সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে ভুক্তভোগীরা

আগের সংবাদ

উন্নয়ন ও প্রত্যাশায় ফারাক অনেক : ক্লিন সিটি খ্যাত রাজশাহীর মানুষ অনেক সেবা পান না

পরের সংবাদ

অংকুশ আসবে অংকুশ আসবে না

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দোলা যেদিন আমাদের বাড়িতে এসেছিল, তখন ঘোর অন্ধকার দুঃসময়। ঘরে আলো জ¦ালানোর মতো সাহস ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে একটি কক্ষে বসবাস। বলা যায়, এতে দোলাদের একটা আশ্রয় মিলল। দোলার মা এবং দোলা চুপচাপ বসে বসে নিরন্তর কি যেন ভাবত। আমরাও ওদের নিয়ে ভেবেছি। কোনো পথ খুঁজে পেতাম না। ভয় এবং জীবন-মৃত্যু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। এ রকম সময়ে সময়ও ফুরায় না। উদ্বাস্তু জীবনের এই যে সময়, তা কখনো কাটতে চায় না। নিজেদের রোদনের মøান-মগ্নতায় অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার সুরে হৃদয়ের গভীরে বাজে।
কখন দিন, কখন রাত, কখন যে ভোর হয়! শুধু দু’বেলা ভাত ও চায়ের সময় ওদের সঙ্গে দেখা হয়। কথা হয়। এক সময় দোলার নামও জানা হলো। দোলার মাকে মাসিমা ডাকতেও শুরু করি।
অংকুশ নিয়ম করে প্রতিদিন খাবার সময় হলে আধখোলা দরজায় টোকা দিয়ে বলে, ‘মাসিমা খাওয়ার সময় হয়েছে’। মা-মেয়ে তখন দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অংকুশ। দোলা সবে স্কুল পেরিয়ে কলেজে পড়ছে। আমাদের মধ্যে ছেলেমেয়ে এমন কোনো দূরত্ব প্রথম দিন থেকেই ছিল না। মেয়েদের চলনে-বলনে কথাবার্তায় নিম্নকণ্ঠ এটা লক্ষ্য করার মতো। দোলার মধ্যে কখনো পুরুষের স্পর্শের মাদকতা, শিহরণের কাঁপন ফুলের পাপড়ির মতো বাতাসে দুলে উঠত কিনা, জানি না। তবে মাঝে মাঝে দোলার দুষ্টু-মিষ্টি মুখ অংকুশের হৃদয়ে দোলা দিত।
ওর নাম মায়ের কাছে প্রথম শুনেছিলাম। ‘দোলা’। হঠাৎ করে একদিন কথায় কথায় দুষ্টুমি করে দোলাকে বলেছিলাম, ‘দোল দোল দুলুনি রাঙামাটির চিরুণি।’ চিরুণি চুল আঁচরানোর জন্য ব্যবহার হয়। পরিচয়ের প্রথম দিকের এই একটি লাইন আমাকে বারবার নাড়া দিয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধের আগুনপোড়া লেলিহান শিখার মধ্যেও অংকুশ কখনো ‘দোলা’কে মন থেকে আড়াল করতে পারেনি। স্বপ্ন ও বাস্তবতা কখনো একবিন্দুতে মিলাতে পারেনি।
অংকুশ যতবারই দোলার কাছে নিজেকে সমর্পণের জন্য মনে মনে কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে, ততবারই অনেক দূরে বৈশাখী ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে উড়ে পালিয়েছে। মনে মনে অনেক গল্প তৈরি করেও দোলাকে একটি বারের জন্যও বলা হয়নি, ‘তোমাকে ভালোবাসি’। এতো কাছেও, এতো দূরে। অনেক। অনেক দূরে। এটা হয়তো দুঃসময়ের বৈরী হাওয়ার নীল দংশন।
দোলা সময়ের শিকার হয়ে এই বাড়িতে দ্বিধান্বিত সময় পার করছে মাকে নিয়ে। অংকুশও শহরের বাসায় বই, বিছানাপত্র রেখে এক কাপড়ে পালিয়ে নিজ বাড়িতে পরবাসী হয়ে আছে। মা-বাবার সঙ্গে শহরের ভাড়া বাসা ফেলে গ্রামের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছে।
