ডেঙ্গু পরিস্থিতি : ১৩ জনের মৃত্যু আক্রান্ত ২৪২৫

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের নতুন কর্মসূচি : রাজপথ পাহারা দেয়া, দল চাঙ্গা রাখার লক্ষ্য

পরের সংবাদ

৩৩৫ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ এখন মরণফাঁদ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম নাহিদ, ভোলা থেকে : মেঘনার ভাঙন থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা ও টেকসই উন্নতি সাধন করার স্লোগান নিয়ে ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভোলা শহর রক্ষা বাঁধ মাত্র তিন বছর যেতে না যেতেই মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মাত্র ২২ দিনের মাথায় ২ দফা সিসি ব্লক ধসে একজনের মৃত্যুসহ গুরতর আহত হয়েছেন অনেকে। ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আপদকালীন ধস ঠেকাতে অপরিকল্পিত জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, বর্ষায় পাউবোর শহররক্ষা বাঁধ ধসে মেঘনার পানি ঢুকে শহর প্লাবিত হওয়ার ও বহু মানুষ হতাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরজমিন গিয়ে জানা যায়, ৭ জানুয়ারি ২০১৭ সালে ভোলা শহরকে রক্ষা করার জন্য রাজাপুর ইউনিয়নের তে মাথা থেকে পূর্ব ইলিশা ইউপির দালালকান্দি পর্যন্ত ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইনফ্রাটেক-এনজেডকে(জেভি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের চার গ্রুপের কাজ পায়। ৪ বছরে প্রকল্পটির আরো ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়ে মোট ৩৩৫ কোটি টাকায় সমাপ্ত করে। প্রাথমিকভাবে ২৮ লাখ ৮০ হাজার সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরি করে অবশিষ্ট ৯০ হাজার ব্লক অতিরিক্ত রেখে আপদকালীন সংস্কার করার কথা ছিল। কিন্তু ৩ বছর পর ভোলা শহররক্ষা বাঁধের উল্লেখিত পয়েন্টে মাত্র ২২ দিনের মাথায় ২ দফায় সিসি ব্লক ধসে পড়ে সাধারণ পথচারি হতাহত হলে পাউবো আপদকালীন সংস্কারের জন্য লোকাল বালি দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করে, অথচ অতিরিক্ত সেই ৯০ হাজার সিসি ব্লকের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। অনদিকে ইমারজেন্সি জিও ব্যাগ ডাম্পিং নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অভিযোগ রয়েছে। তারা বলছেন, ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং, মের্সাস ড্রিম হোম ও মের্সাস স্মৃতি এন্টারপ্রইজের মাধ্যমে পাউবো প্রায় ২২ কোটি টাকার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের যে কাজ করছে তা অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত মনিটরিংয়ের কারণে শহররক্ষা বাঁধের কোনো কাজেই আসবেনা। পাউবো শুধু শুধু রাষ্ট্রের অর্থ জলে ফেলেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিনিধি খোকন দেবনাথের কাছে ডাম্পিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করেন। পরে তার সম্পৃক্ততার বিষয় স্বীকার করে বলেন, আমরা কাজে কোনো অনিয়ম করছিনা। সব কিছু ঠিকঠাক মতোই হচ্ছে। ইলিশা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির পক্ষে অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম ও সাংবাদিক ইয়ামিন হোসেন বলেন, উত্তাল মেঘনার ভাঙনের কবল থেকে ভোলা শহরকে রক্ষা করার জন্য তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী অতিরিক্ত ৯০ হাজার ব্লকের হদিস, প্রকল্পের অনিয়মের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কোনো কর্মকর্তা জড়িত এবং তৎকালীন জেলা প্রশাসক কিসের প্রলোভনে ভোলার মেঘনাকে বালু দস্যুদের কাছে ইজারা দিয়ে কাদের পকেট ভারি করার দায়িত্ব নিলেন তার সঠিক তদন্ত করে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। আমরা ভোলার ভাঙনকবলিত মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনিই পারেন আমাদের এই ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে।
ভোলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বির চৌধুরী বলেন, যতদিন এই প্রকল্পটির তদারকি ড. কাজী তোফায়েল অহমেদ করেছেন ততদিন কাজের মান ভালোই ছিল। যখন একটি দুর্নীতিবাজচক্র তাকে সরিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মিলে কাজটি করেছেন তখন ভোলা শহর রক্ষাবাঁধটির স্থায়িত্ব নিয়ে ভোলাবাসীর মনে শঙ্কা জাগে। এখন যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমরা আশা করব সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভোলার সবগুলো বেড়িবাঁধ প্রকল্পের কাজের জন্য তদন্ত কামিটি গঠন করে বা দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করে এর সঠিক ব্যবস্থা নিয়ে ড. তোফায়েলদের মতো কর্মকর্তা বা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজ করে ভোলাকে নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ নিয়ে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগকারীদের সব তথ্য মিথ্যা, আপদকালীন কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ম. হাসানুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, ৯০ হাজার অতিরিক্ত ব্লক রাখার কথা ছিল। কিন্তু জমির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। সিসি ব্লকের পাড় দখলের বিষয়ে কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়েছি কিন্তু কেউ কথা শুনে না। কেউ নিষেধ না মানলে আমাদের কি করণীয় আছে। আর আপদকালীন জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। আমরা সার্বক্ষনিক বিষয়টি মনিটরিং করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়