বিষপানে ঢাবির সাবেক ছাত্রীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

এমটিএফই’র প্রতারণার ফাঁদ : হাতিয়ে নিয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা, নজরদারিতে ৪০০ সিইও, গ্রেপ্তার নেই

পরের সংবাদ

নায়ক রাজহীন ছয় বছর

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিনোদন প্রতিবেদক : ছয় বছর আগে ভক্তদের চোখের আড়ালে চলে যান বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়ক রাজ রাজ্জাক। তবে চোখের আড়াল হলেও মনের আড়াল হননি তিনি। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এ নায়ক। ২৩ আগস্ট তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। নায়ক রাজের প্রয়াণ দিবসকে ঘিরে প্রতি বছরই চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বেশ কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। পারিবারিকভাবেও স্মরণ করা হয় প্রয়াত এ অভিনেতাকে।
নায়ক রাজের ছোট ছেলে স¤্রাট বলেন, ‘বাবার চলে যাওয়ার এ দিনটিতে আমরা চেষ্টা করি গরিবদের খাওয়ানোসহ দোয়া-খায়ের করতে। এবার উত্তরায় আমাদের মার্কেট রাজল²ী কমপ্লেক্সের আশপাশের গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। মার্কেটে আব্বার তৈরি একটি মসজিদ আছে। সেখানে দোয়ার আয়োজন হয়। পাশাপাশি বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া পড়া হয়।’ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ছাড়া বড় দুই সংগঠন শিল্পী ও প্রযোজক সমিতির পক্ষ থেকে বনানী কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রয়াত নায়ক রাজকে। এদিকে শিল্পী সমিতি এফডিসিতে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন রাখে। দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতেও থাকে বিশেষ আয়োজন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নায়ক রাজকে স্মরণ করে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই অনুভূতি প্রকাশ করেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথিতযশা অভিনেতা রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের টালিগঞ্জে। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। নায়ক রাজ রাজ্জাক ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামক একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের মাঝে পরিচিতি লাভ করেন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। এরপর সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে অভিনয় নৈপূন্যতার পরিচয় দেন। পরবর্তীতে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরি স্টিশন’সহ আরো কয়েকটি সিনেমায় ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন।
নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে নায়ক রাজের যাত্রা শুরু হয় জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ সিনেমা দিয়ে। সিনেমাটিতে তার বিপরীতে ছিলেন কোহিনূর আক্তার সুচন্দা।
প্রযোজক হিসেবে নায়ক রাজের যাত্রা হয় ‘রংবাজ’ সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন জহিরুল হক। সিনেমায় রাজ্জাকের বিপরীতে ছিলেন কবরী। ববিতার সঙ্গে জুটি বেঁধে নায়ক রাজ প্রথম নির্দেশনায় আসেন ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমাটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। নায়ক হিসেবে এ অভিনেতার সর্বশেষ সিনেমা ছিল শফিকুর রহমান পরিচালিত ‘মালামতি’। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নূতন। অভিনয় জীবনে নায়ক রাজ রাজ্জাক প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি সিনেমা। ১৯৭২ থেকে ’৮৯ সাল পর্যন্ত রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- ‘স্লোগান’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘অতিথি’, ‘কে তুমি’, ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘প্রিয়তমা’, ‘পলাতক’, ‘ঝড়ের পাখি’, ‘খেলাঘর’, ‘চোখের জলে’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘ভাইবোন’, ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘সাধু শয়তান’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘মায়ার বাঁধন’, ‘গুণ্ডা’, ‘আগুন’, ‘মতিমহল’, ‘অমর প্রেম’, ‘যাদুর বাঁশী’, ‘অগ্নিশিখা’, ‘বন্ধু’, ‘কাপুরুষ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সখি তুমি কার’, ‘নাগিন’, ‘আনারকলি’, ‘লাইলী মজনু’, ‘লালু ভুলু’, ‘স্বাক্ষর’, ‘দেবর ভাবী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘আদরের বোন’, ‘দরবার’, ‘সতীনের সংসার’ প্রভৃতি। তার প্রযোজনা সংস্থা রাজল²ী প্রোডাকশন থেকে ‘আকাক্সক্ষা’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘পাগলা রাজা’, ‘বেঈমান’, ‘আপনজন’, ‘মৌচোর’, ‘বদনাম’, ‘সৎ ভাই’, ‘চাঁপা ডাঙ্গার বৌ’, ‘জীনের বাদশা’, ‘ঢাকা-৮৬’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’, ‘সন্তান যখন শত্রæ’, ‘আমি বাঁচতে চাই’, ‘কোটি টাকার ফকির’ প্রভৃতি সিনেমা নির্মাণ করেন।
অভিনয় জীবনে রাজ্জাক অর্জন করেন একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা। এছাড়া রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন। অন্যদিকে নায়ক রাজ সর্বশেষ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘আয়না কাহিনী’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়