বাবার বন্ধু হরিনাথ কাকাও মেয়ে দোলা আর তার স্ত্রী শ্রাবণী মাসিমাকে নিয়ে এসেছে নিজ বাড়িতে। অংকুশের বাবা আশুতোষ বাবু। পুরনো বাড়ি। উপরে টিন। চারপাশে বেড়া। সামনে দেউড়ী ঘর। মাঝে উঠান। পেছনে পুকুর। পুকুরের ঘাট। গ্রামেরই স্বাভাবিক ঐতিহ্যের একটি বাড়ি। অংশুমানের বাড়ি। অংশুমান অংকুশের দাদাঠাকুরের নাম। অংকুশের নাম দাদার নামের সঙ্গে মিল রেখে রাখা হয়।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যাওয়ার পথের একটি পাহাড় ঘেঁষা গ্রাম। চাষবাস আর পাহাড়ি সম্পদের ওপর নির্ভর। হিন্দু-মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় বংশপরম্পরায়। তাই তো নিজ বাড়িতে ফিরে আসা। ভয়-শঙ্কাহীন।
শ্রাবণী মাসিমাকে বাবা বৌদি বলে ডাকত। অংকুশ গ্রামেই ফেরার পর থেকে তাই শুনছে। মা দোলার মাকে দিদি বলে ডাকে। এই সম্পর্কটা দ্বিধার ব্যবধান ঘুচিয়ে ধীরে ধীরে একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে। মূলত বাবার কারণেই দোলারা এখানে উঠেছে। বাবা আশুতোষের সঙ্গে দোলার বাবা হরিনাথের সম্পর্ক বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে পাশাপাশি বিভাগে পড়ার কারণে। বাড়ি যদিও একই জেলায় নয়। দুই জেলার রীতিনীতি, ভাষা সম্পর্কে দুজনের মধ্যে সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। দীর্ঘ সাত বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষেও যোগাযোগ ছিল। মাঝেমধ্যে দুজনের মধ্যে পোস্টকার্ডে চিঠি লেখালেখি। কখনো চোখ ভুলিয়ে দেখিনি। চিঠি হাতে নিয়ে বাবাকে জানিয়েছি, তোমার বন্ধু হরিনাথ কাকুর।
টেবিলে রাখো।
হরিনাথ কাকুরা থাকত কুমিল্লা শহরে, সরকারি চাকরির সূত্রে। আশুতোষ বাবুর চাকরি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। হরিনাথ কাকু বাবাকে শহরের বাসায় মা-মেয়েকে দিয়ে আবার চাকরির স্থলে ফিরে গেল।
হরিনাথ কাকু যাওয়ার সময় বাবাকে বলল, ‘অবস্থা বুঝে ফিরে আসব, তোমার বাড়িতেই উঠব’। কথাটা বাবার মুখেই শোনা।
অংকুশ গ্রামে প্রাইমারির পাঠ চুকিয়ে, শহরে স্কুল-কলেজের পাঠ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। হরিনাথ কাকু কুমিল্লায় পরিবার নিয়ে বসবাস করত। হরিনাথ কাকুর গল্প শুনতে শুনতে খুবই কাছের মানুষ মনে হয়। খুবই আপন মনে হয়েছে। হরিনাথ বাবুর এক মেয়ে এও শুনেছে। প্রথম দেখা হলো এপ্রিলে শহরের বাসা হয়ে যখন বাবা-মার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে এলো। অংকুশের মধ্যে সময়ের বৈরী বাতাসেও কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হলো না। সহজভাবে মেনে নেওয়াতে আশুতোষ বাবু মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। মা স্বপ্নময়ীরও। যত সংকোচ ছেলে অংকুশকে নিয়ে। কারণ, সহজে সে অনেক কিছু মেনে নিতে পারে না।
আশুতোষের পরিবার নানা দুর্ভোগের ভোগান্তিতে বেড়ে ওঠা একটি অতি সাধারণ পরিবার। এই সময়ে বাড়িতে নিজেদের বিপদের মুখে অন্য একটি পরিবারের দুজন সদস্যের আশ্রয়ে অংকুশের মনে কোনো দ্বিধার জন্ম হয়নি। বাবা আর মায়ের মতো। সে নিজেও হয়তো ভাবল, একজনকে পাওয়া গেল কথা বলার জন্য। আড্ডার জন্য। কিংবা সময়ের তরী পাড়ি দেয়ার জন্য। মাও হয়তো। বাবা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাজে ফিরে যাবে। অথবা গ্রামেই থেকে যাবে। কিংবা নিগ্রহের মুখে উদ্বাস্তু স্রোতের একজন হয়ে চলে যাবে সীমান্তের ওপারে। এই ভাবনায় সকাল-সন্ধ্যা-রাত যায়। এক একটি দিন-রাত পার করে। দেশের ভেতরের প্রতিটি মানুষই এভাবে দিনকাল পার করছে।
