পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় : সবাই সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখাবে- এই প্রত্যাশা বাংলাদেশের

আগের সংবাদ

মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি : ‘পরিকল্পিত সিলেটে’ প্রাধান্য

পরের সংবাদ

চিনি পেঁয়াজে কাটেনি অস্থিরতা স্বস্তি নেই মাছ মুরগি সবজিতে

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আমদানির পরও স্থিতিশীলতা আসেনি উত্তপ্ত হওয়া পেঁয়াজের বাজারে। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ দামে স্থির থাকা চিনির দামেও কাটেনি অস্থিরতা। স্বস্তি নেই মাছ, মুরগি ও সবজিতেও। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দামে নাভিশ্বাস উঠেছে সীমিত আয়ের মানুষের। অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়- দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০, কোথাও ৭৫, আবার কোথাও ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও একই দর ছিল। ভারতীয় ভালো মানের পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তবে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের মান খুব একটা ভালো দেখা যায়নি। বিক্রেতারা এ ধরনের পেঁয়াজের কেজি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের বাজার বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত ৫ জুন আমদানির অনুমতি দেয়ার পর প্রতিদিনই কমবেশি পেঁয়াজ আসছে ভারত থেকে। তবু কমেনি দেশি পেঁয়াজের দাম। কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা মোতালেব বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের বেশিরভাগই পচা। সেগুলো কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি, এ কারণে খুব একটা কমেনি।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে চলা চিনির দামে অস্থিরতা কাটাতে মাস খানেক আগে সরকার খোলা চিনি ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। আমদানিকারক থেকে খুচরা ব্যবসায়ী কেউই মানেননি সেই দাম। আমদানি করা সাদা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে। এর মধ্যে আবারো দাম বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন আমদানিকারকরা। গত সপ্তাহে তারা খোলা চিনি কেজিতে ২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ২৫ টাকা বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়েছে। যদিও এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। এরই মধ্যে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে দেশি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে তা ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বিক্রেতাদের কেউ কেউ চিনি বিক্রি করছেন না।
কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও স্টোরের স্বত্বাধিকারী মহসিন হোসেন বলেন, প্যাকেট চিনির দর লেখা আছে ১২৫ টাকা। ডিলারদের থেকে ১২৫ টাকা দরেই কিনতে হয়। এর সঙ্গে বাধ্যতামূলক হাফ কেজি গুঁড়া দুধ বা অন্য কিছু কিনতে হয়। এ কারণে চিনি বিক্রি বাদ দিয়েছি।
চিনি-পেঁয়াজের যখন এই অবস্থা, তখন স্বস্তি নেই ব্রয়লার মুরগিতেও। রোজা শুরু হওয়ার পর ধাপে ধাপে বেড়ে ২০০ থেকে ২১০ টাকায় উঠেছিল ব্রয়লারের দাম। ধীরে ধীরে কমে গত সপ্তাহে ব্রয়লারের কেজি হয় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। গতকাল তা আবার ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সোনালি জাতের মুরগির দামে তেমন পরিবর্তন নেই। আগের মতোই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায়। গত সপ্তাহের মতো ডিমের ডজনও ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। আর গরু-খাসির মাংস আগের দামেই যথাক্রমে ৮৫০ টাকা ও ১,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের অতিরিক্ত দামের কারণে সীমিত আয়ের মানুষ যখন তেলাপিয়া বা পাঙাশের মতো সস্তা দামের মাছের দিকে ঝুঁকছিলেন, ঠিক তখন থেকে এর দামও বাড়তে শুরু করে। এরই মধ্যে তেলাপিয়া ও পাঙাসের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর ভালো চাহিদার মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
গতকাল সকালে রাজধানীর মালিবাগ বাজারে মাছ কিনতে এসে বেসরকারি চাকরিজীবী আজাদ বলেন, আগে আধা কেজি কাচকি মাছ ২০০ টাকায় হয়ে যেত। অথবা এ টাকায় এক কেজি সাইজের তেলাপিয়া বা পাঙাশ কিনতাম। এখন সেটাও হচ্ছে না। এত দাম হলে তো আমাদের পক্ষে মাছ কিনে খাওয়া কঠিন।
বাজারে তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের দাম এখন প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও তা ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকার মধ্যে। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা। এসব মাছের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর উন্মুক্ত জলাশয়ের (নদ-নদীর) মাছ কিনতে ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে আরো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। বাজারে পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছের যে দাম, তা নি¤œবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামও কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ পর্যন্ত টাকা বেড়েছে।
চড়া দামের বাজারে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে যারা সবজির দিকে ঝুঁকছেন, তাদের জন্যও কোনো সুখবর নেই। টানা অস্থিতিশীল সবজির দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমলেও তা আবার বেড়েছে। ৫০ টাকার মধ্যে শুধু গ্রীষ্মকালীন পটল-ঢেঁড়স মিলছে। অন্য সব বারোমাসি সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। গত রবিবার বাজারে ভোজ্যতেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হলেও নতুন দামে তেল পাচ্ছেন না অনেক ভোক্তা। আগের দামেই অর্থাৎ প্রতি লিটার ১৯৯ টাকায় তাদের কিনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন- নতুন দামের তেল এখনো বাজারে আসেনি তাই আগের কেনা দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়