গণপিটুনি থেকে বাঁচতে ৯৯৯-এ চোরের কল

আগের সংবাদ

পরিবারের আড়ালে তৎপর দল > খালেদার বিদেশযাত্রা : আলোচনায় জার্মানি > আশাবাদী দল ও পরিবার > অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

জন্মদিনে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে কিছু কথা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩ , ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের গভ. ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভিপি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা, সে সাল থেকে ৬ দফা আন্দোলনে সংযুক্তি, ১৯৬৭ সালে শিল্প ও সাহিত্য সংঘের সংগঠক, রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ গ্রহণসহ ১১ দফার আন্দোলনে অংশ নেন।
১৯৬২ সালে তিনি অগ্রণী স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে তিনি সতীর্থ বা সমর্থকদের নিয়ে কৌশলে স্কুল পালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসতেন। আসা-যাওয়ার পথে সবাই মিলে গলা ফাটিয়ে সেøাগান দিতেন, সাথীদের সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করতেন ও তাদের আপ্যায়নও করতেন। এই আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, শাহ আতিয়ারসহ অনেকে জড়িত ছিলেন। ওয়াজেদ মিয়া এফ এইচ হলের ভিপি হিসেবে এই আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। এক পর্যায়ে আন্দোলন হাঁটু গেড়ে বসে যাচ্ছিল প্রায়। ওয়াজেদ মিয়া নেতিয়ে পড়া আন্দোলনকে জিয়িয়ে তুলেছিলেন। সবার কাছে আন্দোলনটি তিন বছরের বদলে দুই বছরে ডিগ্রি প্রবর্তনের আন্দোলন ছিল কিংবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তির আন্দোলন ছিল, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ছিল তা তার ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্টের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা, নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দেশ স্বাধীন না করা গেলে সশস্ত্র পন্থায় পাকিস্তানকে বধ করার প্রথম দিককার বিশেষ একটি প্রয়াস। ফুফাত ভাই শেখ মনির সঙ্গে শেখ হাসিনার সংযোগ থাকলেও অন্যদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল নিতান্ত ক্ষীণ। সে দিনের সংস্কৃতিটাই ছিল তেমন। তখন ছাত্রলীগে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল নগণ্য।
শেখ হাসিনা অগ্রণী স্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। সে পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল আইয়ুব খান বন্দনার আনুষঙ্গিকে ভরা। পরীক্ষা ফেলের ঝুঁকি নিয়ে শুধুমাত্র নিজের বিশ্বাস ও প্রত্যয় নিয়ে তিনি সে প্রশ্নের উত্তর স্পর্শ করেননি। তিনি সাফল্যের সঙ্গেই কৃতকার্য হয়েছিলেন। পাকিস্তান ও তার শাসকদের প্রতি কী ধরনের ঘেন্না থাকলে এসএসসি পরীক্ষার্থী হাসিনা এমনটি করতে পেরেছিলেন, তা গভীরভাবে বিবেচ্য। এ যেন যে পাখি উড়বে সে পাখির নীড়েই পাখা ঝাপটাচ্ছে।
কলেজে ভর্তির পূর্বেই ৬ দফা আন্দোলন নিয়ে পারিবারিক সার্কেলে শেখ হাসিনার আলাপ-আলোচনা হতো। শেখ মুজিব বাঘের পিঠে চড়তে যাচ্ছেন, এ কথা মা ফজিলাতুন নেছা জানলেও তিনি জানতেন না, এটা হলফ করে বলা যায় না। তিনি হয়তো শুনেননি কিন্তু দেখেছেন এবং ক্রমান্বয়ে দেখেই মুক্তির পথে নেমেছিলেন।
গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বা তৎকালে চেনা নাম ইডেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজে তিনি ভর্তি হয়ে রাজনীতির সাগরে অবগাহনের সুযোগ পেলেন। ওই কলেজে ৬৬-৬৭ ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে তিনি ভিপি প্রার্থী হলেন। তার জেতার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। কেননা সে সময়ে গভ. ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ছাত্রলীগের ভিত্তি ছিল অতি দুর্বল। প্রতিপক্ষ ছিল ছাত্র ইউনিয়ন আর তার ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। তারপরও তিনি প্রার্থী হলেন। তখন ৬ দফা আন্দোলন তুঙ্গে উঠে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছিল। শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা আইয়ুব-মোনায়েমের কারাগারে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের অবস্থা ছিল নিরন্তর থমথমে। একটি কাক-পক্ষী উড়ে গেলে তার পাখার শব্দ শোনা যেত। একটা পাতা ঝড়ে পড়লেই মনে হতো ছোটখাটো বাজ পতনের শব্দ। শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিলেন প্রার্থী হবেন, আর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এটাকে একটি ইস্যুর করার। ইস্যুটি হলো ৬ দফার পক্ষে ছাত্রীদের সমর্থন। বিপুল ভোটে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হলেন, আর আমরা এটাকে ধরে নিলাম ৬ দফার প্রাথমিক বিজয়। ৬ দফা ছিল বাঙালির মুক্তি সনদ।
