গণপিটুনি থেকে বাঁচতে ৯৯৯-এ চোরের কল

আগের সংবাদ

পরিবারের আড়ালে তৎপর দল > খালেদার বিদেশযাত্রা : আলোচনায় জার্মানি > আশাবাদী দল ও পরিবার > অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

সংশপ্তক শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩ , ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলার ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাঙালি ভূমিসন্তানের বিজয়ের ইতিহাস। এই ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে যে আপাত-পরাজয়ের ক্ষণিক কুহকের দেখা মেলে, তাকে পেছনে ফেলে প্রত্যহ পৌনঃপুনিক উদয় ঘটছে দিনমণির। মহাকালের আদিহীন অন্তহীন বিস্তারের কাছে দশক বা শতক বা অযুত-নিযুত জাতীয় কালসন্ধি নিতান্তই ক্ষণজীবী। ইতিহাসপূর্ব কাল থেকে বাংলা ও বাঙালির সম্মুখযাত্রার ইতিবৃত্তও সেই কথারই সাক্ষ্য দেয়।
রাজা যায় রাজা আসে, প্রজা যায় প্রজা আসে, কিন্তু মানুষ বা প্রাণী যদিও সীমিত পর্যায়ে কালবন্দি জীবনের পর্যটক, তার শক্তিমত্তা সর্বপ্রাণবাদের প্রবহমানতায় চিরমুক্ত। এই হচ্ছে সীমিত কালিক জীবনে প্রাণের অনন্ত বহমান সত্তার আলোক-উদ্ভাস। এই উদ্ভাসের দেখা কেবল সে-ই পায়, যার জীবনমৃত্যু পায়ের ভৃত্য চিত্ত ভাবনাহীন। এমন জন্মস্বাধীন মুক্তমানবের দেখা সচরাচর মেলে না। আর যখন মেলে তখন ক্ষণজীবী মানুষের বিস্ময়ের ঘোর কাটে না। তখন তাকে আমরা অতিমানব বা বিস্ময়মানব অভিধায় শনাক্ত করি। আমাদের সময়ে তেমন একজন ব্যতিক্রমী মানবসত্তার শনাক্তযোগ্য ব্যক্তিনাম শেখ হাসিনা।
এই গণবাংলার মাটিবর্তী জনপদে জন্ম নিয়ে জীবনের বাঁকে বাঁকে অবিশ্বাস্য বিপর্যয় ও পালাবদলের পথ ধরে নির্ভীক পদচারণায় তাকে এগোতে হয়েছে স্বদেশে ও স্ববিশ্বে। তাই সংশপ্তক তার ব্যক্তিযাত্রা, যা শেষ পর্যন্ত তার গোত্র ও জাতিকে অপরাজিত সঙ্ঘযাত্রায় চির-অজেয় করে রেখেছে। এ-রকম একজন মানুষের সঙ্ঘযাত্রার সাফল্য কালে কালে দেশ-জাতি থেকে শুরু হয়ে সমগ্র মানবজাতির জন্য মাঙ্গলিক সাফল্য প্রত্যাসন্ন করে। আমাদের সময়ে তেমন এক সংশপ্তক মানবসত্তার নাম বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আজ পঁচাত্তর বছর বয়সে পদার্পণ করছেন। শুভ হোক তার এই চিরমাঙ্গলিক মানবজন্ম।
উনিশ-শো সাতচল্লিশের ২৮ সেপ্টেম্বর তার জন্ম হয়েছিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তাদের প্রথম সন্তান তিনি। দাদা শেখ লুৎফর রহমান আর দাদি সায়েরা খাতুন। ঐতিহ্যবাহী এই বংশের নাম শেখ বংশ। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এই বংশ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার জন্ম হয় টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। শেখ বোরহানউদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ এই বংশের গোড়া পত্তন করেছিলেন বহু আগে।’ শেখ হাসিনা তার শেখ মুজিব আমার পিতা গ্রন্থের শুরুতে তার জন্মগ্রামের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো সুন্দর একটি গ্রাম। সে গ্রামটির নাম টুঙ্গিপাড়া। বাইগার নদী এঁকে বেঁকে মিশে গিয়েছে মধুমতী নদীতে। এই মধুমতী নদীর অসংখ্য শাখা নদীর একটি শাখা নদী বাইগার নদী। নদীর দুপাশে তাল, তমাল, হিজল গাছের সবুজ সমারোহ। ভাটিয়ালি গানের সুর ভেসে আসে হালধরা মাঝির কণ্ঠ থেকে, পাখির গান আর নদীর কলকল ধ্বনি এক অপূর্ব মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলে।’
