শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান

আগের সংবাদ

ভারত-আমেরিকার বৈচিত্র্যময় অংশীদারত্ব গড়ার প্রত্যয় : হোয়াইট হাউসে মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

পরের সংবাদ

মেঘের ভেতর জ্যোৎস্নার ছায়া : জলের অতলান্তে ক্ষ্যাপাটে প্রেম

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীজুড়ে যত ভালোলাগা ও ভালোবাসার শব্দ আছে, সেসব শব্দের বুনন ‘মেঘের ভেতর জ্যোৎস্নার ছায়া’ কাব্যগ্রন্থটি। গ্রন্থের লেখক ফরিদা বেগম। যেসব তরুণ-তরুণীর রাতের ঘুম নষ্ট হয় প্রেম তৃঞ্চায়, সময় কাটে অপেক্ষায় অপেক্ষায়, তাদের লক্ষ্য করে হয়তো ফরিদা বেগম এ বইয়ের কবিতাগুলো লিখেছেন। ৪৫টা কবিতা এ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে, যার প্রায় প্রতিটি কবিতাই প্রেমের কবিতা বলা যায়। বইটি ২০২৩ এ একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রকাশ করেছে কবিতার কথা প্রকাশনী।
ফরিদা বেগম সুন্দরের পূজারী। তিনি একটি সবুজ-কোমল মন লালন করেন, সে কারণে তার প্রতিটি কবিতা সহজ-সরল, মায়াময়। ধবল জ্যোৎস্নার মতো আলো ছড়ায়। পাঠক আকৃষ্ট করার মতো সব ধরনের শব্দারস কবিতায় উপস্থিত। একটি কবিতা দেখে নিই- ‘একাকী আকাশ ছুঁবো অনুভবে/ বৈশাখী চাঁদ আহ্লাদী চুমু খেয়ে যায়/ থইথই ইচ্ছের প্লাবনে।/ জোছনার আলিঙ্গনে তরী ভেসে যাবে/ দূর সাগর গভীরে/ কোন অচেনা বন্দরে।/ আজ ঘুমিয়ে যেও না/ এসো জ্যোৎস্না মাখি একই আকাশে/ রুপালি স্নানের ঘ্রাণ বাতাসে ভাসুক/ ভুলে যাই বিষণ্ন বিলাপ/ কুয়াশার মতো কণা কণা ভালোবাসা/ গলে গলে ভিজে যাক বুকের আস্তিন।’ (কবিতা, এসো অনুভবে, পৃষ্ঠা-৩২)।’ ফরিদা বেগমের কবিতা আপাতত ভাবে সহজ, চেনা শব্দ, বাক্য, দিয়ে লেখা মনে হবে কিন্তু তারপরও কেমন যেন অধরা রয়ে যায়। কবিতার ভেতর কেমন একটি মাদকতা আছে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, প্রশান্তি না থাকলে ভালো কবিতা হবে না। সে কবিতার স্থায়িত্ব থাকবে না। অপরদিকে রবীন্দ্রনাথের এ কথা প্রত্যাখ্যান করে জীবনানন্দ বলেছেন, রচনার ভেতর সত্যিতার সৃষ্টির প্রেরণা- এটাই দেখার বিষয়। তার সুরটা প্রশান্তির না অশান্তির সেটা বড় ব্যাপার নয়। তবে ফরিদা বেগমের কবিতায় যেমন প্রশান্তি আছে, তেমন সৃষ্টির প্রেরণা আছে। কাজেই একথা জোর দিয়ে বলা যায় ফরিদা বেগমের কবিতা পাঠকের মনে স্থায়িত্ব পাবে। পাঠক বহুদিন মনে রাখবে।
‘বাতাসের কোলাহল সবুজ চাদরে/ মাটির মায়ায় ডাকে আকুল আদরে/ ফসলের সোঁদাঘ্রাণ অনুভবে মেশে শিকড়ের টানে ছুটে চলা ভালোবেসে।/ আলপথ জুড়ে আছে দুরন্ত কৈশোর/ পাখপাখালির ডাকে কাটে ঘুমঘোর/ শাপলা শালুক বিলে ডানকানা মাছে/ ছেলেবেলা ছবি হয়ে খুব জমা আছে। (কবিতা, মাটির ঘ্রাণ, পৃষ্ঠা-৪৫)।’ এ কবিতা ঠিক এক টুকরো নীল আকাশের সারল্যের মতো। পাঠান্তে মন অপরিমিত খুশি হয়ে ওঠে। ফরিদা বেগমের ধারালো কবিত্বশক্তি আছে তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। তার কবিতায় আছে এক আশ্চর্য অহংকার, অভিমান।
বইয়ে একগুচ্ছ অনুকাব্য স্থান পেয়েছে। সব অনুকাব্যই চার লাইনে লেখা। চার লাইনের মধ্যে কাব্যভাব তুলে ধরা খুবই কঠিন কাজ। আর এই কঠিন কাজটি ফরিদা বেগম নিঁখুত ভাবে করেছেন। কয়েকটা উদাহরণ দিই, তোমার মনে শৈত্যপ্রবাহ/ ঢাকা হীমের চাদরে/ গলেনা বরফ উঞ্চতায়/ ভালোবাসার আদরে। অথবা ‘দীর্ঘতর অপেক্ষার প্রহর/ উজ্জ্বল রৌদ্র দিনের/ মেঘদের লুকানো আকাশ হাসবে/ আবেগ নিয়ে মনের।’ অনুকাব্যগুলো পাঠান্তে পাঠকের মনে অসাধারণ এক তৃপ্তির সুবাতাস বইয়ে যাবে।
ফরিদা বেগমের কবিতায় গ্রাম বাংলার জীবন ও প্রকৃতির ছবি ফুটে উঠেছে সহজ, সরল ও সাবলীল ছন্দে। ছন্দের জাদুকরী, ভাষাশৈলী, উপস্থাপনা কৌশল, এসবের কারণে তার কাব্য পাঠক প্রিয়তা পাবে একথা জোর দিয়ে বলা যায়।
বইটির নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছেন সুভাষ চৌধুরী।
অভিনন্দন কবি ফরিদা বেগমকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়