নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে হাইকোর্টে তলব

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়া কোন দিকে? বরিশালে চার প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

পরের সংবাদ

এপ্রিলে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : গত কয়েক মাস ধরেই ৯ শতাংশের বেশি হারে মূল্যস্ফীতি হলেও ব্যাংক খাতের ওপর গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসায় এপ্রিলে আমানত বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে আমানত সেভাবে বাড়ছে না, উল্টো এই ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এক্সেস লিকুইডিটি নেগেটিভে চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে- এপ্রিল মাস শেষে ব্যাংক খাতের আমানত দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪৮ লাখ কোটি টাকা। মার্চ মাসে এটি ছিল ১৫ দশমিক ২৩ লাখ কোটি টাকা। গত এক মাসে যে পরিমাণ আমানত বেড়েছে এর সিংহভাগ (প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা) বিভিন্ন মেয়াদের টাইম ডিপোজিট, বাকিটা ডিমান্ড ডিপোজিট।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা জানান- ব্যাংক খাতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরছে, এটা সত্য। তবে এটি সব ব্যাংকে সমানভাবে বাড়ছে না। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট করার ক্ষেত্রে এখনো গ্রাহকেরা ভরসা করতে পারছেন না। এসব কারণে গ্রাহকেরা কনভেনশন ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা করছে। কারণ কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোতে এখনো বড় ধরনের স্ক্যামের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া কনভেনশনাল কিছু ব্যাংকে গুড গভর্নেন্স আছে, সেইসঙ্গে তাদের পারফরমেন্সও ভালো, তাই এ ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট বেশি যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে- এপ্রিলে ডিপোজিটের গ্রোথ গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছে। এর আগে ইসলামী ধারার কয়েকটি ব্যাংক থেকে অনিয়ম করে ঋণ বিতরণের কারণে গতবছরের ডিসেম্বরে ডিপোজিটের গ্রোথ ৬ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। অবশ্য এর পর থেকে গ্রোথ রেট বৃদ্ধির দিকে রয়েছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা আরো জানিয়েছেন- ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিটের পরিমাণ আগের তুলনায় বাড়ছে। গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে গুজবের কারণে ব্যাংক খাতে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছিল। তবে সেটি এখন কাটতে শুরু করেছে। গ্রাহকদের ব্যাংক খাতের উপর আস্থা ফিরে আসছে, যার রেজাল্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ডিপোজিটের গ্রোথে। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য অবশ্যই একটা ভালো মেসেজ।
তবে ব্যাংক খাতে ডিপোজিটের গ্রোথ ভালো হলেও লোনে খুব বেশি গ্রোথ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে- এপ্রিলের আগের মাসের তুলনায় লোন মাত্র ৬ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩৫ লাখ কোটি টাকা। আমদানি এলসি কমে যাওয়াই লোন গ্রোথ কম হওয়ার অন্যতম কারণ। ইমপোর্ট এলসি খোলা বাড়লে প্রাইভেট সেক্টরে লোনের ডিমান্ড তৈরি হয়। এখন এলসি খোলা অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো এলসি খোলা হতো, এখন সেটি ৪-৫ বিলিয়নে নেমে এসেছে। এছাড়া জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইনভেস্টমেন্টও কম হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে- এপ্রিলে কারেন্সি আউটসাইড ব্যাংক বা মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ মার্চের তুলনায় ৮৭০৫ কোটি টাকা বাড়লেও এ মাসের প্রান্তিক প্রবৃদ্ধি আগের ৯ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ (১১ দশমিক ২৩ শতাংশ) অবস্থানে আছে।
গতবছরের ডিসেম্বরে এ গ্রোথ ২৭ শতাংশ পার করে। অর্থাৎ মানুষ হাতে টাকা রাখার বদলে ব্যাংকে টাকা জমা রাখাতেই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটিও ব্যাংক খাতে ডিপোজিট বাড়ার একটি কারণ, বলছেন ব্যাংকাররা।
ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে : দেশের ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকের আমানতের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়লেও শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবাহ ও এক্সেস তারল্য ব্যাপক হারে কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেভেলপমেন্টস অব ইসলামিক ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ (জানুয়ারি- মার্চ ২০২৩) রিপোর্ট থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে চলতি ২০২৩ এর মার্চ প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় গ্রাহকের আমানত বেড়েছে ৫১৭০ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যদিও ২০১৮-২০২২ সাল পর্যন্ত আমানতের প্রবৃদ্ধি হার ছিল ১৫ শতাংশের বেশি।
একইসঙ্গে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বা ৪৬,০১১ কোটি টাকা। এ ঋণের প্রবৃদ্ধি গত চার বছরের একই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান- ?ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার কিছুটা কারণ রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে একাধিক শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় অন্যান্য ইসলামী ব্যাংকগুলোতেও প্রভাব পড়েছে। গ্রাহক নতুন করে আমানত না রেখে টাকা তুলে নিয়েছে, এর ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি অনেকটা কমেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে- ইসলামিক ব্যাংকগুলোর এক্সেস লিকুইডিটি চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে কমেছে। ২০২২ এর মার্চ শেষে এক্সেস লিকুইডিটির পরিমাণ ছিল ২৫,১৩৭ কোটি টাকা। যা চলতি বছরের মার্চে এসে কমে দাঁড়িয়েছে ১৯৯০ কোটি টাকা। সে হিসেবে আগের বছরের তুলনায় এটি কমেছে ৯২ শতাংশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়