এই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশেই কেটেছে তার শৈশবের দিনগুলো। তখন রাজনৈতিক কারণেই পিতা শেখ মুজিব থাকতেন বাড়ি থেকে অনেক দূরে। জেল-জুলুম-হুলিয়া ছিল পিতার সব সময়ের সঙ্গী-সাথি। ফলে শৈশবে পিতার স্নেহ তেমন পাননি, যেমন পেয়েছেন মায়ের আদর ও সাহচর্য। তারা পাঁচ ভাইবোন : হাসিনা, কামাল, জামাল, রেহানা ও রাসেল। সবার বড় শেখ হাসিনা। কিশোরী হাসিনাও মায়ের পাশে থেকে ছোট ভাইবোনদের দেখেশুনে রাখতেন। ফলে শৈশব থেকেই সংসার, স্নেহছায়া ও সামষ্টিক মঙ্গলের সহজাত স্ব-প্রশিক্ষণ পেয়েছেন নিজে নিজেই। মানবিক প্রেম-মমতাই ছিল তার পরম বন্ধনরজ্জু। এটিই তাকে সারাজীবন মানবধর্মের দীক্ষা দিয়েছে। এই মানবিক শুদ্ধাচারকে সম্বল করেই ২০২৩-এর ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বদেশ ও স্ববিশ্বের নানা প্রান্ত সফর করেছেন তিনি। আজ তিনি বাঙালি, বিশ্ববাঙালি ও বিশ্বমানুষ।
১৯৫৪ সালে পিতা যখন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য তখনই তিনি জন্মগ্রাম টুঙ্গিপাড়া ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। প্রথমে পরিবারের সবাই থাকতেন ঢাকার মোগলটুলি রজনী বোস লেনের একটি বাসায়। পরে পিতা যখন মন্ত্রী হলেন তখন পুরো পরিবার চলে এলো ৩ নং মিন্টো রোডে। তারও বেশ কয়েক বছর পরে ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নং রোডের ঐতিহাসিক বাড়িতে থাকতে শুরু করলেন পরিবারের সব সদস্য। সেই থেকে বত্রিশ নম্বর বাঙালির এক অভিন্নবাড়ি বা প্রতীকবাড়ি।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবনের শুরু টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়, তারপর ঢাকার টিকাটুলিস্থ ‘নারী শিক্ষা মন্দিরে’, ১৯৫৬ সালে। এর পরের শিক্ষাজীবন আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকার বকশিবাজারে ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক পরিবারের এই সন্তান সেই ১৯৬০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাঠকালেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসেন। কালক্রমে স্কুলে-কলেজে পাঠ গ্রহণকালে হয়ে যান ছাত্রলীগের কর্মী ও নেতা। অংশ নেন আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন, ৬-দফার লড়াই, ১১-দফার আন্দোলন আর ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে। এরই মধ্যে কখন নিজেই নিজের ভেতরে গড়ে নিয়েছেন আপসহীন এক যোদ্ধা-সত্তা। তার আদর্শ ছিল সেদিনের অদম্য বাঙালি নেতা ও আপন পিতা শেখ মুজিব। যিনি আজ চিরকালের শ্রেষ্ঠবাঙালি; জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। যিনি আজ বিশ্বব্যাপী ‘শোষিতের নেতা’ হিসেবে মান্য ও ‘বিশ্ববন্ধু’ অভিধায় ভূষিত।
আর তার মা? তিনিও এক চিরআপসহীন সংসারযোদ্ধা, যিনি ঘর ও বাহিরকে সমান দক্ষতায় সামাল দিয়েছেন। উপরন্তু রাজনীতিতেও তিনি ছিলেন স্বামীর সার্বক্ষণিক সহচর, ধীরস্থির উপদেষ্টা আর সঠিক সিদ্ধান্তদাতা। ফলে কন্যা শেখ হাসিনার দুই উত্তরাধিকার : পিতার অমিত সাহস ও আপসহীন নির্ভীকতা; আর সেই সঙ্গে ঘরে-বাইরে সব ধরনের সংকটে-সংশয়ে মায়ের মতো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিচক্ষণতা। শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পিতা ও মাতার এই দুটি সহজাত শক্তি ও প্রবৃত্তি তাকে তার সংকটতম মুহূর্তেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস জুগিয়েছে।
পড়াশোনা ও রাজনীতির পাশাপাশি পরিণয় ও সংসারের পাঠও নিয়েছেন তিনি নিপুণভাবে। বাঙালি বধূর যে সংসারধর্ম, তারও ‘হাতে খড়ি’ তো বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার কাছেই। ‘আমাকে একটা ভালো মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি ভালো জাতি দেবো।’ এ-কথা মায়ের সম্পর্কে যেমন সত্য, তেমনি সত্য নিজের সম্পর্কেও। ঘরের মা থেকে জাতির মা। জাতির মা থেকে মানবতার মা। শেখ হাসিনার মাতৃমুখ আজ এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। তিনি আজ বিশ্বমাতৃমুখ।
