প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের আন্দোলন দুদিন স্থগিত : প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার আশ্বাস বিএসএমএমইউ উপাচার্যের

আগের সংবাদ

আনন্দে পাঠ উৎসবে মূল্যায়ন : ষষ্ঠ ও সপ্তমে চলছে ‘ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন উৎসব’, ঈদুল আজহার পর মূল্যায়নের বিশ্লেষণ

পরের সংবাদ

সংসদে রাশেদ খান মেনন : জামায়াতকে প্রকাশ্য সভার অনুমতি কিসের আলামত?

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এমপি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু, তাদের শত্রæর প্রয়োজন নেই। বেশ কিছু সময় আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার বাগে রাখতে স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল, দূরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর কৌশলের অংশ। তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। আর এ জন্য শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেয়া প্রয়োজন। এটা তাদের পুরনো নীতির ধারাবাহিকতা। এছাড়া হঠাৎ করে জামায়াতে ইসলামকে প্রকাশ্য সভার অনুমতি কিসের আলামত তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মেনন।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় এসব মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
মেনন বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। তীব্র খাদ্য সংকটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্যসমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সবকিছু করছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন করে আমি বলতে চাই বাইডেন সাহেব ট্রাম্পকে সামলান। আমাদের ঘর আমরা সামলাব। নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে রেখেই হবে। বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেয়া। তারেক রহমান নির্বাচন না করে ২০২৯-এর জন্য অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু বিএনপি এর মধ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। তার সেই স্বপ্নও পূরণ হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে। উন্নত সমৃদ্ধ অসা¤প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে।
জামায়াতকে প্রকাশ্য সভার অনুমতি কিসের আলামত : রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য আইনমন্ত্রী মাঝে মাঝেই সরকারের উদ্যোগের কথা বলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আমরা দেখলাম যে, সেই জামায়াতকে পুলিশ বেশ সমাদর করে অন্যের সভা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, জামায়াতকে ১০ বছর পর প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি দিয়েছে। এটা কিসের আলামত আমরা জানি না। এটা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন- জামায়াত যুদ্ধাপরাধীর দল, ঘাতক দল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের রায়ে একথা বলেছে। এর জন্য নতুন করে আদালতের রায়ের প্রয়োজন নেই। জামায়াত কিন্তু তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরেনি। ওই সমাবেশ করে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবিরই পুনরাবৃত্তি করেছে। বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা মজা করে বলেছিলেন বিএনপি-জামায়াত একই বৃন্তের দুটি ফুল। যে কথাটা আমি সব সময় বলি, এখনও বলছি- সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে। জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে একই কথা বলা যায়।
ডিজিটাল আইনের সমালোচনা করে মেনন বলেন, বিদেশিরাও এ নিয়ে কথা বলে। আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন এই আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। বিদেশিদের কথায় নয়, নিজ দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতার প্রশ্নে এই আইন হয় পরিপূর্ণ বাতিল বা নির্দিষ্ট গণবিরোধী ধারাগুলো সংশোধন প্রয়োজন।
বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম দুর্বলতার কারণে জিনিসপত্রের মূল্য একেবারেই লাগামছাড়া বলে মন্তব্য করেন তিনি। পেঁয়াজের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপেই বোঝা যায় যে বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা আগ্রহী নন। অথবা কাউকে সুবিধা দিতে চান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুতায়নের যে গৌরব অর্জন করেছিলেন, সা¤প্রতিককালেই কেবল নয়, বেশ কিছুদিন ধরে দেশের অধিকাংশ স্থানকে অধিকাংশ সময় অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে তাতে কালিমা লেপন করা হয়েছে।