কলেজের ভিপি হিসেবে তিনি ৬ দফা আন্দোলনকে গতিদান করেছিলেন, যা ছাত্রলীগের ভিত্তি নির্মাণে সহায়ক হয়েছিল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন ১৯৬৭ সালে। ছাত্রীদের কোনো হলেই ছাত্রলীগের কমিটি করার সামর্থ্য ছিল না, নির্বাচনে জেতা তো দূরের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ছিলেন রোকেয়া হলের অনাবাসিক ছাত্রী। তার সঙ্গে পেয়ে গেলেন বেশ ক’জনকে, যারা পরবর্তীতে সংস্কৃতি জগতে প্রচুর নামধাম কুড়িয়েছিলেন। রোকেয়া হল ছাত্রলীগের তিনি হলেন সাধারণ সম্পাদিকা। সে সময়ে শুধু রোকেয়া হলে প্যানেল দেয়ার সামর্থ্য অর্জন করল। বেশ কয়েকটা পদ তার দেয়া প্রার্থীরা জয়ী হলেন। জয়ী যারা হলেন বা নির্বাচনে যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেন তাদের মধ্যে ছিলেন কবি কাজি রোজী, সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন, নিলুফার ইয়াসমিন প্রমুখ। পরবর্তীতে তাদের সমন্বয়ে শিল্প ও সাহিত্য সংঘের সংগঠক হিসেবে পদ-পদবিহীন নেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন নিরন্তর। ৬ দফা পরবর্তী দমন-পীড়নের ছিন্নভিন্ন ছাত্রলীগের ক্ষানিকটা হলেও এ সংগঠন স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল।
তারপর বিবাহ ও বিদেশ গমনহেতু তার রাজনীতি ও পড়াশোনায় ভাটা পড়ল; কিন্তু শেখ মুজিব আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলায় নীত হলে তিনি ও তার মা ফজিলাতুন নেছা মুজিব দলের রাজনীতি প্রসারে গেরিলার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। অতি সংগোপনে মা-মেয়ে ’৬৯-এর গণআন্দোলনের প্রচণ্ডতা আনয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করলেন। ’৬৯-এর গণআন্দোলনে তার সম্মুখসারির ভূমিকার কথা ভোলার নয়। বটতলায় টিয়ার গ্যাসের আঘাতে তিনি ক্ষানিকটা আহত হয়েও ছাত্রীদের কমন রুম থেকে বারবার কাপড় ভিজিয়ে লড়াকু ভাইদের টিয়ার গ্যাসের যাতনা লাঘব করেছিলেন। এই সফল আন্দোলনের পর তিনি অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের কালে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তা বলা যায় না। মা-মেয়ে মিলে ঢাকায় আগত যোদ্ধাদের অস্ত্র পাহারা দিতেন, ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করতেন কিংবা যোদ্ধাদের পরামর্শ দিতেন। পূর্বাঞ্চল মুজিব বাহিনীর সঙ্গে যোদ্ধা নজরুলের মাধ্যমে সংযোগ রক্ষা হতো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর হয়তো সংসার ধর্মের প্রতি মন দিয়েছিলেন অনেকটা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রপতি বা জাতির পিতার কন্যা হয়েও তিনি তার ভাইবোনরা এবং মা ছিলেন অনেকটাই আড়ালে। এ কথা সবারই জানা যে ১৯৭৫ সালে তিনি রেহানাসহ স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন, অপ্রত্যাশিত দুঃসংবাদে, শোকে ম্রিয়মাণ হলেন, ভেঙে পড়লেন না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা পুনর্গঠনের স্বপ্নে বিভোর হলেন। আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হলো, পুনর্জীবিত হলো, বিভ্রান্ত হলো, তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। বাংলাদেশ ও বাঙালির স্বপ্ন মিলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যত ঝুঁকি ও অনিশ্চিয়তা হোক, যতই জীবন সংহারের আশঙ্কা থাকুক তিনি দেশে ফিরে আসবেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আকাশের কান্না ভেজা বাংলার মাটিতে এসে তিনি অবতরণ করলেন। প্রতিজ্ঞা করলেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে ফিরিয়ে আনবেন। দেশে ফিরে তিনি দলের সভানেত্রী হলেন, দুর্যোগ ও দুঃসময়ের সারথি হয়ে তিনি দলের বিগত ৪২ বছর ধরে সভাপতি ও রাষ্ট্রের চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হলেন ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর আসনে বসলেন। জনস্বার্থ বিবেচনা করে তিনি ১৯৮৮ সালে পদত্যাগ করেন। তারপর যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রাম। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যে ১৫ দলীয় ঐক্যজোট গঠন করা হয় তিনি সেই জোটের প্রধান ছিলেন এবং বিরোধী আন্দোলনে তিনিই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯০ সালের প্রচণ্ড গণআন্দোলনে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হলেন। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা, একাগ্রতা ও অনমনীয়তার কারণে সবাই ধরে নিয়েছিল ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী হবেন। শতাংশের হারে বেশি ভোট পেয়েও সূ² কারচুপির কারণে তিনি বিএনপি অপেক্ষা কম সিট পেলেন। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীর আকর্ষণীয় পদটি থেকে তিনি বঞ্চিত হলেন। জাতি বঞ্চিত হলো মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নেতৃত্ব থেকে।
১৯৯১ সালে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী তাদের যুদ্ধাপরাধী নাগরিক গোলাম আযমকে আমির বা সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিলে দুর্দম আন্দোলন শুরু হয়। ঘাতকবিরোধী আন্দোলন শুরু হলো আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে। এই আন্দোলনের মূল দাবি ছিল ঘাতক যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ ’৭১-এর সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ফ্যাসিস্ট রাজনীতি নিষিদ্ধ, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও ধর্মীয় স্থানগুলোতে রাজনীতি বন্ধ করা। আন্দোলনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ শরিক সংগঠন হিসেবে যোগ দেয়। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে আন্দোলনকারী শক্তি বিশেষত বুদ্ধিজীবীরা অফুরন্ত অনুপ্রেরণা লাভ করেন। শেখ হাসিনা থাকাতেই জামায়াতের মতো ক্যাডারভিত্তিক সশস্ত্র ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইটা সহজ হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা প্রথম ঘাতকবিরোধী আন্দোলনের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন। তার নেতৃত্বে ১০১ জন সংসদ সদস্য গণআদালতে গোলাম আযমের বিচারের দাবি জানিয়ে তা স্পিকারের কাছে পেশ করেন।
ঘাতকবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পরবর্তী কয়েকটি নির্বাচনের দাবি তুলে শেখ হাসিনা আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রবল গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে। শেখ হাসিনার জনতার মঞ্চই সরকার পতনকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচন ষড়যন্ত্রের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিএনপির রাষ্ট্রপতি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১২ জনের বেশি সেনা কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও কোর্ট মার্শালের ব্যবস্থা করেন। এবারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা জনতার মঞ্চ তৈরি হয়। একটানা ২২ দিন জনতার মঞ্চ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচারণায় অনুকূল জনমত সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনার কৌশলী পদক্ষেপের কারণে ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তবে এক মেয়াদ সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারসাজির কারণে ক্ষমতাচ্যুত হন। এমনকি রাজনীতি থেকে উচ্ছেদের চ্যালেঞ্জে পড়লেন; জেলে গেলেন, নির্যাতিত হলেন। তিনি ভাঙবেন কিন্তু মচকালেন না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এলেন। সে সময় থেকে তিনি একনাগাড়ে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে দেশ তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ মুক্ত হলো।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ধ্বংসাত্মক অস্ত্র মামলা ও গ্রেনেড হামলার রহস্য উদঘাটন করলেন, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার কিংবা দুর্নীতির টুঁটি চেপে ধরলেন। আশা করছি তিনি আমাদের ইতিহাসে অব্যয় ও তেজোদীপ্ত হয়ে থাকবেন আর জাতি দারিদ্রের অভিশাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হবে। ক্ষমতায় থেকে তিনি কেবলই উন্নয়নের ইট গেঁথে যাচ্ছেন, প্রতিদিন নতুন ইতিহাস গড়ছেন, আজ ও কালের মধ্যে দৃশ্যমান ব্যবধান সৃষ্টি করেছেন। