নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে হাইকোর্টে তলব

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়া কোন দিকে? বরিশালে চার প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

পরের সংবাদ

গরু পালন করে লাখোপতি সৈয়দপুরের ফেন্সিআরা : জীবনযুদ্ধে জয়ী একজন সফল নারী

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : স্বপ্ন পূরণের অসীম যোদ্ধা ফেন্সিআরা বেগম। তার বাড়ি উপজেলার পূর্ব বেলপুকুরের তিনপাই গ্রামের কুড়ারপাড়ে। তিনি এখন জীবনযুদ্ধে জয়ী একজন সফল নারী। তার স্বামী ছিলেন একজন ছোট ব্যবসায়ী।
স্বামীর আয়ের ওপর ছিল পুরোপুরি নির্ভরশীলতা। কিস্তু স্বামীর অল্প উপার্জনে সংসারে অভাব লেগেই থাকত। ধার-দেনা যেন কখনই পিছু ছাড়ে না। প্রায় সময় হা-ভাতে দিন কাটত। সংসারের এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দিন-রাত চিন্তায় মগ্ন থাকতেন তিনি।
চারদিকে শুধু হাহাকার। বেঁচে থাকার জন্য খড়কুটার নাগালও পেতেন না তিনি। অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার খুটে খুটে খেত ফেন্সিআরাকে।
ঠিক এমন সময়ে পরিচয় হয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নীলপল্লী মহিলা উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান কামরুন নাহার ইরার সঙ্গে। ইরা পরিচালিত ওই সংস্থাটি নারী উদ্যোক্তা তৈরির বাতিঘর। দুস্থ নারীদের প্রশিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করাই সংস্থাটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
আর এ সংস্থার মাধ্যমে হাতে-কলমে সেলাই ও কারচুপির কাজ করার প্রশিক্ষণ নেন ফেন্সিআরা। প্রশিক্ষণ শেষে নিজ বাড়িতে বসে সেলাই ও কারচুপির কাজ শুরু করেন তিনি। কাজের পরিধি দিন দিন বাড়তে থাকে। কাজ বৃদ্ধির সঙ্গে আয়ও বাড়ে। সংসারের খরচ বাদে আয়ের অবশিষ্ট অংশ সঞ্চয় করেন। এক সময় জমাকৃত অর্থ দিয়ে একটি দুধেল গাভী কিনেন। এই একটি গরু দিয়েই ফেন্সিআরা শুরু করেন গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প।
বর্তমানে সবসময়ে তার গোয়ালঘরে ছোট ও বড় মিলে ৮ থেকে ১০টি গরু মজুত থাকে। বছরে গড়ে ৫-৬ বার তিনি গরু বিক্রি করেন। গরুর খাওয়া খরচ বাদে একেকটি গরু বিক্রি করে তিনি গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। বছরে কমপক্ষে গরু মোটাতাজা প্রকল্প থেকে ফেন্সিআরা আয় করেন ৩-৪ লাখ টাকা।
খামারের লাভের টাকা দিয়ে সংসার খরচ বাদ দিয়ে যা হাতে থাকে তা সঞ্চয়ের ঝোলায় জমা হয়। এ অর্থ দিয়ে বাড়িতে করেছেন মুদি দোকান, বসিয়েছেন খড়কাটা মেশিন। ফেন্সিআরা তার ব্যবসার কাজে স্বামীকেও যুক্ত করেছেন।
স্বামী ও স্ত্রী দুজন মিলেই এসব প্রকল্প পরিচালনা করছেন। প্রায় ১০ বছরের মধ্যেই সংসারের আর্থিক চিত্র পুরোপুরি পাল্টে ফেলেছেন। কাঁচা ঘরের জায়গায় আধাপাকা বাড়ি করেছেন। ছেলেমেয়েদের করেছেন শিক্ষামুখী। ফেন্সিআরা নিজে স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন হলেও ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করছেন।
হতদরিদ্র সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনায় গ্রামের মডেলে পরিণত হয়েছেন ফেন্সিআরা বেগম। আশপাশের গ্রামের মহিলারাও ফেন্সিআরার মডেল অনুসরণ করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে ফেন্সিআরা ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে তার খামার, দোকান ও খড়কাটা মেশিন থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই একটি মধ্যবিত্ত পরিবার বেশ ভালোভাবেই চলা সম্ভব। তার মতে, সফলতার সিঁড়ি পেরোতে হলে কারো না কারো সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি সহযোগিতা পেয়েছেন নীলপল্লী মহিলা উন্নয়ন সমিতির কর্ণধার ও নারী উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর কামরুন নাহার ইরার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান কামরুন নাহার ইরা ভোরের কাগজকে বলেন, জাতীয় পুঁজির বিকাশ ও আর্থিক ভিত্তি মজবুত করতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও প্রশিক্ষিত ও সচেতন করে তুলতে হবে। তার মতে, অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা মিলে সমবায় সমিতি গড়ে তোলা সম্ভব। এভাবেই একসময় জাতীয় পুঁজির বিকাশ ঘটলে দেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
তিনি আরো বলেন, অর্থের কারণে পিছুটান না থাকলে সব সময়ে ভালো কাজ করা সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধুরও স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। এজন্য সমবায় সমিতির কথা বারবার বলেছেন তিনি।
ইরার মতে, বাড়ি বাড়ি ছোট ছোট শিল্পের মাধ্যমে আয়কৃত অর্থের মাধ্যমে জাতীয় পুঁজির বিকাশ ঘটবে। অর্থ ব্যয় করে বিদেশ থেকে মেশিন ও যন্ত্রাংশ নিজ দেশে আনা সম্ভব। এতে করে ঘটবে শিল্পের বিকাশ। হ্রাস পাবে বেকারত্ব। তার মতে, আমদানিনির্ভর নয়, রপ্তানিমুখী দেশ হিসেবে আমাদের বিশ্বের কাছে যেতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়