ভ্রান্ত জ্বালানি আমদানি নীতির সমালোচনা করে মেনন বলেন, এলএনজি লবির মুনাফার স্বার্থ দেখতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উৎপাদনে বিনিয়োগ না করা এবং বাপেক্সকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ না উৎপাদন করে খাম্বা বসানো হয়েছিল, আর এখন বিদ্যুতের সক্ষমতা আছে, জ্বালানি নেই। এ যেন তেল ছাড়া পিদিম জ্বালানোর ব্যবস্থা। আমি আবার বলছি, জ্বালানি নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, বিদ্যুৎমন্ত্রী আর প্রধান আমলারা এর দায় এড়াতে পারে না।
মেনন বলেন, টিনধারীদের সরকারের সেবা পেতে হলে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দেযার প্রস্তাবনাকে সবদিক দিয়ে অনৈতিক, অন্যায্য আর এতে বৈষম্য আরো বাড়বে। এ দুটোই প্রত্যাহার করতে হবে। সার্বজনীন পেনশন স্কিমে যে চাঁদা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে তাতে খেতমজুর-গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের কাছে এ সুবিধা পৌঁছবে না। তাদের জন্য চাঁদার বিধান বাদ দিয়ে সেখানে নন-কন্ট্রিবিউটরি করলে পরে সেটা সত্যিকার অর্থে সার্বজনীন পেনশন হবে।
মেমন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে কিন্তু কার্যকর বাস্তবায়ন নাই। পাহাড়ে আবার অশান্তি। পাহাড়ের এই অশান্তি সমতলেও বিস্তৃত হয়েছে। কুকি-চিন ফ্রন্ট জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে যারা দেশের অভ্যন্তরে অশান্তি করতে চায়। কিন্তু এর ¯্রষ্টা কে, কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ফ্রন্টের তৈরি তা দেশবাসী জানতে চায়। আমি এ ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য দাবি করছি।
মেনন বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হাতে থাকলেও বাংলাদেশের সমাজ দ্রুতই বেদখল হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের পৃষ্টপোষকতায় ওহাবীবাদী-মওদুদীবাদী প্রচারণা বাংলাদেশ উদারনৈতিক ইসলামের ঐতিহ্য বিপন্ন। জন্ম নিচ্ছে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এদেশের অসা¤প্রদায়িক ঐতিহ্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। স¤প্রতি সময়ে দেশে সা¤প্রদায়িকতার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সংখ্যালঘু স¤প্রদায় নিজেদের আর নিরাপদ বোধ করেন না। তাদের মধ্যে মানসিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের নিরাপত্তা, মানসিক প্রশান্তি ও এদেশে তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
মেজর জেনারেল (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম তার বাজেট বক্তৃতায় টিনধারীদের ২ হাজার টাকা ট্যাক্স দেয়ার সমলোচনা করে এটি বাতিলের দাবি জানান। একই সঙ্গে এমপিদের ভাতা কমিয়ে দরিদ্রদের মাসিক ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন। টিনধারী হলেই ২ হাজার টাকা ট্যাক্স দেবার সমালোচনা করেন এমপি ডা. প্রাণ গোপাল দত্তসহ আরো অনেকে।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ জন পার্লামেন্টারিয়ান বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিটি পড়ে আমার মনে হয়েছে বিবৃতিটি বিএনপির ইউরোপিয়ান কোনো শাখা এই বিবৃতিটি দিয়েছে। এই ভাষায়, এই বিষয় এবং এত তথ্য ভুল, এত মিথ্যাচার এবং এত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন নাগরিক হিসেবে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ব্যাথিত হয়েছি। তারা বলেছেন, এখানে যারা সংখ্যালঘু, যারা খিস্টান, যারা হিন্দু- তাদের উপরেও নাকি নির্যাতন নিষ্পেষণ হচ্ছে, তারা নাগরিক হিসেবে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আওয়ামী লীগের জন্ম থেকে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দল। এই আদর্শ থেকে কোনোদিন আওয়ামী লীগ বিচ্যুত হয়নি। জাসদ সম্পাদক এমপি শিরীন আখতার বলেন, অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, কোনোভাবেই যেন সেখানে সাম্প্রদায়িক শক্তি ঢুকতে না পারে। বর্তমানে দেশে সর্বকালের সব চেয়ে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছে এবং প্রস্তাবিত বাজেটে বৈষম্য বাড়বে।
গতকাল বুধবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় আরো অংশ নেন এমপি কেরামত আলী, আব্দুল হাই, মাহবুব আরা গিনি, নারায়ণচন্দ্র চন্দ, নাসরিন জাহান রতœা, আবু জাহির প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়