প্রস্তুতি ম্যাচ : ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের হার

আগের সংবাদ

রাজনীতিতে সমঝোতার উদ্যোগ! : বৈরিতার পারদ নিম্নমুখী, আ.লীগের ৫ সদস্যের কমিটি, প্রতিনিধি দল গঠন করছে বিএনপি

পরের সংবাদ

আটার রুটি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ভালো ছাত্র হিসেবে স্কুলজুড়েই খুব সুনাম রকির। ক্লাসের ফার্স্ট বয় সে। পরীক্ষায় তার অবিশ্বাস্য নম্বর দেখে স্যাররা খুব গর্ববোধ করেন। অবশ্য রকি নিজেও তার এই সুখ্যাতি নিয়ে বেশ গর্বিত। ভালো ছাত্র হওয়ার কারণে রকির মধ্যে এক ধরনের অহংকার আছে, যা তার ক্লাসের অনেকেই পছন্দ করে না। ওদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে রকির কোনো মাথাব্যথা নেই। রকিকে কেউ অহংকারী বললে সে তাকে জব্দ করে ছাড়ে। ধমক দেয়। স্যারদের কাছে নালিশ দেয়। অহংকারী বলার কারণে সে ইতোমধ্যে স্যারের কাছে নালিশ দিয়ে নাজিম, পলাশ, শাহেদ, তিতাস, পারভেজকে মাইর খাইয়েছে। ওরা এখন রকির সঙ্গে কথা বলে না। তবে রকিকে তাদের ক্লাসের ফয়সাল খুব পছন্দ করে। বন্ধু ভাবে। কিন্তু রকি ফয়সালকে তেমন পাত্তা দেয় না। কারণ ফয়সালরা অনেক গরিব। তার বাবা গোয়ালা। দুধ বেচে সংসার চালায়। যে ফয়সালের গায়ের অল্প দামের জামাগুলো দেখলে রকি নাক সিটকায়, সেই ফয়সাল যখন বন্ধু দাবি করে- তখন রকির খুব রাগ হয়।
রকির মতো ফয়সালও টিফিন বক্সে করে রোজ স্কুলে খাবার আনে। তবে রকির টিফিন বক্সে দামি দামি খাবার থাকলেও ফয়সালের টিফিন বক্সে অতি সাধারণ খাবার থাকে। সেটা হচ্ছে সামান্য পরিমাণে আলু ভাজা ও দুটো আটার রুটি। রকি প্রতিদিন টিফিনের যে খাবার আনে, সেগুলো খুবই উন্নত। নুডলস, পায়েস, পিঠা এমনকি চিকেন ফ্রাইও থাকে রকির টিফিনের ম্যানুতে। ফয়সাল রকির সেসব উন্নত খাবারের কথা জানে। ওই উন্নত খাবারগুলোর সঙ্গে যখন সে নিজের টিফিনের আটার রুটির তুলনা করে, তখন খারাপ লাগে না। এইটুকু বয়সেই ফয়সাল বোঝে- তার বাবা যদি রকির বাবার মতো নামকরা ব্যারিস্টার হতেন, তাহলে তার মাও টিফিন বক্সে রকির মায়ের মতোই ওই দামি দামি খাবার ভরে দিতেন।

২.
টিফিন পিরিয়ডে রকি ব্যাগ খুলে দেখে তার টিফিন বক্স নেই। মনে পড়ে, তাড়াহুড়া করে স্কুলে আসার সময় ভুলে টিফিন বক্সটি রেখে এসেছে। কী হবে এখন! না খেয়েই যে থাকতে হবে।
এদিকে ফয়সাল পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য তার মায়ের দেয়া টিফিন বক্সের আটার রুটিগুলো আলু ভাজা দিয়ে খেতে খেতে লক্ষ করল রকি না খেয়ে বসে আছে।
– কিরে রকি, তোর টিফিন বক্স কই? খুলে বের করে খাচ্ছিস না যে?
– ভুল করে বাসায় ফেলে এসেছি।
– ইশ। আচ্ছা এখন তো কিছু করার নেই। তুই আমার থেকে টিফিন খেতে পারিস।
– কী খাবার এনেছিস তুই?
– আটার রুটি।
– ওয়াক থু। এটা আমরা খাই না।
রকি এক ধরনের অবহেলা করছে জেনেও ফয়সাল নিজের দুটি রুটি থেকে একটা তার দিকে এগিয়ে দিল। রাগে-ক্ষোভে আটার রুটিটা ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে ক্লাসের জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল রকি। এরপর নাক-মুখ খিঁচিয়ে বলল- তোকে না বলেছি এসব কুখাদ্য আমরা খাই না। আবার দিচ্ছিস কেন?
রকির আচরণে ফয়সাল কিছুটা হতবাক হয়ে গেল। তারপর বলল- কাজটি ঠিক করিসনি রকি। তোকে আমি বন্ধু মনে করি, সেই দায় থেকে খাবারটা দিলাম। কিন্তু তুই আমাকে অপমান করেছিস।
রকি তেড়ে এসে বলল- যা, এখান থেকে ভাগ।
ফয়সাল আর কথা বাড়ায় না। মনটা ভীষণ খারাপ হয় তার।

৩.
বাড়িতে এসে স্কুলের ঘটনাটা মনে হতেই ফয়সাল মন খারাপ করে বসে রইল। বিকাল বেলা তখন। আটার রুটি খেতে দেয়ায় রকির সেই আচরণ প্রমাণ করে দিল ফয়সালরা কত গরিব। আর গরিবের খাবার হচ্ছে আটার রুটি।
কিন্তু মনের বিষণ্নতাকে প্রশ্রয় দেয়ার ছেলে নয় ফয়সাল। রকির সব অবহেলাকে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে ফয়সাল তার ফুটবল নিয়ে ছুটল মাঠের দিকে। রোজ বিকালে মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলা ফয়সালের এখন অভ্যাসে গড়িয়েছে।
ফুটবল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতেই পথে দেখা রকির সঙ্গে। রকিকে এই মহল্লায় দেখে ফয়সাল কিছুটা অবাক।
– রকি, তুই আমাদের পাড়াতে?
– তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। আমাকে ক্ষমা করে দে।
– কীসের ক্ষমা?
– স্কুলে তোকে আটার রুটির ব্যাপারে খুব অভদ্র আচরণ করেছি। কাজটা খুব অনুচিত হয়েছে।
– ইয়ে মানে…
– খাদ্য হচ্ছে স্রষ্টার দান। এই নিয়ে ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ নেই। তুই আমাকে ক্ষমা করে দে ফয়সাল।
– নিজের ভুল যখন বুঝতে পেরেছিস, তখন আর ক্ষমা চাইতে হবে না। আর ক্ষমা চাইতে হলে একটা শর্ত আছে। তুই যদি আমাকে বন্ধু ভাবিস, তবে ক্ষমা করে দেব।
– আমি তো এসেছি তোর বন্ধু হতে। গুরুত্ব না দেয়ার পরও তুই যে আমাকে বেশ মূল্যায়ন করিস, এটা আমি সব সময় খেয়াল করি। কিন্তু আজকে আটার রুটির ঘটনায় আমি খুব লজ্জিত।
– ধুর। বন্ধুর কাছে লজ্জাবোধ করতে নেই। অনুশোচনা করতে হবে না তো। চল মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলব দুই বন্ধু।
রকি না করেনি। ফুটবল খেলতে মাঠের দিকে পা বাড়ায়। আজ থেকে ওরা একে অন্যের বন্ধু।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়