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প স্ব-অর্থে বাস্তবায়ন হয়েছে। মেট্রোরেল চলতে শুরু করেছে, চোখ ধাঁধালো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেয়া হয়েছে, ঢাকা-মাওয়া রেলপথ উদ্বোধন করা হয়েছে, কর্ণফুলীর টানেল শিগগিরই ব্যবহারে আসবে এবং মেট্রোরেল পুরোদমে কাজ করবে আগামী মাস থেকে। সার্বিক উন্নয়ন বঙ্গবন্ধুর আমলকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল প্রায়। কোভিডের ঢেউ না লাগলে বা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বেসামাল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে মাথা পিছু আয় তিন হাজার ছাড়িয়ে যেত। উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ নিশ্চিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হওয়াটা ঠিক সময়ের ব্যাপার।
এই সময়ের মধ্যে তিনি রাজনীতিবিদ থেকে রাষ্ট্রনায়কে উত্তীর্ণ হয়েছেন। দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তিনি হাত দেননি এবং সফল হননি। তিনি হয়েছেন রোল মডেল, বাংলাদেশ হয়েছে বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতি; শত দুর্ভোগ ও দুর্যোগের মাঝেও তিনি রয়েছেন অগ্রগামী। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বাবার স্বপ্নই তার পাথেয়। কোনো কিছুতেই তিনি বাবার আদর্শকে বিসর্জন দেননি। বাবার অনুরাগী ও অনুসারী যোগ্য কন্যাটি বিশালাংশ বাঙালিদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করেছেন। দেশে নয় বিদেশেও তিনি সমাদৃত। তিনি বাঙালির মুখোজ্জ্বল করেছেন, পিতার বিদেহী আত্মার আশীর্বাদ ও আকাক্সক্ষার জোরে তার সব অর্জন বর্ণনা হবে এক মহাকাব্য। প্রতিদিন তিনি সংযোগ করে যাচ্ছেন একাধিক মহাকাব্যের উপকরণ। ক’দিন আগে তিনি সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রবর্তন করেছেন। তার জীবন দর্শন ও সব মানুষের প্রতি ভালোবাসার স্মারক এই স্কিম। যে যা বলুক এ এক যুগান্তকারী ঘোষণা ও ঘটনা, বাংলার মানুষকে তিনি গ্রহীতার অবস্থান থেকে দাতার অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। এই স্কিমের সফল পরিণতিতে মানুষ পড়ন্ত বিকালে একটু সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে আর দুহাত তুলে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার জন্য দোয়া করবে। অতি সম্প্রতি তিনি ব্রিকস সম্মেলন ও জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিলেন। শেষোক্ত সম্মেলনে তিনি জো বাইডেন, নরেন্দ্র মোদি ও ঋষি সুনাকের কাছে যে সম্মান ও শ্রদ্ধা পেলেন, তা বাঙালি জাতিকে গর্বিত করেছে। তাকে বিশ্বনেতার পূর্ণতা দিয়েছে। একই সময়ে চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডার নেতৃবৃন্দ ও গণমানুষের কাছে যে ভালোবাসা পেয়েছেন তাও অনন্য। তার দেশরতœ উপাধিটা সার্থক হয়েছে।
তিনি যেভাবে এগোচ্ছেন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পদার্পণ করছেন, তাতে দেশ বর্তমান ৩৫তম অর্থনীতি থেকে ২৫তম অর্থনীতিতে অচিরেই পদার্পণ করবে। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি আর অবিবেচক ও অনৈতিক ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড তাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে। তারপরও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে নেই। একদিনে ১০০ সেতুর উদ্ধোধন অকল্পনীয় ব্যাপার, অন্নহীন, বস্ত্রহীন, গৃহহীন, চিকিৎসা ও শিক্ষাবিহীন মানুষের সংখ্যা অনেক ক্ষেত্রে শূন্যে নেমেছে। এর নাম নিরন্তর এগিয়ে চলা। মনে হচ্ছে কৃতজ্ঞ জাতি তাকে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত করবেই। সাবধানের মার নেই। তাই স্বগৃহে ও বহিরাঙ্গনের শত্রæদের ব্যাপারে সতর্ক ও মাপা পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ তার ৭৭তম জন্মদিন। নেত্রী হাসিনা, রাজনৈতিক হাসিনা, রাষ্ট্রনায়ক হাসিনা, বিশ্বনেত্রী হাসিনা ও মানুষ হাসিনা কমপক্ষে শতায়ু হোক- এই আমার কামনা।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও উপাচার্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়