অংকুশ রাজপথের মিছিলে কখনো যায়নি, এমন বলা যাবে না। ঊনসত্তরে আন্দোলনের সময় বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্দোলনে, মানুষের অধিকার আদায়ে, ছাত্রদের বিভিন্ন দাবিতে রাজপথের উত্তাল মিছিলে নেমেছে। এই চেতনার পরিবেশের অংকুশের প্রবেশ একজন ছাত্র হিসেবে। ছাত্ররা সাধারণত নিঃস্বার্থ এবং সত্য পথের যোদ্ধা। অংকুশের মতো একজন ছাত্র বোঝে জীবনের কাজ কী? ধাপে ধাপে নিজের জীবন নির্মাণের পাশাপাশি অন্যের জীবনের কথা, রাষ্ট্রের কথা, অধিকারের কথা ভাবে। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে পথে নেমে পড়ে। তখন একজন ছাত্র কেবল ছাত্র নয়, সংগ্রামের অগ্রভাগের সৈনিক। সাচ্চা সত্যের সৈনিক। স্বার্থচিন্তা করার তখন কোনো সময় অংকুশদের মতো ছাত্রদের মনে থাকে না। পথভ্রষ্টের প্রশ্ন থাকে না। জীবন-মৃত্যুর মাঝে এক ধরনের নির্মোহ জীবনের দীক্ষায় রাজপথে আগুন ঝরায়। বাংলার অগ্নিঝরা সংগ্রাম সেই ইতিহাসেই বারবার এ কথা লিখেছে।
অংকুশ তাদেরই একজন। সেই সংগ্রামেরই নাম না-জানা ছাত্র। অংকুশের মনে সংসারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার জ¦ালা-যন্ত্রণা থেকে এক ধরনের জাগরণ এবং দুর্বিষহতা কাজ করেছে। মূল্যবোধ এবং অধিকার তাকে তাড়িত করছে। এই দুর্বিষহ সময়ে এসেছে। এমনই পুড়ে পুড়েই তো খাঁটি সোনা হয় এক একজন মানুষ।
মধ্যবিত্ত ঘরে সন্তান যেভাবে বেড়ে ওঠে, সেভাবেই অতি সাধারণভাবেই মাকে দেখেছে। অতি অল্পে সন্তুষ্ট। চাকরির নিবিষ্ট আয়ে বন্দি বাবা। বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশুতোষ বাবু হিসাবের খাতা খুলে বসে। ঘর ভাড়া, ছেলের খরচ, সংসার খরচ হিসাব করে দেখে নিজের দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য আর কিছুই থাকে না। তারপরও আশুতোষ বাবু সন্তুষ্ট। ছেলেকে যা দেয়, তাতেই অংকুশও খুশি। চলে যায়। অংকুশ জানে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী তো এভাবেই চলে। নীরবে-নিভৃতে ছাত্রত্বের পাঠ চুকায়। ভবিষ্যতের জন্য হিসাবের খাতা মিলাতে মিলাতে আশুতোষ বাবু আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। চাকরিজীবন এখন মৃত্যুর মুখোমুখি। পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনা। মানুষের অসহায় অনিঃশেষ যাত্রা- দেখতে দেখতে চোখ বুজে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন এক অন্ধকার কালের ছবি ভেসে ওঠে। তারপরও স্বপ্নের নৌকায় বসে আশুতোষ বাবু মুক্তির স্বপ্ন দেখে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রত্যাশিত মুক্তির। মানুষ নির্ঘুম রাতের পরও মোরগডাকা ভোরের জন্য কান পাতে। ভোরের সুরেলা আজান মানুষের মনে মুক্তির ধ্বনি তোলে।
