মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম শুরু আজ

আগের সংবাদ

ভূ-রাজনীতির নতুন ক্ষেত্র ‘ব্রিকস’ : যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা

পরের সংবাদ

যাত্রী

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পূর্ণিমা রাত। ফুটফুটে জোছনা। রেলস্টেশনে অনেক অটোচালক দাঁড়িয়ে আছে। প্যাসেঞ্জার আসতেই একে একে অটোগুলো চলে গেল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ চালক নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। দবির খালি অটো নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছে। সেও বাড়ি যাবে। ঘণ্টাখানেক পর একটি যাত্রীবাহী ট্রেন আসবে। খালি অটো নিয়ে ফেরার চেয়ে দু-একজন প্যাসেঞ্জার নিয়ে ফেরা ভালো। আরো তিন-চারজন অটোচালক যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
হঠাৎই চারপাশ অন্ধকার হয়ে প্রবল বৃষ্টি শুরু হলো। রাত অনেক হয়ে গেছে, কিন্তু মেঘের কারণে চাঁদের আলোও দেখা যাচ্ছে না। মেঘ গর্জন করছে আর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, তাতে কিছুটা আলো দেখা যাচ্ছে। এখন তো অমাবস্যার চেয়েও অন্ধকার মনে হচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রীবাহী ট্রেন এসে দাঁড়াল। দবির একটা সুন্দরী মেয়েকে ট্রেন থেকে নামতে দেখল, কাঁধে একটা ব্যাগ আর হাতে একটা স্যুটকেস। মেয়েটি সোজা দবিরের কাছে এগিয়ে এসে বলল, আমাকে ধুপখালি নামিয়ে দিতে পারবেন?
দবির বলল, এখন অনেক রাত হয়েছে, তার ওপর বৃষ্টি। তাই ভাড়া পড়বে আটশ টাকা। সকালে গেলে মাত্র তিনশ টাকায় রওনা দেব।
দবির ভেবেছিল মেয়েটি তেতে উঠবে। ভাড়ার বাড়াবাড়ি নিয়ে আজকাল সবাই যেরকম করে। মেয়েটি উত্তর দিল, আমাকে এখনই যেতে হবে। আপনি গাড়ি স্টার্ট দিন, আটশ টাকাই দেব।
দবির বলল, আপা, আপনি আগে টাকা দেন। এরকম ঘটনা অনেকবার ঘটেছে, বাড়তি ভাড়া চাওয়ায় বাড়ির লোক ডেকে এনে শেষে আমাদের ড্রাইভারদের মার দেয়। আমি আপনাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেব।
মেয়েটি বলল, এই মুহূর্তে তো আমার কাছে এত টাকা নেই। মাত্র চারশ টাকা আছে। আপনি এটা রাখেন। আমি বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বাকি চারশ টাকা দেব।
এ কথা শুনে দবির বলল, ঠিক আছে আপা। আপনি অটোতে ওঠেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দবির মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে যায়। মেয়েটি অটো থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। দবির চারশ টাকার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। আধা ঘণ্টা কেটে গেলেও মেয়েটি আর ফিরে আসে না। দবিরের একবার মনে হলো- ভেতরে গিয়ে দেখব কিনা, মেয়েটি এখনো কেন আসছে না? ঘরের কলিংবেল বাজিয়ে বিকট শব্দ করতে লাগল। একজন বৃদ্ধা ঘরের দরজা খুললেন। দবির বলল, একজন আপা অটো করে এখানে এসেছেন। আমার চারশ টাকা পাওনা আছে। সে এখন পর্যন্ত টাকা নিয়ে আসেনি।
বৃদ্ধা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে আপা? আমি আর আমার স্বামী ছাড়া এখানে আর কেউ থাকে না। হ্যাঁ, আমার মেয়ে আগে থাকত, কিন্তু পাঁচ বছর ধরে সে এখানে থাকে না।
দবির বলল, কেন সে এখন কোথায় থাকে? আমি সম্ভবত আপনার মেয়েকেই এখানে নিয়ে এসেছি। আপনি একবার ভালো করে দেখেন।
ক্ষণে ক্ষণে দবিরের চোখ যায় সামনের দেয়ালে। দেয়ালে একটি মেয়ের ছবি, সেই মেয়েটি যাকে সে অটোতে নিয়ে এসেছে।
দবির বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করল, দেয়ালে যার ছবি সে আপনার মেয়ে?
বৃদ্ধা উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, সে আমার মেয়ে। কেন কী ঘটেছে? এভাবে জিজ্ঞেস করছ কেন?
উত্তর শুনে দবির বলল, চাচি আম্মা, আমি তো শুরুতেই বলেছিলাম আপনার মেয়েকেই বাড়িতে এনেছি। ছবির মেয়েটিই আমার অটোতে এসেছে। এখন আমার বাকি চারশ টাকা তাড়াতাড়ি দিন। দেখেন, সকাল হয়ে যাচ্ছে। আমি এখানে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব?
বৃদ্ধা মহিলা দুঃখের সঙ্গে বললেন, বাবা, এটা হতে পারে না। এটা আমার মেয়ে ঠিকই, কিন্তু পাঁচ বছর আগে সে একরাতে ট্রেন থেকে নেমে অটোতে বাড়ি ফিরছিল। রাস্তায় কিছু লোক আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায়। সকালে খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দেখি আমার মেয়ে মারা গেছে। তুমি কীভাবে আমার মেয়েকে বাড়িতে আনতে পার?
এ কথা শুনে দবিরের হুঁশ উড়ে গেল। সে দ্রুত এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারলে যেন বাঁচে। অটোর কাছে পৌঁছতেই দেখল চারশ টাকা তার সিটের উপর রাখা।
জুয়েল আশরাফ : বাহ্রা চরকান্দা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়