সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে ভুক্তভোগীরা

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ও প্রত্যাশায় ফারাক অনেক : ক্লিন সিটি খ্যাত রাজশাহীর মানুষ অনেক সেবা পান না

পরের সংবাদ

আহসান মালেক : শিশু সাহিত্যের ধ্রুবতারা

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আহসান মালেক আমাদের শিশুসাহিত্যের একজন উজ্জ্বল মুখ। তিনি লিখে চলেছেন দশকের পর দশক ধরে। ব্যঙ্গ-কৌতুক, হাসি-ঠাট্টা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন তার ছড়াগুলোর মূল অনুষঙ্গ। স্বতঃস্ফূর্ত ধ্বনিময়তা, সহজ-সরল শিশু মনোরঞ্জক ছড়াগুলো উপস্থাপনায় অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আহসান মালেক দীর্ঘদিন ধরে লিখে চললেও তার বইয়ের সংখ্যা মাত্র ২৪। সংখ্যায় কম হলেও বইগুলোর গুণগত মান অন্যন্য।
আগামী ১৬ জুন আহসান মালেকের ৭০তম জন্মদিন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৩ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রামে। বাবা শহীদ আবদুল জব্বার ভূঁইয়া। মা প্রয়াত তৈয়বুন নেসা বেগম। লেখালেখির শুরু স্কুলজীবনে। ৩০ জানুয়ারি ১৯৭০ সালে চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত দৈনিক আজাদীর আগামীদের আসর-এ প্রথম লেখা প্রকাশ। সেই যে লেখালেখির শুরু আর থামাথামি নেই। নিরন্তর লিখেই যাচ্ছেন। আমরা আহসান মালেকের শতায়ু সুন্দর, সুস্থ জীবন কামনা করি।
আহসান মালেকের একটি খুবই চমৎকার ছড়ার বই ‘পা পিছলে আলুর দাম’ বইটিতে ২৫টি ছন্দবন্ধ ছড়া রয়েছে। ছড়াগুলোর এমনই প্রাণ যেই পড়ে সেই মজা লুটে। যেমন,
ভর দুপুরে কড়া রোদে
চড়–ইয়ের বউ বাচ্চায়,
ইচ্ছে মতো লাফায়-ঝাঁপায়
বাগানের চৌবাচ্চায়।
কিচিরমিচির করে ওরা
মাথায় তোলে বাড়ি,
কী ঘটেছে দেখতে মালি
ছোটে তাড়াতাড়ি।
কাণ্ড দেখে মৌলি হেসে
যেই দিয়েছে তালি,
আঁতকে উঠে শানের ওপর
ধপাস বনমালি।
(চড়–ই ও মৌলি- পৃষ্ঠা,৫)
আরেকটা ছড়া পড়ার লোভ সামলাতে পারছি না। নিশ্চয় পাঠকেরও ভালো লাগার হবেই।
সারাদিন তুই নাকি
হাতে পায়ে চুলকাস,
বলি তবে চুপিচুপি,
আমড়া ও কুল খাস।
সেই সাথে থেকে থেকে
খুব জোরে হাঁচি দিস?
সেরে যাবে বিলকুল
খেলে কিছু কিসমিস।
শাস্ত্রীয় মতে বটে
এটা হলো টোটকা,
এই কথা বলেছিলো
হাবুলের ছোটকা।
ছোটদের কাছে সব কালেই ভূত একটা ভয়ংকর বিষয় হয়ে মনের মাঝে ঘণ্টা বাজায়। ভূত নিয়ে গাঁও গ্রামে রয়েছে কত রকমের গাল গল্প। ভূত নাকি সন্ধ্যা হলেই রাস্তায় বেরুয়। অন্ধকারে যাকে পায় গাঢ় মটকে দেয়। নানা ভয়ের কথা ভূত নিয়ে। সেই ভূত নিয়ে আহসান মালেক লিখেছেন অপূর্ব একটি ছড়া।
শাকচুন্নির নাকি এবং
মামদো ভূতের পুত,
রাতের কালে গাছের ডালে
খেলছে ছি কুত কুত।
গাইছে আবার থেকে থেকে
নাকি সুরে গান,
গান শুনে সব ছেলে-বুড়োর
আঁতকে ওঠে প্রাণ!
মওকা পেলে যখন-তখন
জাপটে ধরে বেশ,
মটকে দিয়ে ঘাড় ও মাথা
জীবন করে শেষ!
সেই ভয়েতে খোকা-খুকু
হয় না ঘরের বার,
দুিশ্চন্তায় কপালে ভাঁজ
জাগছে বাবা-মার।
এমনি করে ভূতের দলে
ঠিক বারোটি মাস,
গোবেচারা মানুষগুলোর
যাত্রা করে নাশ!
(ভূত ভূতালির কাণ্ড, পৃষ্ঠ-১০)
আহসান মালেক হালকা একটা বিষয়কেও ছন্দ মাত্রা তাল লয়ে রচনা করেন সুন্দর ছড়া। যেমন,
ঘানায় আছেন নানা-নানি
মিয়ামিতে মামি,
জাভা দ্বীপে বাবা থাকেন
ঢাকায় থাকি আমি।
ইরান দেশের বিরান মাঠে
মামার উটের খামার
সামারখন্দে ব্যবসা কাকুর
পিতল এবং তামার।
আফ্রিকাতে হীরার খনি
দেন পাহারা ভাইয়া
ভাবি থাকেন গাঁয়ের বাড়ি
ফেনীর ছাগলনাইয়া।

বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে
আমার যত আপনজন
নানান কাজে, নানান সাজে
করছে ওরা বিবরণ।
(বিশ্ব জুড়ে আপনজন, পৃষ্ঠা- ১৪)
আহসান মালেক একজন নিপুণ ছড়ার কারিগর। সমাজের নানা কিছুতে তার চোখ। অনেক বাড়িতে দুরন্ত অনেক ছেলে থাকে। তারা শুনে না কারো কথা। অবাধ্য থাকে মা-বাবারও। সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়াই পুরো গ্রাম। তার দস্যিপনার কাছে কেউ টিকতে পারে না। তেমনই এক দুরন্তপনা ছেলের কিছু সাংঘাতিক কাণ্ডকে নিয়ে বুনেছেন চমৎকার একটি ছড়া।
কী সাংঘাতিক ছেলে রে বাবা
কী সাংঘাতিক ছেলে?
গাছের আগায় রাত্রি কাটায় নিজের বাড়ি ফেলে!
টিকিট ছাড়া চড়ে বসে
সিলেটগামী রেলে!
ঘোল দিয়ে সে গোসল সারে
ময়রা বাড়ি গেলে!
কী সাংঘাতিক ছেলে রে বাবা,
কী সাংঘাতিক ছেলে,
তেলাপোকা দেয় ছেড়ে রোজ
হাঁড়ির গরম তেলে!
শীতের দিনে আগুন পোহায়
তোষক-কাঁথা জে¦লে।
কী সাংঘাতিক ছেলে রে বাবা,
কী সাংঘাতিক ছেলে,
হঠাৎ সেদিন উধাও হলো
দস্যিপনা ফেলে।
বেশ কিছুদিন কেটে যেতে
শেষে খবর মেলে-
হিমালয়ের চূড়ায় উঠে
ডাংগুলি সে খেলে!
(কী সাংঘাতিক ছেলে, পৃষ্ঠা- ২০)
আহসান মালেক আমাদের শিশুসাহিত্যে অহংকার করার মতো অর্জন করেছেন নিজের আসন। তিনি ছড়া-কবিতা লেখেন। সাহিত্যের অন্য শাখায়ও তার কাজ রয়েছে। তবে তিনি ছড়ায় বেশ সাবলীল। ছড়াকে ছোটদের জন্য লেখা বলা হয় বলে হয়তো এ কারণে ছড়া ৮/১০/১২ লাইনের বেশি কেউ লিখতে চান না। বড় ছড়া লেখা যাবে না তা কিন্তু নয়। তবে বড় ছড়া লিখতে হলে মুনশিয়ানাও চাই, অনেকের নেই সে গুণ। আহসান মালেকের দীর্ঘ ছড়া লেখার শক্তি রয়েছে। তিনি তেমনি একটি ৫২ লাইনের দীর্ঘ ছড়া লিখেছেন আলোচ্য বইয়ে।
মেষ রাশি অনিমেষ
অনিয়মে কাটে দিন,
শোধ কভু দেয় না সে
হোক তার যত ঋণ।
ও পাড়ার কালু শেখ
রাশি নাকি বৃষ হায়,
লম্বাটে গড়নের- লিকলিকে কৃশকায়।
শ্যামলীর আইবুড়ি
মিথুনের রিনা রায়,
রাতদিন বসে ভাবে
ইঁদারার কিনারায়।

সিংহের মতো তেজী
নয় কানা ভানুসিং,
হাবভাবে মনে হবে
যেন তিনি মহা কিং।
বৃশ্চিক হারু বাবু
নয় মোটে বিচ্ছু,
মানে খুঁজে বুড়ো হলো
বোঝেনি সে কিচ্ছু।

বারো জাত মানুষের
রং ঢং কত না,
যার যার মতো চলে
কেউ কারো মতো না।
(বারো জাতের মানুষ, পৃষ্ঠা- ২৪)
নন্দিত ছড়াকার আহসান মালেকের ছন্দ দোদুল ষষ্ঠ ছড়াগ্রন্থ ‘পা পিছলে আলুর দাম’। এছাড়া শিশুতোষ ছড়ার বই রয়েছে আরো ৫টি, যৌথ ছড়া ৪টি, সমকালীন ছড়া ১টি, কর্ম ও জীবন ১টি, লোককাহিনি ৫টি, ছোটদের গল্প ১, মুক্তিযুদ্ধের গল্প ১টি, সম্পাদনা ৬টি।
পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। কাজী কাদের নওয়াজ শিশু শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০০০, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০০৪ অর্জন করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়