নির্মোহ ভাবে বাড়িতে সময় কাটাতে অংকুশের ভালো লাগছে না। বসবাস করছে মাত্র। ছাত্রজীবনের, শহরের হাজার মিছিলের ডাক কান পাতলে শুনতে পায়। সময়ের ঘণ্টা হৃদয়ে বাজে। টানে এই সময়ের অস্তিত্বের সংকট। আত্মপরিচয় রক্ষার স্পৃহা।
অংকুশ গ্রামে ফিরে এলে পুরনো স্কুল সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হয়। ওদের অনেকেই শহর থেকে গ্রামে ফিরে এসেছে। পুরনো দিনের স্মৃতির পাতায় হাঁটতে হাঁটতে একসময় মুক্তিযুদ্ধ, অতীত, স্কুল পালানো, স্কুলের সহপাঠিনী সুন্দরীর কথাও এসেছে। প্রাসঙ্গিকভাবে বারবার উঠে এসেছে দুঃসময়ের আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধ, বাংলার মুক্তি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব- বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ।
প্রবাসী অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজুউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুলের কথা। মওলানা ভাসানী, মনি সিংহ প্রবীণ নেতারা এখন কেমন আছেন? শরণার্থী জীবনের করুণ চিত্র! বিশেষ করে ২৫ মার্চের রাতের হত্যাযজ্ঞ। গ্রামের ফিরে আসা ছাত্র, বেকার যুবক, চাকরিজীবীদের এসব ভাবিয়েছে। মুক্তির পথ একটাই যুদ্ধ এবং যুদ্ধ। মুক্তির যুদ্ধ।
অংকুশ এবং বন্ধুদের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয় ভেতরে-বাইরে। প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধাদের খবরাখবর নেয়া। স্বাধীন বাংলা বেতার, বিবিসি, আকাশবাণী বেতার নিয়ম করে শোনা। কলকাতার বেতারে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দীপনামূলক সংবাদ পরিক্রমা।
গ্রামের অনেকেই ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গেছে। গ্রামের বহু কৃষক, শহরের দিনমজুর, শ্রমিকরাও দুয়েকজন করে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে। অংকুশের সহপাঠী রহিম, অতনু, সুখলাল, জালালও গেছে।
রহিম ও অতনুর সঙ্গে প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়া করেছে অংকুশ। রহিম ছিল ভিতু, মাঠে ফুটবল খেলতে নামত না। মা-বাবা বকা দিত তাই। আজ সে রহিমও একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাড়ির আঙিনায় চুপিচুপি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবর শুনতে শুনতে স্কুলের বন্ধু রহমতের কাছে সব শুনে অবাক হয়ে যায় অংকুশ। মানুষ সময়ে বদলায়, সময়ে যোদ্ধা হয়ে ওঠে। সাহসী হয়ে ওঠে। লড়াই করে বেঁচে থাকার জন্য, জাতির মুক্তির জন্য। এটাই এখন জীবনে সত্য। মৃত্যুর মুখে অসম্ভব এক অনতিক্রমনীয় বাস্তবতা।
একদিন রহমত এসে বলে, গ্রাম থেকে আরেকটি দল আগামী কিছু দিনের মধ্যেই সীমান্ত পার হবে। আমিও যাব। এমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই রহমতের মধ্যে ফুটে ওঠে। রহমত বলছে, দোস্ত উপায় নেই। আজকের বাস্তবতা হলো যুদ্ধে যেতে হবে- নিজের জন্য, দেশের জন্য। বাজারের স্কুলে পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্প করেছে। যে কোনো সময় গ্রামে অভিযান চালিয়ে মুক্তির খোঁজে তরুণদের ধরে নিয়ে খাল পারে গুলি করে মারবে। আশপাশের অন্যান্য গ্রামে এমন হত্যাকাণ্ড করছে। মেয়েদেরও তুলে নিয়ে গেছে।
এসব ঘটনায় রহমত মনে করে, আমাদের চলে যাওয়া এখন শ্রেষ্ঠ সময়। রহমত সরাসরি বলে বসে, অংকুশ, তোমাদের যদি যাওয়ার ইচ্ছা থাকে আমি যাওয়ার আগে জানিও। পরে যখন আরেকটি দল যাবে, সেই সঙ্গে যেতে পারো। মেসো-মাসিমাকে না জানিয়ে হঠাৎ করে একদিন চলে যেতে হবে। নিভৃতে। এক কান থেকে আরেক কানে যেন না যায়। পাকিস্তানি দালালরা এসব নানাভাবে খবর রাখছে। এভাবেই আমাদের সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল ওই পাড়ার রক্ষিত আর সবুরদের, ওদের ধরে নিয়ে গেছে। আর ফিরে আসেনি।
অংকুশও নিজের সঙ্গে নিজেই ভেতরে ভেতরে যুদ্ধ করছে। একদিকে মা-বাবা, অন্যদিকে দোলা আর মাসিমা। বাবা শহরে। দোটানার মধ্যে নিজেকে অংকুশ খুবই অসহায় মনে করছে। একদিকে অসহায় আত্মসমর্পণ, অন্যদিকে যুদ্ধ করতে করতে বীরের মতো মৃত্যুবরণ। বিজয়ের পতাকা হাতে দেশে ফেরা। ঘরে ফেরা- স্বপ্নে দেখা বাংলাদেশে। লাল-সবুজ পতাকা। মুক্তির লাল ঝান্ডা।
এ রকম এক সময়ের অংকুশ নিজেই মুখোমুখি। নিজের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং পরিবারের নিরাপত্তা, দোলার কথা অংকুশকে আলাদাভাবে ভাবিয়েছে। সে চলে গেলে পুরুষহীন হবে একটি পরিবারের তিন নারী। এদের নিরাপত্তার কথা মনে আসে, আর যায়। কঠিন সময়ের মধ্যে আলোর সন্ধান খুঁজতে খুঁজতে চোখে-মুখে অস্থির এক ছবি ফুটে ওঠে।
মা তাকে একদিন একা পেয়ে জিজ্ঞেস করে বসে, অংকুশ তোর কী হয়েছে। কয়েক দিন থেকে কেমন চুপচাপ দেখছি। অংকুশ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। শুধু বলেছে, মা, গ্রামের অবস্থা ভালো না। অনেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিচ্ছে। মা, এটুকু শুনেই অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অংকুশ ভাবে, মা নিশ্চয় দোলা এবং মাসিমার সঙ্গে আলাপ করেছে। শুনছে সামনের শুক্রবারে বাবা বাড়ি আসবে নদী পথে। গ্রামের একজনকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে। এই দুঃসময়টা মানুষে মানুষে মেলবন্ধন তৈরি করেছে। সড়ক পথ, বিশেষ করে কালুরঘাট ব্রিজের আর্মির চেকপোস্টের কথা ভেবে। নদীপথ ব্যবহার করছে লোকজন। মুখের খবরেও মানুষের বিশ্বাস এবং দৃঢ়বন্ধন। অংকুশ মনে করে মুক্তিযুদ্ধেরই অনন্য শক্তি এটা। বাঙালির জয় অনিবার্য। ‘জয় বাংলা’ শব্দ মনের মধ্যে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে।
অংকুশ ভাবছে বাবা আসলে শহরের অবস্থা জানা যাবে। পাক আর্মির এবং দালালদের উদ্ধত ভাব ও ঘরবাড়ি পোড়ানোর নীতি কেমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আত্মরক্ষার জন্য যে যার মতো করে ভেতরে ভেতরে এই সময়ের একটি রোডম্যাপ তৈরি করে নিয়েছে। বাবার ভাবনাটা জানা দরকার।
এখন আমার কী করা দরকার, বাবা কী ভাবছে। এসব ভাবনা নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে অনেকটা ক্লান্ত অংকুশ। কখনো কখনো অস্থির। এটাও ভাবছেই দ্রুত, কোনো একটা পথ বেছে নিতে হবে। নীরবে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ, নাকি লড়াই করতে করতে বীরের গৌরবে মৃত্যুবরণ। কোনটা শ্রেয়? মনের মাঝে দোলাচল। অস্ত্র তুলে নেবে দেশের তরুণদের মতো। অংকুশ ভাবে। বুকে রণাঙ্গনের যুদ্ধের ছবি চোখে ভেসে ওঠে।