সংকটে-সংগ্রামে জনপদে-রাজপথে ক্রমেই পোক্ত হলো তার রাজনীতির সবক। একাত্তরে জাতির পিতার কণ্ঠে বাঙালির পূর্ণ স্বাধীনতা আর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা, অনন্তর পুনঃপুন বৈরী সময়ের সঙ্গে জীবনবাজি রেখে লড়াই আর লড়াই। ফলে সেই শৈশব-কৈশোর থেকেই মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে শিখেছেন তিনি। সেই সঙ্গে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার স্বশিক্ষণ নিয়ে তিনি নিজে নিজেই গড়ে তুলেছেন পিতা ও মাতার মতো এক অনমনীয় ব্যক্তিত্ব। আসলে উত্তরাধিকার সূত্রেই মানুষ হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন দুর্জয় অনমনীয়তা ও শঙ্কাহীনতা।
একাত্তরের নয় মাস কাটল গৃহবন্দি দশায়, তারপরই এলো ১৬ ডিসেম্বরে বাঙালির সার্বভৌমত্বের বিজয়। বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার ঘরে ফেরার আনন্দ। তারপর প্রায় সাড়ে তিন বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি জাতিরাষ্ট্রকে গড়ে তোলার বিরামহীন সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু তার সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার সব প্রস্তুতি ও কর্মসূচি সম্পন্ন করলেন। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সবকিছুর আইনানুগ ভিত্তি প্রদান করলেন সংবিধান প্রণয়ন ও অনুমোদনের মাধ্যমে। সবকিছু শান্ত চোখে নিরীক্ষণ করলেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। আবার পাঠ নিলেন পিতার ব্যক্তিত্বের। সে পাঠ আসলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ভেঙে না পড়ে সর্বশক্তি দিয়ে সংকটতম সময়কেও সামাল দেয়ার পাঠ। এলো পঁচাত্তরের সেই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের কালরাত্রি। আল্লাহর অশেষ রহমতে তারা দুইবোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গেলেন সেই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে। হত্যাকারীরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে প্রকারান্তরে হত্যা করতে চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকেও। তাৎক্ষণিকভাবে সফল হলেও শেষপর্যন্ত তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হলো। চিরবাংলার ঐতিহাসিক বাঙালি সত্তা কোনো কালে পরাজয় মানতে জানে না। বাঙালি আবার ঘুরে দাঁড়াল সংশপ্তক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনার নির্ভীকতম ও বিচক্ষণতম নেতৃত্ব নিয়ে এলো উপর্যুপরি সাফল্য। এর মধ্যে যে সব গুণ তার স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বিশেষভাবে শনাক্তযোগ্য, তা হলো সর্বক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানবিক সদাচার, যুক্তিনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা ও বিচারশীলতার সংস্কৃতির প্রয়োগ। রক্তের বদলে রক্ত নয়, বরং বিচারের নৈয়ায়িক রায়ের প্রতি সম্মান ও সর্বোচ্চ নিষ্ঠা দিয়ে সেই রায়ের বাস্তবায়ন।
একই সঙ্গে মানব-উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সব ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সমষ্টির ভারসাম্যময় মঙ্গলের কুশলী প্রয়োগ। তত্ত্ব হিসেবে শুনতে ভালো, কিন্তু তার বাস্তবায়ন যে কতটা কঠিন, বিশেষত আমাদের মতো দুরাচারী সমাজে, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাঙালি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।
