ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮ জনের, নতুন রোগী ১৭০৮

আগের সংবাদ

নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত : ক্ষণগণনা শুরু > রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ ৫ নভেম্বর > তফসিল ১৪ নভেম্বর, ভোট ৭ জানুয়ারি

পরের সংবাদ

বিশ্বের সবচেয়ে দামি বই

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির নাম শুনলে প্রথমেই মনে পড়ে তার কালজয়ী সৃষ্টি ‘মোনালিসা’ এবং ‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর কথা। কিন্তু ছবি আঁকা ছাড়াও এই বহুমুখী প্রতিভাধরের খ্যাতি ছিল একজন যুগান্তকারী বিজ্ঞান চিন্তাবিদ হিসেবে। তিনি তার নতুন নতুন বিজ্ঞানের চিন্তাভাবনাগুলোকে একের পর এক লিখে রচনা করেছেন সর্বমোট ৩০টি বই। তবে সেগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বিখ্যাত হলো- কোডেক্স লেস্টার।
বইটি লেখা হয়েছে বেশ দুর্বোধ্য প্রাচীন ইতালীয় ভাষায়। ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত এই নোটবইটি ১৯৯৪ সালের ১১ নভেম্বর নিউইয়র্কের ‘ক্রিস্টিজ নিলাম’ সংস্থায় নিলাম করা হয়। বইটি শেষমেশ কিনে নেন তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষ- বিল গেটস। তিন কোটি আট লাখ ডলার দিয়ে। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমানে যার মূল্যমান প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিল গেটস কিনে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই বইটি অর্জন করে নেয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি বইয়ের খেতাব।
বইটি কেনার পর মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলছিলেন, ‘আমি মানুষটির ভক্ত ছোটবেলা থেকেই। অনন্য এক মানুষ ছিলেন তিনি, তার মস্তিষ্ক এমন সব বিষয় ভাবত, যা আর কেউ ভাবেনি, তার মন এমন কিছু খুঁজত যা আর কেউ খোঁজেনি।’
১৫০০ খ্রিস্টাব্দে রচিত বইটি গুরুত্বপূর্ণ সব বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর তথ্যচিত্রে ভরপুর। ফসিল থেকে শুরু করে চাঁদের আবর্তন পর্যন্ত। ভিঞ্চি ছিলেন বাঁ হাতি। পাতার ডানদিক থেকে লেখা শুরু করতেন আর মাঝে মাঝেই ছবি এঁকে বুঝতে চাইতেন, যা ভাবছেন সেটি বাস্তবভিত্তিক কি না। ১৭টি ভাঁজ করা পৃষ্ঠার দুই পাশে এবং প্রতিটি পৃষ্ঠার উভয় পাশে মোট ৭২ পৃষ্ঠাজুড়ে তিনি বিজ্ঞান ও চিত্রকলার এক চমৎকার সংস্রব ফুটিয়ে তুলেছেন। জ্যোতির্বিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি এতে বর্ণিত হয়েছে কীভাবে বহুকাল ধরে একটি দেহাবশেষ ক্রমান্বয়ে ফসিলে রূপান্তরিত হয়, নদীর গতিবিধি কীভাবে পরিবর্তিত হয়। চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর আবর্তন কীভাবে ঘটে। পূর্ণিমা ও গ্রহণ-এর ব্যাখ্যাসহ আরো মূল্যবান সব তথ্য। এছাড়া জগদ্বিখ্যাত এই চিত্রকর বইটিতে ডুবোজাহাজ ও বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ১৫০৮ থেকে ১৫১০ সালের মধ্যে এই মূল পাণ্ডুলিপিটি তৈরি হয় বলে জানা যায়।
ভিঞ্চির মৃত্যুর পর ১৭১৯ সালে বইটির মালিক হন থমাস কোক। প্রথমে এই নোটবুকে কোনো নাম ছিল না বিধায় তিনি এর নাম দেন ‘কোডেক্স’। পরে ১৯৮০ সালে একজন ধনী শিল্পপতি-সংগ্রাহক আরমান্ড হ্যামার বইটি কিনে নেন এবং পুনরায় এর নাম দেন ‘কোডেক্স হ্যামার’ যা এখন ‘কোডেক্স লেস্টার’ নামে পরিচিত।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই নোটবইটি এমনভাবে লেখা, দুর্বোধ্য প্রাচীন ইতালীয় ভাষাটি লিখতে এবং পড়তে জানলেও সরাসরি পড়া যাবে না। দ্বারস্থ হতে হবে আয়নার। কারণ শুধু আয়নায় ফুটে ওঠা প্রতিফলন দেখেই এই বইটি পড়া যায়।
১৯৮০ সালে আর্মান্ড হ?্যামার নামের এক সংগ্রাহক এই নোটবইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। বিল গেটস এই বইটি কিনে নেয়ার পর বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠা ডিজিটাল স্ক্যান করে একটি সিডি-রম ভার্সন বের করা হয় ১৯৯৭ সালে। বইটি যাতে আগ্রহী লোকজন চাক্ষুষ করতে পারেন, সে জন্য বছরে একবার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত জাদুঘরগুলোতে এই বইটি প্রদর্শিত হত। তবে বেশ কিছু দিন হলো, বইটি আমজনতার পড়ার জন্য অনলাইনে একেবারে বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। দামি আরো কয়েকটি বই : ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূলকপি বিক্রি হয়েছে ৪৩.২ মিলিয়ন ডলারে। ইউয়ান রাজ্যের শিল্পী ঝাও মেংফুর (১২৫৪-১৩২২) লেখা চিঠি বিক্রি হয়েছে ৩৮.২ মিলিয়ন ডলারে ২০১৯ সালে। বুক অব মরমন (১৮৩০) বিক্রি হয়েছে ৩৫ মিলিয়ন ডলারে ২০১৭ সালে। সং রাজ্যের পণ্ডিত জেং গংয়ের লেখা চিঠি বিক্রি হয়েছে ৩১.৭৩ মিলিয়ন ডলারে ২০১৬ সালে। কোডেক্স লেস্টার বিক্রি হয়েছে ১৯৯৪ সালে ৩০.৮০ মিলিয়ন ডলারে, বর্তমানে যার মূল্যমান ৫৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি। তাই গবেষকরা বলছেন, কোডেক্স লেস্টারই পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দামি বই।

– সিদ্ধার্থ সিংহ ও আহমেদ শাকিল

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়