চারদিকের খবরাখবরে অস্থির গ্রামের অবস্থা। শহরেও অস্থিরতা। অফিসে অফিসে পাক-দালাল শ্রেণিদের উৎপাত ইতোমধ্যে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা পাকিস্তান প্রেমে উচ্ছ¡ল। মুক্তিদের যেখানে-সেখানে খুঁজছে। মুক্তির সমর্থকদেরও সার্চ করছে। হিন্দু-মুসলিম বাছ-বিচার না করেই।
অংকুশ বাবাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। মাকে শুধু বলে, বাবাকে বাড়ি আসতে বলো। আসলে, সবার ভালো লাগবে। বাবাকে অনেক দিন দেখি না। মেসোকেও বাড়ি আসতে বলো। আর কিছুই বলে না। মাকে ও মাসিমাকেও না। দোলাকেও না। দোলার সঙ্গে এসব নিয়ে খুব একটা কথা হয় না।
দেশের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের শক্তি বাড়ছে। মিলিটারিরাও গ্রামে গ্রামে ঢুকছে। ভয় এবং আতঙ্ক নিয়ে। মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বাড়ছে। কিছুদিনের মধ্যে আরো বাড়বে। গেরিলা বাহিনীর ট্রেনিং জোরদার হয়েছে। কিছু কিছু গেরিলা গ্রুপ দেশে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনী তাই অস্থির হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান সমর্থক দালালদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে।
রহমত জানাল, যে কোনো সময় সে সীমান্ত পাড়ি দেবে। সহপাঠী রহিম, অতনু, সুখলাল ও জালাল ট্রেনিং শেষে গ্রামে ফিরে আসছে। একদল যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছি। সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার গাইড আসলেই রওনা দেব। অংকুশ তুমি যদি যাও, তৈরি হয়ে থেক।
দোলাও যতই দিন যাচ্ছে। সেও মনে মনে অনেকদূর হেঁটে হেঁটে কোনো কূল পায় না। এর শেষ কোথায় আজো বুঝে উঠতে পারছে না। সময়ের দোটানায় আর প্রাত্যহিকতায় বাধা এ জীবন। দোলা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে কৃতজ্ঞতায় শিকড়ের গভীরতার দিকে এগিয়ে যেতে চলেছে যেন। দোলাও বলতে চেয়েছে, ‘আমিও তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে চাই’। দোলার পক্ষে শেষ পর্যন্ত বলা সম্ভব হয়নি।
দোলাও বারবার দোলা দিয়ে যাচ্ছে অংকুশের ভেতরে-বাইরে। অন্দরমহলে ঝড়। দুর্ভাবনা সর্বদা ঘিরে ধরে।
অংকুশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের দুটি বছর পার করে এসেছে। কখনো নারীর শরীরের মাদকতা ঘ্রাণ কিছুরই তাকে স্পর্শ করেনি। এটা হয়তো অংকুশের মনের ভুল বা ওভাবে নারীকে নিয়ে, সহপাঠিনীদেরও নিয়ে ভাবেনি। মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। আগে পড়া, তারপর জীবনভাবনা। মানুষ কখনো সঙ্গ-নিঃসঙ্গতার ভেতরে থেকেও একা হতে পারে না। অবচেতন মনে হলেও স্পর্শ করে, সেই ভাবনার ভেতরে হয়তো দোলা এসে তাকে স্পর্শ করেছে। যে কথা তারও আজো বলা হয়নি। আবেগ লালিত স্বপ্নের ভেতর কেবল ডুবে আছে।
কখনো হয়তো বলেই ফেলবে, পাখির নীড়ের ভেতর থেকে চোখ তুলে, এতদিন কোথায় ছিলেন, আমার-অন্ত প্রাণ, দোলা সেন।
