নার্ভাস নাইনটিতে সবজির দাম

আগের সংবাদ

তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে

পরের সংবাদ

দুর্গা প্রতিমার কাঠামোয় ‘কলা-বউ’

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমরা সবাই দেখেছি দুর্গা প্রতিমার কাঠামোয় ডানপাশে একটি কলাগাছকে লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরিয়ে ‘বউ’য়ের মতো করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। প্রচলিত কথায় তাকেই বলা হয় ‘কলা-বউ’।
কিন্তু কে এই কলা-বউ? অনেকের ধারণা, তিনি গণেশের স্ত্রী। কিন্তু এ ধারণা ভুল। আর কেবল কলাগাছ নয়, নয়টি গাছ-লতা একত্র রয়েছে কলা-বউতে। এ কারণে একে বলা হয় নবপত্রিকা।
নবপত্রিকা বৃক্ষ বা শস্যদেবী। পুরাকালে শাকম্ভরী নামে এক দেবীর পূজা করা হতো। তিনি শস্যদেবী।
নবপত্রিকা সম্পর্কে একটি সংস্কৃত শ্লোক আমরা দেখতে পাই ‘পুরোহিত দর্পণ’ নামক গ্রন্থে। তা হলো :
রম্ভা কচ্চী হরিদ্রাচ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ।
অশোকা মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা\
রম্ভা (কলাগাছ), কালো কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু এবং ধান- এগুলোই হলো নবপত্রিকা।
দেবী পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে :
ওঁ কদলী তরু সংস্থাসি বিষ্ণোর্বক্ষস্থলাশ্রয়ে।
নমস্তে নবপত্রিকা ত্বং নমস্তে চণ্ডনায়িকে \১
ওঁ কচ্চী ত্বং স্থাবরস্থাসি সদা সিদ্ধিপ্রদায়িনী
দুর্গারূপেণ সর্বত্র স্নানেন বিজয়ং কুরু \২
ওঁ হরিদ্রে হররূপাসি শঙ্করস্য সদাপ্রিয়ে।
রুদ্ররূপাসি দেবী সর্বশান্তিং প্রযছমে \৩
জয়ন্তী জয়রূপাসি জগতাং জয়কারিণী।
স্নাপয়ামীহ দেবী ত্বাং জয়ং দেহি গৃহে সম \৪
ওঁ শ্রীফল শ্রীনিকেতোহসি সদা বিজয়বর্দ্ধন।
দেহি মে হিতকামাংশ্চ প্রসন্নো ভব সর্বদা \৫
ওঁ দাড়িম্যঘœ বিনাশায় ক্ষুণ্নাশায় সদা ভুবি।
নির্মিতা ফলকামায় প্রসীদ ত্বং হরিপ্রিয়ে \৬
ওঁ স্থিরা ভব সদা দুর্গে অশোকে শোকহারিণী।
ময়া ত্বাং পূজিতা দুর্গে স্থিরা ভব ভবপ্রিয়ে \৭

