কাগজ ডেস্ক : চলতি বছর অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক জ¦ালানি সংস্থা (আইইএ)। ফলে জ¦ালানি তেলের সম্ভাব্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি। পূর্বাভাস অনুযায়ী, চাহিদা প্রতিদিন রেকর্ড ১০ কোটি ২৩ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হতে পারে। উন্নয়নশীল বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলো চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
আইইএ সম্প্রতি মিডিয়াম টার্ম মার্কেট রিপোর্ট শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে করা প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২-২৮ সালের মধ্যে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের চাহিদা ৬ শতাংশ বাড়বে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে দৈনিক ১০ লাখ ৫৭ হাজার ব্যারেলে। ২০২২ সালের তুলনায় চাহিদা বাড়বে দৈনিক ৫৯ লাখ ব্যারেল। পেট্রোকেমিক্যাল ও এভিয়েশন খাত চাহিদা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করবে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০২৮ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে তিন-চতুর্থাংশ চাহিদাই আসবে এশিয়ার দেশগুলো থেকে। ২০২৭ সাল নাগাদ চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে প্রধান উৎস হিসেবে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত। জ¦ালানি স্থানান্তর পলিসির কারণে এ সময়ের পুরোটাই উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে সংকোচনমূলক পরিস্থিতির মধ্যে থাকবে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের চাহিদা।
চীনে চলতি বছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের চাহিদা মহামারিপূর্ব অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ায়। তবে আগামী বছর চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়তে পারে। আইইএ জানায়, জ¦ালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধিতে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে পেট্রোকেমিক্যাল খাত।
এর মধ্যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), ইথেন ও নাপথা অর্ধেকেরও বেশি চাহিদা বাড়াবে। ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই মহামারিপূর্ব অবস্থায় ফিরবে। এভিয়েশন খাতও খুব শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ চলতি বছর সীমান্ত খুলে দেয়ায় বিমানে ভ্রমণের হার বেড়ে গেছে।

এদিকে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের মূল্য পূর্বাভাস কমিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস। বছর শেষে জ¦ালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ৮৬ ডলারে নামবে বলে জানিয়েছে বিনিয়োগ ব্যাংকটি। আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ৯৫ ডলার। সে হিসাবে দাম কমবে প্রায় ১০ শতাংশ।
এর আগে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ডিসেম্বর নাগাদ গড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৯ ডলারে নামবে বলে জানিয়েছিল গোল্ডম্যান স্যাকস। সবশেষ পূর্বাভাসে তা কমিয়ে ৮১ ডলার ধরা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সৌদি আরব অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল উত্তোলন ব্যাপক মাত্রায় কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর পরও বাজারে জ¦ালানিটির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। কারণ চীনে যে হারে চাহিদা বাড়ার প্রত্যাশা করা হয়েছিল সে হারে বাড়ছে না। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া, ইরান ও ভেনিজুয়েলার জ¦ালানি তেল উত্তোলন ও সরবরাহ বেড়েই চলেছে। এসব কারণেই বছরের শেষ নাগাদ জ¦ালানি তেলের দাম নিম্নমুখী থাকবে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের দাম বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়ে আসছিল গোল্ডম্যান স্যাকস। আশঙ্কা করা হচ্ছিল বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাজার সংকুচিত হয়ে আসতে পারে। দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে ওয়াল স্ট্রিট ব্যাংকটি জানায়, জ¦ালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি এ ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছে।