিতু।
– মা, আর কখনো আসব না এদিকে। পুরনো বাড়িটাতে মামদো ভূতরা ছানাপোনাসহ থাকে হয়তো।
মা মাথা নেড়ে বলেন- হুম, শুধুই ওরা? আরো অন্য কিছুও থাকে বুঝেছিস! ব্রহ্মদৈত্য, শাকচুন্নী, রাক্ষস-খোক্ষস, দৈত্য-দানো!
শুকনো মুখে মিতু বলে- জ্বিন, পরীও?
এবার মা আশ্বস্ত করেন- বোকা ভীতু, পুরনো বাড়িটা পরিত্যক্ত হলেও ভয়ের কোনো কাহিনি কারো কাছে কখনো শুনিনি!
তবুও এখন এই রাতে বাড়িটার কথা হঠাৎ মনে হলে শিউরে ওঠে মিতু। ভয় তাড়াতে স্ট্যাম্প আটকানো শুরু করে মন দিয়ে। বেশ বড় ডাইনিং স্পেসটা। অল্প দূরে জানালার পর্দা একপাশে সরিয়ে রাখা। কাচের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে পাড়ার ভেতরের পায়ে চলা পথ এই রাতে একেবারে শুনশান, নির্জন। বাগানে ফুটেছে গাছভর্তি স্থলপদ্ম, জবা। রাস্তার জ¦লে থাকা নিয়ন আলোতে দেখা যায় শিউলি তলায় টুপটাপ ঝরছে ফুল। কার্তিকের শিশিরবিন্দু ঝরে ভিজে উঠেছে মাটি। একরকম গন্ধ থাকে এই ভেজা মাটির। মিতুর ঘুম পেলে চা বানাতে ইলেকট্রিক কেটলিটা অন করবে কিনা ভাবে।
একটু আগে মা খাবার টেবিলে রেখে গেছে ঘরে বানানো ফ্রুটস কেক। এখনো গরম। প্রচুর কিশমিশ, বাদাম, মোরব্বা টুকরা দেয়া এই ফ্রুটস কেক মিতুর প্রিয়। এক পিস কেক খেয়ে নেয়ার ভারী ইচ্ছা হলো। কিন্তু টুকরা করা নেই। এই সময় হঠাৎ জানালার কাছে ছায়ার মতো কালোকুলো একটা অবয়ব চট করে সরে যেতে দেখে মিতু। মুহূর্তের মধ্যে আবার ফিরে এলো ছায়াটা। আস্তে-ধীরে নাড়াচাড়া করতে করতে ঝাপসা ছায়া মূর্তিটা স্পষ্ট হয়ে নাকি স্বরে বলে- ‘পেটে খিদে, খাব।’
মিতু ভয়ার্ত চোখে দেখল খ্যাংরাকাঠি আলুর দম মার্কা লিকলিকে শরীরের ওপরে বড়োসড়ো মাথায় গোল গোল ড্যাবডেবে দুটো চোখ, লম্বা ঝোলানো কান।
ভয়ে মা বলে চিৎকার দেবে, কিন্তু গলা দিয়ে শব্দই বের হচ্ছে না। অদ্ভুত ব্যাপার! দৌড়ে মায়ের কাছে বেডরুমে যাবে, কিন্তু পা এতই ভারী নাড়াচাড়া অসম্ভব। কেউ যেন জোরে চেপে ধরে আছে। আতঙ্কে ভয়ে কাঁপলেও কিচ্ছু করার শক্তি নেই। কালাকুলাটা দিব্যি দক্ষিণের বড় জানালার গ্রিল গলিয়ে কাচ ভেদ করে ভেতরে এসে গেছে এরই মধ্যে। নাকি স্বরের কথা শোনে মিতু… ‘সেদিন নদীর কাছে পুরনো দালানের কার্নিশে বসে পোড়া কাঠকয়লা খাচ্ছিলাম, তখন ওই পথে যাচ্ছিলে, আজ চলে এলাম বন্ধু হতে। আমি মামদো ভূতের ছানা হলেও ভালো, বোকাসোকা, ক্যাবলা কান্ত, ভয় পেওনা গো। পেটে অনেক খিদে, মানুষদের খাবারের যা সুন্দর গন্ধ।’ বলেই খামচি মেরে এক খাবলা কেক তুলে মুখে নিয়ে গপগপ করে চপচপ শব্দে খায়।
