‘নারীরা জায়েদ খানে আটকায়’ বলায় লিগ্যাল নোটিস

আগের সংবাদ

পিতার সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা : টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে কন্যা হাসিনা-রেহানা

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুপ্রেমী এক মোস্তফার গল্প : খালি পায়ে ছিলেন ২৩ বছর বিয়েও করেছেন খালি পায়ে

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু রায়হান, ফুলপুর (ময়মনসিংহ) থেকে : আমি যেখানে দেখি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনুষ্ঠান, সেখানেই ছুটে যাই। কেউ আমাকে ডাকুক আর না ডাকুক। সেই অনুষ্ঠানে পাগলের মতো ছুটে যাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি চোখে পড়লে নীরবে চোখ জুড়িয়ে তাকে দেখি। কথাগুলো ভোরের কাগজকে বলছিলেন এক বঙ্গবন্ধুপ্রেমী ময়মনসিংহের ফুলপুরের মো. মোস্তফা (৭২)।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ২৩ বছর খালি পায়ে জীবনযাপন করেন মো. মোস্তফা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি এমন ভালোবাসার কারণে এলাকায় তিনি মুজিব-পাগল নামে পরিচিত।
উপজেলার ৬ নম্বর পয়ারী ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মোস্তফা। ১৯৫২ সালে তিনি নরসিংদী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে যাওয়ার জন্য ময়মনসিংহের ফুলপুরে আসেন। হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি আর ভারতে যেতে পারেননি। সেখানে তার বোন জামাইয়ের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। নরসিংদীতে আর ফিরে যাননি। দিনমজুরি করে দিনাতিপাত করতে থাকেন।
পরিবার-পরিজনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে গিয়েও মাঝপথে ফিরে আসেন মোস্তফা। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি ছিল তার অগাধ বিশ্বাস।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রেডিওর খবর ও তার মায়ের কাছে জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। সাক্ষরজ্ঞানহীন মোস্তফা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন। প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে তার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে সমাহিত করে। তখন মো. মোস্তফা মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন, যে পর্যন্ত দেশের মাটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার না হবে ততদিন তিনি এই মাটিতে জুতা পায়ে দেবেন না।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদস্বরূপ ২৩ বছর জুতা পায়ে দেননি মো. মোস্তফা। এমনকি খালি পায়ে বিয়েও করেছিলেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় ঘোষিত হলে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সাবেক ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ভাষাসৈনিক মরহুম এম শামছুল হক তাকে এক জোড়া জুতা কিনে দেন। এরপর থেকে তিনি জুতা পরা শুরু করেন। বর্তমানে বয়সের ভারে কাবু হয়ে পড়েছেন। তার শেষ জীবনে চাওয়া বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা।
স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে হেঁটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন ৭২ বছর বয়সি মো. মোস্তফা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১১ দিনে হেঁটেছেন ৩১৭ কিলোমিটার। গত বছর ১৯ আগস্ট বিকালে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। পরে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। তার দ্বিতীয় চাওয়াটি এখনো অপূর্ণ রয়েছে।
মো. মোস্তফা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, এ দেশে আমরা বাস করতে পারতাম না। আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতাম না। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে যেতে পেরে আমার মনে তৃপ্তি এসেছে। শত শত লোক বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করছে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি শেখ হাসিনাকে যেন তিনি দীর্ঘায়ু দান করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি এমন অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে এলাকার মানুষ তাকে মুজিব-পাগল নামে আখ্যায়িত করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি পাকা বাড়ি করে সেখানে বসবাস করছেন। দারিদ্র্য পিছু না ছাড়লেও ৩ ছেলেকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন। তার ৩ ছেলে উচ্চ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও কৃষিকাজ করে বাবার ভরণপোষণ চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে এলাকার শিক্ষক মো. নয়ন আহম্মেদ বলেন, জাতির পিতার প্রতি এমন ভালোবাসা বিরল। অনেকেই বঙ্গবন্ধুর জন্য পাগল থাকলেও তিনি তাকে তার হৃদয়ে ধারণ করেছেন। তরুণ প্রজন্ম তার কাছে অনেক কিছু শিখতে পারবে।
তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিন্তু বিনিময়ে দলের কাছে কিছুই চাননি। সারা জীবন শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও জয় বাংলা সেøাগান দেয়ার কারণে এলাকার মানুষ তাকে বঙ্গবন্ধুপ্রেমী বলে ডাকেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়