চট্টগ্রাম অফিস : বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও তার ছেলে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। হাটহাজারী উপজেলার মেখল এলাকায় নানা কৌশলে তারা ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) পরিচালিত পুন্ডরীক ধামের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল ও মন্দিরের সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইসকন নেতারা। রবিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতারা। এসব অবৈধ দখলদার ও হুমকিদাতারা যদি তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসে ও পুন্ডরীক ধামের জায়গা নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করে তাহলে সারাদেশের হিন্দুরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন ইসকন নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। তিনি অভিযোগ করেন, পুন্ডরীক ধামের লক্ষ¥ী জনার্দন বিগ্রহের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। এমনকি দলবল নিয়ে মন্দিরের রাস্তার উপর দেয়াল নির্মাণের চেষ্টা করেন তারা। এতে মন্দির কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে বিএনপির এ নেতার পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে মহানগর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুন্ডরীক ধামের মানুষের সঙ্গে এলাকার ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকজনের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতা মীর নাসির ও তার ছেলে মন্দিরের জায়গা দখল করে সেবায়েতদের চলাচলের পথ রুদ্ধ করার মাধ্যমে এলাকায় অরাজকতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছে। পাশাপাশি সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছে। হিন্দু তীর্থক্ষেত্র পুন্ডরীক ধামের জায়গা-জমির ওপর কেন বিএনপি নেতাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছ, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
এ সময় ইসকনের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। পুন্ডরীক ধামের জায়গা দখলের চেষ্টা করা হলে কিংবা কোনো রকম ষড়যন্ত্র করা হলে সারাদেশের হিন্দুরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।পরে ইসকন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিণ¥য় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, এই পবিত্র ভূমি শ্রীল পুন্ডরীক বিদ্যানিধির জন্মস্থান। বিগ্রহের তদানীন্তন সেবায়েত ছিলেন হর কুমার স্মৃতিতীর্থ। তার নাম আরএস খতিয়ানে লক্ষ¥ী জনার্দন বিগ্রহের পক্ষে সেবায়েত হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে (যা চিরস্থায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে)।
ওই বিগ্রহ অ্যাস্টেট জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুন্ডরীক ধাম নামে পরিচিত। হর কুমার স্মৃতিতীর্থ আমৃত্যু ওই বিগ্রহের সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করেন। এই স্থানটি ঐতিহাসিকভাবে ভগবান শ্রী চৈতন্য দেবের প্রধান পার্ষদদের অপ্রাকৃত লীলাভূমি। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য অবদান চৈতন্য ভাগবত, চৈতন্য চরিতামৃত, চৈতন্যমঙ্গল, গৌর-পার্ষদ চরিতাবলি গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান প্রামাণিক গ্রন্থে এই স্থানের মহিমা বর্ণিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি নেতা মীর নাসির ও তার ছেলে মীর হেলাল ভুয়া দলিল বানিয়ে মন্দিরের জায়গা দখল করছে। মন্দিরের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। লক্ষ¥ী জনার্দন বিগ্রহের সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি, যা কখনো হস্তান্তরযোগ্য নয়। আরএস খতিয়ানেও এ সম্পত্তি লক্ষ¥ী জনার্দন বিগ্রহের নামে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিএস খতিয়ানে তার ধারাবাহিকতা না থাকার সুযোগে তারা নিজেদের নামে জাল দলিল তৈরি করে এ সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে। সংবাদ সম্মেলনে ইসকন প্রবর্তক মন্দিরের লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন তালুকদারসহ সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।