সময়ের বাস্তবতায় দোলা ও অংকুশ আলোর খোঁজা পথহারা পথিক। হয়তো এই অসময়ে এও এক ধরনের আবেগময়তার পাগলামী হতে পারে। এভাবে মুক্ত আকাশে পাখি হয়ে উড়ে উড়ে স্বপ্নের নীড়ে ফেরা হয়তো হবেই একদিন। হয়তো বকুল ফুল ঝরে পড়বে বকুলতলায়। কিন্তু বকুল গাছ এই ধ্বংসযজ্ঞের কালেও স্থির দাঁড়িয়ে থাকবে কি, আগামী মৌসুমেও সৌরভ ছড়ানোর জন্য। দোলাও হয়তো একদিন দোলা দেবে। অংকুশও মুক্ত বাতাসের শ্বাস নেবে।
সভ্যতার অসম্ভব শূন্যতার ভেতর তারুণ্যের টগবগে দিন নিয়ে এখন গ্রামের আলপথ দিয়ে চাষিদের হেঁটে যাওয়া দেখতে দেখতে অংকুশের ভোরের আকাশ দেখা হয়। শীতল পুকুরপাড়ে বসে মাছরাঙার তীক্ষè ঠোঁটে মাছ শিকারের দৃশ্য দেখতে দেখতে রোদ গায়ে মেখে ঘরে ফেরে সকালবেলা। মায়ের হাতের চা। এটাই অংকুশের এখনকার প্রতিদিনের গল্প।
এক ভোরে পাশে এসে দাঁড়ায় দোলা।
দোলা দ্বিধার পাহাড় ডিঙিয়ে, নিজের একাকীত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ভোরের নির্মল আলোকে বেছে নিয়েছে। অংকুশের মনের আকাশে উঁকি মারে এ ভোরের অন্য এক আলো। ভোরের আলোয় স্নান সেরে কোনো এক গ্রামের চিরন্তন ছবি ভেসে ওঠে। বালিকা বধূ ঘরে ফেরার পায়ের চিহ্ন রেখে রেখে। ভেজা চুলে যেনা ভোরের শিশির। আগামী দিনের এমন জলছবি অংকুশের মনকে নাড়া দিয়ে যায়।
দোলা নতমুখে দাঁড়িয়ে দূরের আকাশে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। যেখানে মনের আনন্দ, সেখানে আলোর ঝর্ণা। ধুয়ে যায় মনের ভেতর-বাইর।
অংকুশ নিজের অজান্তেই বলে উঠে, বসো।
নিঃশব্দে বসে পড়ে দোলা।
অংকুশ ভাবছে।
‘জীবনের রূপ এখানে এসে নতুন আলো ছড়ায়। আমি চোখ তুলে ওর দিকে তাকাই। চোখের পাতা নামিয়ে বিষণ্ন মনে আমার পাশে বসে আছে। এই সময়ে একরাতের কথাও মনে পড়ে। হাসি পায়। কান্নাও পায়। তুমি আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে, সেদিনই বুঝলাম। আমারও সেই রাতের কথা এখন খুব মনে পড়ছে।’
‘আর্মি আসছে, আর্মি আসছে। গ্রামে রব উঠে। আর্মি আসছে জেনে তোমার মা আমার ফর্সা মুখে মাটির পাতিলের কালি মেখে দিয়েছিল। তুমি খুব রেগে গিয়েছিলে মাসিমার ওপর। মায়ের জাত মেয়েদের সম্ভ্রম বোঝে, লজ্জা বোঝে। কিশোরী বয়স থেকে মায়েদের মেয়ের শরীর নানান পরিবর্তন ও সমস্যা জানে। কিছু পুরুষ এসব বোঝে, সব পুরুষ বোঝে না। না, বুঝার দলে তুমিও একজন। যাদের বোন আছে ওরা বোঝে। কিছু বিষয়, বয়ঃসন্ধি ভয়। সচেতনতা। তোমার বোন ছিল না। তাই, তুমি চিৎকার করে মাসিমাকে আমার টোল পড়া গালে-মুখে কালি মাখাতে নিষেধ করেছিলে। এ ধরনের কাজ সেই সময়ে অনেক মাই করেছে।’
দোলা একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে পুকুরপাড়ে শূন্যতা হাহাকার করছে। সেই মানুষটি প্রতি ভোরের আকাশে-বাতাসে নিজের অস্তিত্ব জানান দিত। রাতের আঁধার কেটে আলো আসার আগেই সে উধাও হয়ে গেল। দোলার মন বিষণ্নতায় ডুবে গেল। ভোরের আকাশের যেন আলো ও হাহাকার। কান্নার রোল করে উঠল শ্রæতিতে। কালো মেঘে ছেয়ে গেল বুঝি পুরো আকাশ। পাখির গান থেমে গেছে। পাখিরা গান গাইতে ভুলে গেছে সেদিন। সঙ্গে সঙ্গে দোলাও।
তারপর একদিন, দোলার মনে হচ্ছে লবণাক্ত চোখের জল শিশির বিন্দুর সঙ্গে মিশে জয়ধ্বনি করে উঠল। দূরে গাছের ডালে লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে।
