সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

মিতু হত্যামামলা : বাবুলের ‘অনৈতিক’ সম্পর্কের তথ্য দিলেন ২ গৃহসহকারী

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তাদের গৃহসহকারী মনোয়ারা বেগম বাপ্পী প্রকাশ ফাতেমার অসমাপ্ত জেরা শেষ হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে তার সাক্ষ্য নেয়া হয়।
এর আগে গত রবিবার বাবুল আক্তারের ভারতীয় বংশোদ্ভূত বান্ধবীর বাসার গৃহসহকারী পম্পি বড়–য়া ও ফাতেমার অসমাপ্ত সাক্ষ্য নেয় আদালত। উভয়ের সাক্ষ্যে বান্ধবীর সঙ্গে বাবুলের অনৈতিক সম্পর্ক, এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে বাবুলের ঝগড়াসহ বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে।
সাক্ষ্যে পম্পি বড়–য়া জানান, ২০১৩-১৪ সালে তিনি কক্সবাজারের হলিডে মোড়ে বাবুলের বান্ধবীর বাসায় কাজ করতেন। বান্ধবীর স্বামী বিদেশে থাকতেন। ওই বাসায় মাঝে মাঝে বাবুল আক্তার সন্ধ্যার পর যেতেন এবং রাতে থাকতেন। গভীর রাতে কখন বাবুল বেরিয়ে যেতেন, তারা জানতেন না। তবে তিনি বাবুল আক্তারকে চিনতেন না। মিতু হত্যার পর টেলিভিশনে ছবি দেখে বাবুলকে চিনতে পারেন। বাবুলের বান্ধবী পম্পিকে এতই আদর করতেন যে তাকে নাইজেরিয়া নিয়ে গিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুর রশিদ জানান, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বাসার গৃহসহকারী মনোয়ারা বেগম বাপ্পী প্রকাশ ফাতেমার সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আদালত আগামী ২৬ জুন পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করেছে।
রবিবার ফাতেমা সাক্ষ্যে জানান, ২০১৩ সালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বাসায় কাজে যোগ দেন তিনি। বাবুল বদলি হয়ে চট্টগ্রামে আসার পর তাকেও নিয়ে আসা হয়। কক্সবাজারে বাবুলের বাসায় তার বান্ধবী সন্তান নিয়ে মাঝে মাঝে আসতেন। বাবুলের ব্যক্তিগত কক্ষে বসে তারা কথা বলতেন, তবে ওই কক্ষে অন্য কারো ঢোকার অনুমতি ছিল না। চট্টগ্রামের বাসায় আসার পর বান্ধবীকে নিয়ে বাবুল ও মিতুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। দুজন আলাদা কক্ষে ঘুমাতেন। মিতু একবার বাসা ছেড়ে চলে যেতে চাইলে বাবুলের ছেলে ও ফাতেমা মিলে তাকে নিয়ে আসেন। মিতু কক্ষের দরজা বন্ধ করে কাঁদতে থাকেন। দরজা খোলার পর বাবুল দেখেন, ফ্যানের সঙ্গে মিতুর ওড়না ঝুলছে, বাবুল সেটি খুলে ফেলেন। মিশনে যাওয়ার সময় বাবুল তার ব্যক্তিগত কক্ষ তালাবদ্ধ করে চাবি নিয়ে চলে যান। একদিন বাথরুমে গিয়ে দরজা খুলতে না পেরে মিতু আটকা পড়েন। তখন বাইরে থেকে তালা খোলার মিস্ত্রি নেয়া হয় বাসায়। মিস্ত্রিকে দিয়ে মিতু বাবুলের ব্যক্তিগত কক্ষের দরজাও খোলার ব্যবস্থা করেন।
ফাতেমা জানান, বাবুলের ব্যক্তিগত কক্ষে দুটি বই পাওয়া যায়, সেখানে বান্ধবীর কিছু ‘লেখা’ ছিল। মোবাইল ফোনে বাবুল ও বান্ধবীর ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি ও এসএমএস পান মিতু। এসএমএসগুলো ছেলের আর্ট পেপারে লিখে রাখেন। বাবুল মিশন থেকে দেশে ফেরার পর ওই কক্ষ খোলা নিয়ে মিতুর সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরপর বাবুলের ঢাকায় পদায়ন হয়। তিনি ঢাকা চলে যাওয়ার তিন দিন পর মিতুর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে, যেখানে লেখা ছিল পরদিন ছেলের স্কুলে একটু আগেভাগে যেতে হবে। তবে অন্য অভিভাবকদের কাছে এমন কোনো মেসেজ আসেনি বলে তিনি কয়েকজনকে ফোন করে জানতে পারেন। পরদিন মিতু প্রতিদিনের সময়ের কিছু আগে ছেলেকে নিয়ে বের হন। ১০-১৫ মিনিট পর ভবনের নিরাপত্তা রক্ষী বাসায় যান। এরপর ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় যায়। তার জুতা ও পোশাকে রক্ত ছিল।
বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন জানান, পিবিআইয়ের শেখানো মতে ফাতেমা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফাতেমা বাড়ির আশপাশ সম্বন্ধে, তার এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারের নাম কিছুই জানে না বলেছে। এছাড়া বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম আসতে বাসভাড়া কত এসব জিজ্ঞেস করা হলে কিছুই জানে না বলেছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যামামলা করেন। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পিবিআই বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামিসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। অন্যরা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া।
চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়