মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম শুরু আজ

আগের সংবাদ

ভূ-রাজনীতির নতুন ক্ষেত্র ‘ব্রিকস’ : যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মাত্রা

পরের সংবাদ

আয়কর আইন-২০২৩ পাস : বিদেশ ভ্রমণে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়া বাধ্যতামূলক

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে রিটার্ন জমা সহজ করতে আয়কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা কমিয়ে জাতীয় সংসদে ‘আয়কর বিল-২০২৩’ পাস হয়েছে। গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলের বিরোধিতা করে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রওশন আরা মান্নান, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ও কাজী ফিরোজ রশীদ, পীর ফজলুর রহমান এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে অর্থমন্ত্রী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে পাস হয়।
নতুন আইনে করবর্ষের শেষ তারিখে ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলে, বছরের কোন সময়ে চিকিৎসা বা ধর্মীয় উদ্দেশ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিদেশ ভ্রমণ করলে সম্পদ ও দায়ের বিবরণী জমা দেয়া (রিটার্ন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নতুন আয়কর আইনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিরোধী জাতীয় পার্টির এমপিরা বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন পাসের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এতে বিদেশে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। নতুন আয়কর কার্যকর হলে একই ঘটনা ঘটবে। মানুষের মধ্যে করভীতি বাড়বে।
নতুন আইনে কর ৩৫ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ করায় দ্রব্যমূল্য বাড়বে। এই অজুহাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই হবে, বেকারত্ব বাড়বে। এই আইনের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার স্থায়ী সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। আগে বাজেটে এই সুযোগ দেয়া হতো। এ আইনের ফলে যে খাতগুলোতে আছে সে খাতগুলোতে প্রদর্শন করে কালো টাকা সাদা করতে পারবে। এনজিওগুলো এক বিলিয়ন ডলার এদেশে বিনিয়োগ করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করে, সেই টাকার ওপর ট্যাক্স বসালে তারা আর টাকা পাঠাবে না। এখানে বলা হয়েছে চিকিৎিসা ও ধর্মীয় কারণ ছাড়া বিদেশে ভ্রমণ করলে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।

এর ফলে প্রয়োজন হলেও অনেকে বিদেশ ভ্রমণ এড়িয়ে চলবে। তাছাড়া টিআইএন করলেই ২০০০ টাকা আয়কর দেবার বিধানকে বাদ দেবার আহ্বান জানান তারা।
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আয়কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এই বিলটি আনা হয়েছে। এই বিল পাস হলে সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবে। আমরা কারো উপর জোর প্রয়োগ না করেই রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে চাই। বর্তমানে ৩ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার আয়কর আসে। আমাদের অনেক সীমা রয়ে গেছে যা আমরা বাড়াতে পারবো। তাই বিলটি পাস হওয়া দরকার। বিলটি পাসের আগে অর্থমন্ত্রী বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যদের প্রস্তাবমতো বিলের ধারা ৩ এর ক্রমিক ১, ২, ৪, ৫, ৮, ৯, ১০, ১১, ২৫, ৪৩, ৪৭ এবং ৩ এ ক ধারার বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
পাস হওয়া বিলে করযোগ্য আয় না থাকলেও বিদেশ ভ্রমণ করলে ফ্ল্যাট, জমি, আসবাব, ব্যাংক ব্যালান্সসহ যাবতীয় সম্পদের তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক করা করা হয়েছে। দেশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ট্যাক্স রিটার্নসহ তাদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো করদাতা যদি তার রিটার্র্নে বিদেশে থাকা সম্পদ প্রদর্শন না করেন, আর সেই সম্পদের খোঁজ যদি কর কর্মকর্তারা পান এবং ওই সম্পদ অর্জনের উৎস ও অন্যান্য বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে জরিমানা দিতে হবে। বিদেশে থাকা সম্পত্তির ন্যায্য বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা আদায়ও করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
আরো বলা হয়েছে, দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের বাংলাদেশে তাদের সম্পদ ও দায় ট্যাক্স রিটার্নে দেখাতে হবে। স্বামী বা স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের যদি টিআইএন নম্বর না থাকে, সেক্ষেত্রে পরিবারের করদাতাকে তাদের সম্পদ ও আয়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে।
বিলের উদ্দেশ ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন আয়কর আইনটি ১৯২২ সালের আয়কর আইন সংশোধন করে প্রণয়ন করা বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর স্থলাভিষিক্ত হবে।
এতে আরো বলা হয়েছে, স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল, রিটার্ন প্রসেস ও রিটার্ন অডিট সংক্রান্ত বিধানাবলীর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। তাই বিলটি আইনে পরিণত হলে আয়কর, অগ্রিম আয়কর, উৎসেকর, ন্যূনতম কর, সারচার্জ ও অন্য কোনো প্রকারের কর আরোপ, আদায়, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা সহজীকরণসহ আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে। আয়কর, অগ্রিম আয়কর, উৎসেকর, ন্যূনতম কর, সারচার্জ ও অন্য কোনো প্রকারের কর আরোপ, আদায়, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা সহজীকরণসহ আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিদ্যমান অধ্যাদেশের অধীন উৎসেকর কর্তন সম্পর্কিত ২১টি রিটার্ন ও বিবরণী দাখিলের পরিবর্তে প্রস্তাবিত আইনে মাত্র ১২টি রিটার্ন দাখিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আইনে বিভিন্ন প্রকারের সমঝোতা ও বন্দোবস্তের মাধ্যমে কর পরিশোধ পরিহার নিরোধে আর্নিংস স্ট্র্যাপিং রুলসহ সাধারণ ও বিশেষ কর বিধান রাখা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়