দোলা একা নয়, তার সঙ্গে সাড়ে সাত কোটি মানুষ মুক্ত আকাশের নিচে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য বদ্ধ ঘরের দরজা-জানালা সব মুক্ত করে দিয়েছে। মুক্ত স্বদেশ। আজ আর মোরগডাকা ভোরের আলো নয় কেবল, পূবের আকাশে লাল সূর্য উঠছে। রক্ত পতাকার মতো।
অংকুশের জন্য অপেক্ষায় দোলা লিখতে থাকে, প্রতিদিনের কথার দিনলিপি। স্মৃতি ও সত্তায় ভবিষ্যতের স্বপ্ন। একটি বুলেটেই নিঃশেষিত। একটি বুলেটেই স্বাধীনতার লাল সূর্য। দোলারও মুক্তি। দোলারও প্রাণ কেঁদে উঠল।
অংকুশ চলে গেছে একরাতে কাউকে কিছু না বলে। অংকুশের বাবা আশুতোষ বাবু বুঝতে পেরেছিল। ছেলে এমন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছে। এখন আর বাধা দিয়ে লাভ নেই। আশুতোষ ছেলেকে শুধু একটি কথাই বলেছে, ‘জীবন মৃত্যু বিয়ে- এই তিন নিয়ে ভাবতে নেই’।
দোলাও সেদিন বাধা দেয়নি। এখন ফেরার এমন একটা দিনের জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? অংকুশ কোনো উত্তর দেয়নি। দোলা বলে, আমাকেও তোমার সাথী করতে পারতে। রান্নাটা শিখে নিতাম। প্রয়োজনে মানুষ সব পারে। রণাঙ্গন থেকে না ফেরা পর্যন্ত ভাত চুলায় তোমার জন্য অপেক্ষা করতাম। না, অবলা নারী বলে ভেবে আমাকে সঙ্গে নিলে না। আমাকে নিয়ে কোনো বিপদে পড়। পথের হাজার ঝামেলা। তরুণীকে নারীকে নিয়ে হাজার মানুষের কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হবে। তাই কি আমাকে নিলে না! অন্য সব মানুষের পাশে তোমাকে কখনো ভাবিনি অংকুশ। তুমি যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরের মানুষ আমাকে নানা প্রশ্ন করেছে। আমার ভেতরের কোমলতা মোমের মতো গলে গলে বুকের ভেতর পরতের পর পরতে জমে গেছে। পাথর সমান ওজন আমি আর বহন করতে পারছি না।
অংকুশ তুমি এখন ভালো আছ? কোন সেক্টরে আছ? কেমন আছ? শত্রæর নিশানা তাক করতে ভুল কর না। তবেই আমার আত্মা শান্তি পাবে। ভালোবেসে যে বন্ধনে জড়িয়েছ, সে বন্ধন কখনো ছিন্ন হওয়ার মতো নয় জাতীয় সংগীতের মতো হৃদয়ে বাজে। জাতীয় পতাকার মতো আমার আকাশে ওড়ে। আর ওড়ে। তুমি ফিরে এলে তোমার নাম দেব বাংলাদেশ ……..

অংকুশ চলে যাওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে গ্রামে রব উঠল পালা পালা। আর্মি আসছে, আর্মি আসছে। অংকুশের হাত ধরে সে কি দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে পাহাড়ের কাছে এক বাড়িতে। সেই প্রথম অংকুশের হাতের স্পর্শ। সেই স্পর্শই মনে পড়ল নির্ভরতা এমন এক শব্দ। নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে মন এমন ভয়ংকর সময়েও নেচে উঠল।
দোলা জানে, অংকুশ আর ফিরে আসবে না। হাজার অংকুশের বদলে এলো সাড়ে সাত কোটির এক বাংলাদেশ।
দোলা আর মাসিমাকে দোলার বাবা হরিনাথ বাবু এসে নিয়ে গেল। অংকুশের মা আর বাবা নিঃশব্দে জলভরা চোখে বিদায় দিল। চোখে জল আছে বলেই মানুষের দুঃসহ যন্ত্রণা অনুভব করা যায়। স্বাধীনতা এমন অশ্রæ নদীর স্রোতে দোলাও একজন সৈনিক। স্মৃতির সাগরে ভাসতে ভাসতে হয়তো কখনো কোথাও নোঙর করবে দোলার জীবনতরী।
অংকুশের বাবা আর মা গ্রাম থেকে আর কোনোদিনই শহরে ফিরে গেল না। অংকুশ আসবে, অংকুশ আসবে না!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়