হেরোইন উদ্ধার মামলা : পাকিস্তানি নাগরিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

আগের সংবাদ

রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষণ নেই, নির্বাচনের প্রস্তুতি ইসির : ডিসি এসপিদের নিয়ে ইসির বৈঠক > ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় মাঠ প্রশাসন

পরের সংবাদ

ইতিহাসের সাক্ষী তারাও

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছিলেন রাজনীতির এক কবি। মনের তুলিতে এঁকেছিলেন স্বাধীন বাংলার ছবি। তার ভাষণে জাদু আছে, আছে স্বদেশপ্রীতি। স্বাধীন বাংলায় আজো রচিত হয় তার নামেতে গীতি। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ, তার আদর্শ, তার ভাষণ আজো গেঁথে আছে কোটি মানুষের হৃদয়ে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’। শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ১৩ অক্টোবর। ঐতিহাসিক এই সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন দেশের জনপ্রিয় সব অভিনয়শিল্পী। এই সিনেমাটির অংশ হতে পেরে শিল্পীদের অনুভূতি কী ছিল সেই কথাই জানাচ্ছেন মেহেরা রহমান সিমরান

আরিফিন শুভ
আমাকে যখন এই সিনেমার জন্য ডাকা হয়, তখন আমি গল্পটাও জানতে চাইনি। কারণ নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আমার জন্য যথেষ্ট কাজটি করার জন্য। আমি এমন একটা মানুষের চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছি, যিনি লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে একটি দেশকে স্বাধীন করেছেন। আর এই সিনেমার পর যদি আমি মরেও যাই বা আর কোনো সিনেমা করতে না পারি, তাতেও কোনো আক্ষেপ থাকবে না। আর এর আগে সবসময় কাল্পনিক চরিত্রে কাজ করেছি। রক্ত-মাংসের একজন, একটা বাস্তব সত্য ঘটনায় এই প্রথম কাজ করলাম। তাও এমন একটা চরিত্র, যিনি বাঙালির কাছে প্রচণ্ড আবেগের। যারা ওনাকে বেডরুমে দেখেছেন, ডাইনিং টেবিলে দেখেছেন, গভীর রাত-ভোর রাতে দেখেছেন, তারাও এই ছবিটা দেখেছেন এবং আমাদের সবার কাজে অত্যন্ত খুশি। এই ছবিতে যদি আমাকে পাসিং শট দিতে বলত, কিংবা স্পটবয়ের কাজও করতে বলত, তাও করতাম। কারণ শ্যাম বেনেগাল স্যারের সিনেমা, আর বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক, এমন সিনেমার অংশ হতে পারাই বড় ব্যাপার। আর এই ছবিতে যুক্ত হওয়ার সময় থেকেই আমি জানতাম অনেক কথা হবে, তবে আমার পক্ষে যতটা সম্ভব, যতটা সম্ভব না, সবই করার চেষ্টা করেছি। আপনারা যদি আমাদের গল্প, মানে আপনাদেরই গল্পটার ঠিকঠাক প্রচারণা করেন, মুজিবরে আর ঠেকায় কে, আর দাবায় রাখা যাবে না।

নুসরাত ফারিয়া
প্রত্যেকটা মেয়ের মধ্যেই একটা করে হাসিনা রয়েছে। আর এই জিনিসটা রপ্ত করেই পর্দাতে ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। এই সিনেমার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটা মুহূর্তই আমার কাছে অনেক বেশি সুন্দর। প্রথমবার যখন সিনেমার শুটিংয়ে গিয়েছিলাম প্রথমবার যখন আমাকে সেই উইগটা পরানো হয়, ওই লেন্সটা আমাকে পরানো হয় এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মতো যখন আমাকে সেই লুকটা দেয়া হয়, তখন আমার সেটের সবাই লুকটা খুব পছন্দ করেছিল আর শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলব স্ক্রিন টাইম কতটুকু ছিল সেটা ব্যাপার না কিন্তু এই চরিত্রটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর প্রত্যেকটা চরিত্রই একটা ইতিহাস। মুজিব সিনেমাটির প্রস্তাব আসা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত খুব সুন্দর একটা সফর শেষ করলাম। সবাই অনেক পরিশ্রম করেছেন এই সিনেমার জন্য। টরন্টোতে যখন সিনেমাটির প্রিমিয়ার হয় তখন সবাই দারুণ প্রশংসা করেছেন। শো শেষ হওয়ার পর আমরা সবাই অনেক আবেগী হয়ে পড়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। এটা ব্যক্তিগতভাবে এবং একইসঙ্গে আমার ক্যারিয়ারের জন্য একটা বিশাল অর্জন। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এ সিনেমার একটা অংশ হতে পারা। কারণ এ সিনেমায় এমন অনেকেই আছেন যারা মাত্র এক মিনিটের জন্য এর কোনো একটা অংশে অভিনয় করেছেন। কিন্তু যে মুহূর্তগুলো আমরা পুনরায় অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছি, সেগুলোর মূল্য অনেক।

চঞ্চল চৌধুরী
একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে কোনো বায়োপিকে অভিনয় করা। আমরা যখন কোনো নতুন চরিত্রে অভিনয় করি, তখন সে চরিত্রটি দর্শকের কাছে আমি যা করব দর্শক সেটাই মেনে নেয়। কিন্তু এরকম কোনো বিখ্যাত মানুষের বায়োপিকে যখন কেউ অভিনয় করতে যায়, তখন ব্যাপারটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমি এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরেছি- এটাই সবচেয়ে বড় কথা। ইতিহাসের একটা অংশ হতে চেয়েছিলাম, সেই সাধনা পূরণ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এর আগে এত বড় কাজ হয়নি। সবচেয়ে বড় কাজটির সঙ্গে আছি তাই অনেক বেশি ভালো লাগছে।