তবে আমাদের বোধের এই ফ্যালাসি ধাপে ধাপে সংশোধিত হয়েছে অন্তত গত কয়েক দশক ধরে। এই সময়ের পরিধিজুড়ে শত বাধা-বিঘেœর মুখেও কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। এই সময়ের মধ্যে এককালের ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ রূপান্তরিত হয়েছে মধ্যম আয়ের এক গণমাঙ্গলিক আদর্শ রাষ্ট্রে। বাংলাদেশ আজ তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এই রাষ্ট্রের নেতৃত্বে আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। একালের এক জনপ্রিয় উচ্চারণ, ‘বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা মানে সোনার বাংলা।’ অজেয় বাঙালির এই বোধ ইতিহাসসম্মত ও বিজয়ের বার্তাবহ। তাই পঁচাত্তর বছর বয়সে পদার্পণ করেও শেখ হাসিনা এখনো ‘বাংলাদেশ’ নামক জাতিরাষ্ট্রের হাল ধরে আছেন অনমনীয় দৃঢ়তায়। এখানেই তার নিজের ও বাঙালি সমাজের সম্মিলিত শক্তি। তিনি আজ নিজের মেধা, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও সৃষ্টিশীলতার শক্তিতেই চিরজয়ী। নিজের ঘর থেকেই শুরু করেছেন তিনি। পুত্র সজীব আর কন্যা পুতুলকে তিনি প্রতিকূল পরিবেশে মানুষ করেছেন গর্বিত জননীর অহংকারে। তিনি একজন গর্বিত মা, শিক্ষিত ও পরিশীলিত নারী, সহজ সরল রুচিশীল মানব ও অপরাজেয় জীবনযোদ্ধা। এই নিয়ে তাঁর সংস্কৃতি, এই নিয়ে তাঁর জীবনের সকল সুকৃতি।
তাঁর সৃষ্টিশীলতাও বহুমুখী। কেবল গদ্যবয়ান বা সত্য ঘটনার বয়ান নয়, সংঘটিত ঘটনাকে বিশ্লেষণ করে তা থেকে শিক্ষা নিতে জানেন তিনি। তার রচনার নানা প্রতিপাদ্য : ঘর, সংসার, বয়ন, জীবন, রাজনীতি, সংস্কৃতি থেকে শুরু করে মঙ্গলাচার পর্যন্ত প্রসারিত। গণতন্ত্রের মানসকন্যা তিনি গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েই। লেখার পাশাপাশি সম্পাদনায়ও তিনি পারঙ্গম। পিতার পাণ্ডুলিপিগুলি সম্পাদনা করেছেন অভাবনীয় দক্ষতায়। শৈল্পিক গতিতে কখনো কখনো তুলিও চালান তিনি। তবে তার সৃষ্টিশীলতার মুখ্য ক্ষেত্র রাজনীতি, মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
১৯৮১ সালে দিল্লি থেকে স্বদেশে এলেন চরম বিপদকে সাক্ষী মেনেই। কিন্তু এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন। রাজনীতিকে স্বৈরাচার-মুক্ত করলেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ক্ষমতায় এসে এক সময়ের ‘তলাহীন ঝুড়ি’কে প্রাচ্যের বিস্ময়ে পরিণত করলেন। কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলেই অর্থনীতির এই অবিশ্বাস্য অগ্রযাত্রা আজ। অগ্রযাত্রাকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে আজ বিশ্বে তিনি প্রায় অদ্বিতীয়। নারীর ক্ষমতায়নেও বাংলাদেশ আজ উচ্চপ্রশংসিত। নারী যে আজকের পৃথিবীতে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলেছে, ক্ষেত্রবিশেষে তার গতি প্রাগ্রসরতরও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারই এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। সদাচারিতা, পরিবেশবাদিতা, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সূ²দর্শী। বাংলাদেশে তিনি এক নির্বিকল্প নেতৃত্ব আর বিশ্ব-রাজনীতিতে এক প্রাগ্রসর চিন্তক। বাংলার মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে ও তার বাস্তবায়ন করতে জানেন তিনি। তাই তিনি আজ গণবাঙালির চোখের মণি। এখন একমাত্র ভাবনা, তার যোগ্য উত্তরাধিকার। তিনি যেমন পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্বিকল্প উত্তরাধিকার, তেমনি তার উত্তরাধিকার কে? কেবল সময়ই তার সদুত্তর দেবে। ইতিহাসের অমোঘ ধারায় তার উত্তর নিহিত।
আজ তার সাতাত্তরতম জন্মদিবসে জাতি তাকে জানায় সংশপ্তক সম্ভাষণ।
‘তুমি শুধু নহ মাতা নহ কন্যা নহ বধূ সুন্দরী রূপসী,/তুমি এই বঙ্গবাসী অনন্ত বয়সী;/পিতামাতা সূর্যচন্দ্র, তুমি তার আলোকিত শশি;/ সোনার বাংলার তুমি মুক্তপ্রাণ অনির্বাণ, তুমি চির অনঙ্গ উষসী।”
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনার জয়।

লেখক : মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়