একেক বৃক্ষ বা লতায় দেবীর একে রূপ বর্ণিত।
কলাগাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চণ্ডনায়িকা বা ব্রহ্মাণী, কচুগাছে দুর্গা, হরিদ্রা বা হলুদগাছে দেবী রুদ্ররূপা, জয়ন্তী লতায় দেবী জয়রূপা, ডালিম্বে দেবী হরপ্রিয়া, অশোকে শোকহারিণী, শ্রীফলে (বেল গাছ) দেবী দুর্গা, মানকচুতে মহাদেবী এবং ধান্যে দেবী ল²ী।
কোন বৃক্ষে বা লতায় কোন দেবী বা দেবের অবস্থান তা নিয়ে মতদ্বৈততা রয়েছে। আসলে আরণ্য ও কৃষি সভ্যতায় এবং পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষলতার মূল্য প্রাচীন ভারতে ঋষি-দার্শনিকরা উপলব্ধি করেছিলেন। তাই তারা একে একে বৃক্ষ বা লতায় একেক দেব বা দেবীর অধিষ্ঠান ভাবাবেগে সন্দর্শন করেছেন এবং দেবতার অধিষ্ঠানকে সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের পরোক্ষ পরামর্শ দিয়েছেন।
ব্রহ্মাণী ব্রহ্মের শক্তিরূপে পূজিতা। একটি মতে এই ব্রহ্মাণীই চণ্ডনায়িকা। প্রচণ্ড তার শক্তি, তাই তার নাম চণ্ডনায়িকা। তিনি সংহার করেন অপশক্তি বা অসুরকে। রক্ষা করেন সুর বা কল্যাণকে। ব্রহ্মাণী কিন্তু ব্রহ্মার স্ত্রী নন। বরং পরম ব্রহ্মের শক্তি হচ্ছেন ব্রহ্মাণী।
কচুগাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা। কচুগাছও আমাদের নানা উপকারে আসে। তাই এর সংরক্ষণও দরকার। নবপত্রিকায় কচুগাছ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই সত্যই প্রতিভাত হয়েছে। হরিদ্রা বা হলুদগাছে দেবী রুদ্ররূপা। বাগ্বেদে একজন ‘দেব’ আছেন, তার নাম রুদ্র। পৌরাণিক যুগে রুদ্র এবং শিব একীভূত হয়ে যান। ‘রুদ্র’ মানে উগ্র, ভীষণ, সংহারক। রুদ্ররূপা মানে দেবীর উগ্ররূপ বা সংহারক রূপ। দুষ্টের দমনে তিনি এ উগ্ররূপা বা রুদ্ররূপা হয়ে যান। জয়ন্তীলতায় দেবী জয়রূপা। ‘জয়রূপা’ দেবী। তিনি কখনো পরাজিত হন না। জয়রূপা দেবীর কৃপায় ভক্ত জয়লাভ করবে- এ মানসেই দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভক্ত শক্তি ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করেন। নবপত্রিকার জয়ন্তী লতা থেকে এ আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ওঠেন। আসুরিক শক্তি তখন তার কাছে পরাজিত হয়। তবে এ আসুরিক শক্তি কেবল বাইরের নয়, প্রতিটি মানুষের অন্তরে যে আসুরিক শক্তি বা পশুশক্তি রয়েছে, তাকে পরাজিত করার শিক্ষা আমরা জয়ন্তী লতার অধিষ্ঠাত্রী দেবীর কাছ থেকে পাই।
দাড়িম্ব বা ডালিমে দেবী হরপ্রিয়া- ‘হর’ মানে শিব। হরপ্রিয়া শিবের প্রিয়া- দেবী দুর্গা বা কালী। অশোকে শোকহারিণী- যে দেবী আমাদের শোক দূর করে, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। এদিক থেকে দেবী শোকহারিণীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানুষ যদি শোক ভুলতে না পারত, তাহলে তাদের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হতো। শ্রীফল বা বেলে দেবী দুর্গা, মানকচুতে মহাদেবী এবং ধান্যে দেবী ল²ী। ল²ীও একজন দেবী। তিনি ধনৈশ্বর্যের দেবীরূপে পূজিতা। এই হলো ‘নবপত্রিকা’। নয়টি রূপে মহামায়ারই ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতির সজীবতা, সবুজের- পরিবেশের সংরক্ষণ, প্রয়োজনীয় বৃক্ষলতার বৈচিত্র্য সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সুতরাং পরিবেশ সংরক্ষণের প্রেরণা ও প্রয়োজনীয়তা নবপত্রিকার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। আধুনিক সমাজ ও বিজ্ঞানীরা পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা শোনাচ্ছেন। প্রতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে বৃক্ষরোপণ দিবস বা সপ্তাহ, অতি প্রাচীনকালের বাংলায় তথা ভারতে তা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত রূপে উদযাপিত হয়। এ প্রাগ্রসর চিন্তাটি প্রকৃত অর্থেই প্রশংসার যোগ্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়