ফজলুর রহমান বাবু
মুজিব সিনেমাটা বাংলাদেশের ইতিহাস। এখানে বঙ্গবন্ধুর জীবন, তার জীবনের ভয়াবহ ট্র্যাজেডি, দেশের প্রতি তার আত্মত্যাগসহ সবকিছুই ফুটে উঠেছে। এই সিনেমায় আমি সবচেয়ে ঘৃণ্য চরিত্রে অভিনয় করেছি, কিন্তু বাস্তব জীবনে আমি এত খারাপ লোক না। একজন অভিনেতাকে নানান চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। আর আমি যে চরিত্রটি করেছি সেই মানুষটিকে আমি নিজেও অনেক ঘৃণা করি। কিন্তু একজন অভিনেতা হিসেবে এই চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। একজন ষড়যন্ত্রকারী কি করে, কতটুকু খায়, কতটুকু ঘুমায়, কীভাবে ভাবে, তার চিন্তা ভাবনাটা কি, সেগুলো বুঝে অভিনয় করতে হয়। সেই জায়গা থেকে টেকনিক্যাল অভিনয় করার চেষ্টা করেছি। পরিচালক থেকে শুরু করে এই সিনেমায় যারাই অভিনয় করেছেন প্রত্যেকেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। মুজিব আমাদের আবেগ, আমাদের ভালোবাসা। সেই জায়গা থেকেই আমরা কাজটা করেছি। আর একজনের বায়োপিকে কাজ করা খুবই কঠিন একটা কাজ। কারণ এর আগে আমরা কাজ করেছি একজন স্ক্রিপ্ট রাইটারের সৃষ্ট গল্পে। সত্যিকারের মানুষের চরিত্রে অভিনয় করিনি। তাই কাজটাও সবার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল।

নুসরাত ইমরোজ তিশা
বঙ্গবন্ধুর কথা সবাই জানেন, কিন্তু ফজিলাতুন নেছার কথা খুব বেশি অনেকেই জানেন না। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বঙ্গবন্ধু যখন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে জেলে ছিলেন তখন বেগম মুজিব তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। পরিবারের দেখাশোনা করেছেন ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফজিলাতুন নেছা অসাধারণ সব কাজ করেছেন। আমি মনে করি এই সিনেমার মাধ্যমে মানুষ দারুণ একজন মহীয়সী নারীকে চিনবে ও জানবে। তার কাজ ও ত্যাগ সম্পর্কে জানতে পারবে।

জায়েদ খান
ঐতিহাসিক এই সিনেমায় টিক্কা খানের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে আজীবন টিকে থাকব। স্ক্রিনে আমার উপস্থিতি স্বল্প, কিন্তু অনেকের কাছেই শুনেছি যখনই আমার দৃশ্য পর্দায় আসে তখন সবাই চিৎকার ও তালি দেয়া শুরু করেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। মুজিব সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আমি মুম্বাইতে অডিশন দিতে গিয়েছিলাম। তখনই চূড়ান্ত হয়েছিলাম। ১ টাকায় সিনেমাটি সাইন করেছি। সেই সময়টা আমার জীবনের সেরা একটি মুহূর্ত। এই সিনেমাটার অংশ হতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এটি আমার জীবনের সেরা একটি প্রাপ্তি। কারণ আমি একটি ইতিহাসের সঙ্গে নাম লেখালাম। এছাড়াও সবচেয়ে সৌভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসে ছবি দেখা এবং তিনি সম্পূর্ণ ছবিটা দেখেছেন এ অনুভূতি অবর্ণনীয়। সারাজীবন এই ছবিতে জায়েদ খান বেঁচে থাকবে, এটা আমার জীবনে বড় পাওয়া। মুজিব সিনেমাটির মাধ্যমে টিক্কা খান হিসেবে আমি দর্শকের মনে আজীবন বেঁচে থাকব।

প্রার্থনা ফারদিন দীঘি
আমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক শুনেছি কিন্তু বঙ্গমাতা সম্পর্কে খুব একটা জানি না। উনি যে কীভাবে বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছায়ার মতো কাজ করেছেন এগুলো আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। এই সিনেমার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব কীভাবে বঙ্গমাতা সবসময় বঙ্গবন্ধুর পেছনে কাজ করেছেন। দেশ স্বাধীনের পেছনে বঙ্গমাতার অবদান অনেক বেশি। আর আমি বঙ্গমাতার ছোটবেলার চরিত্রটা করেছি। তার ১৩-১৭ বছরের সময়টা আমার অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে। আর এই চরিত্রটা করতে পেরে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমাকে যখন অডিশনে ডাকা হয়, আমার বিশ্বাসই হয়নি যে ‘মুজিব’ ছবির জন্য ডাকা হয়েছে। বাবার হাত ধরে অডিশনে গিয়েছিলাম, আমি মোটেও কনফিডেন্ট ছিলাম না। তবে বাবা আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরপর যেদিন ফোন পাই, সেদিন বাবাকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছিলাম। আমার সঙ্গে বাবাও একটা চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন, কিন্তু তার সিলেকশন হয়নি। কিন্তু আমার খুশিতেই অনেক বেশি আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন। অনেক উচ্ছ¡সিত আমি। অনেক উত্তেজনা কাজ করছে। এটি কেবল সিনেমা নয়, একটা জাতির ইতিহাস। আমিও ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলাম রেণুর চরিত্রে অভিনয় করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়