নিরুপায় অসহায় মিতু কার্তিকের মৃদু শীত শীত রাতেও ঘেমে উঠেছে। আতঙ্কিত মিতুর সামনে বাইরে বড়োসড়ো কালো রঙের একটা হুলো বেড়াল ল্যাজ তুলে জানালার গ্রিলের সঙ্গে লম্বা সটান লটকে আছে। আশ্চর্য, সেটা কিনা বাঘের মতো ডাকছে… ‘হালুম, হালুম।’ আবার কথাও বলছে… ‘গেলুম, গেলুম।’
মামদো ভূত উত্তর দেয়- ‘দিস কেন তাড়া? বিল্লি, ইট্টু দাঁড়া!’ তারপর কয়েকবার খুবলে কেক খেয়ে আগের মতোই মুহূর্তে গ্রিল গলিয়ে বের হয়ে কালো বেড়ালের পিঠে উঠে বসতেই সেটা হয়ে গেল সাদা ধবধবে বিশালকৃতি অচেনা এক পাখি। মেলে দেয়া অপূর্ব সাদা ডানায় কত রঙের অপূর্ব ফুল। চোখের পলকে নিমেষে মিলিয়ে গেল সবকিছু! যেন ভেলকিবাজি, জাদুর খেলা!
বাইরে তেমনই মাঝরাতের চুপচাপ নিরিবিলি পাড়া পথ। কিছু পরে মিতুর নাড়াচাড়ার শক্তিও ফেরে। তবু ভয়ে চোখ বন্ধ রেখে হাতপা ছুড়ে তার স্বরে ডাকে- মা, ওমা, মাগো!
কিন্তু বারবার ধাক্কা দিচ্ছে কে গায়ে? চোখ খুলে দেখে মা-ই তো! অবাক গলায় বলছে- কিরে আম্মু, এখানেই ঘুমিয়ে গেছিস? ঘুম ভেঙে দেখি তুই পাশে নেই। দৌড়ে এলাম, এত রাত অব্দি কী করছে মিতু? এসে দেখি এই অবস্থা। মাথা টেবিলে রেখে। গভীর ঘুমে কাদা হয়ে আছে মেয়ে আমার।
মিতু মনে সাহস ফিরে পায়। তবে ওই সবই ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন ছিল?
মা হেসে বলে- কিন্তু তুই কেকটা কখন এভাবে খুবলে খেয়ে প্রায় শেষ করলি? তোর পেটে ঠিক রাক্ষস-খোক্ষস ঢুকেছে!
বিস্ফোরিত অবাক চোখে মিতু দেখল কেকের অর্ধেকই প্রায় নেই। তবে ওই সব কী করে স্বপ্ন হয়? মিতু বলে- একটু কেকও আমি খাইনি মা।
– তাই? তবে?… অবাক কণ্ঠে এটুকু বলেই মা সামনে তাকিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন। স্বগোতোক্তির মতো ফের বলেন- ওহহো, কোণের ছোট জানালাটা তো খোলাই আছে দেখি। তবে আরকি? পাশের বাড়ির নচ্ছার পাজি কালো হুলো বেড়ালটা ভেতরে ঢুকেছিল, চোর কে এবার বুঝছি।
মা বুঝলেও মিতু কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না। কালোকুলো ছায়াটা, হালুম ডাকা বেড়াল, পালকের বদলে ফুলের ডানা সাদা পাখি এসবই কি তবে স্বপ্ন?

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়