গ্রিন ভয়েস : প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সাইকেল র‌্যালি

আগের সংবাদ

বাজেটে কেউ খুশি নয় : সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে, পূরণ হয়নি ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি

পরের সংবাদ

মধ্যনগরের হাওড়ে বোনাস ৫ কোটি টাকার ‘ডেমিধান’

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : এখনো পানি আসেনি হাওড়ে। মৌসুমি বৃষ্টিতে হাওড়ের নিচু ধান ক্ষেতগুলো টইটুম্বুর। আর এতেই কাটা ধান গাছগুলো হয়েছে সতেজ ও সজীব। তাই ইতোপূর্বে কেটে নেয়া সেই ধান গাছের গোড়ায় আবারো বের হয়েছে সোনালি রঙের চকচকে ধানের শিষ। একই গাছে দ্বিতীয় দফায় উৎপাদিত এ ধান স্থানীয়দের কাছে ‘ডেমিধান’ নামে পরিচিত। চলতি বছর হাওড়াঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জানা গেছে, ধানের পাশাপাশি গোখাদ্য হিসেবে খড় সংগৃহীত হয়েছে বিপুল পরিমাণ। এরপর ডেমিধানের ফলন হাওড় কৃষিতে যোগ করেছে আরেকটি নতুন মাত্রা। প্রান্তিক কৃষক ও ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক পরিবারের অসম্পূর্ণ গোলার শূন্যতা পূরণে চলছে ডেমিধান কাটার আয়োজন। কৃষকরা জানান, হাওড়ের নিচু জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করা হয়। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে এসব জমির কাটা ধান গাছের গোড়ায় ১৮-২০ দিন পর আবারো ধানের শিষ বেরোয়। ২৫-৩০ দিনের মধ্যে সেই ধান কাটা যায়। ফলন কম হলেও এ ধানে কোনো চিটা থাকে না। আকারে আগের চেয়ে কিছুটা ছোট এ ধানের চালের ভাত খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।
সরজমিন সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন হাওড় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবখানেই কমবেশি ডেমিধান কাটা চলছে। সাধারণত সচ্ছল বা ধনী কৃষকরা এ বছরে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে মহাখুশি। এখন ক্ষেতের ডেমিধান নিয়ে তেমন আগ্রহ না থাকায়, তাদের জানিয়ে আশপাশের ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকরা তাদের পরিবারের সদস্যের নিয়ে অনেকটা নীরবে কেটে ঘরে তুলছেন এ ডেমিধান। পাশাপাশি দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষক নিজেদের জমিতেই যেটুকু ফলন হয়েছে তা কেটে ঘরে তুলছেন।
উপজেলার বানচাপড়া হাওড়ের পূর্বপাশের জমিতে ডেমিধান কাটছিলেন কৃষক দেবকুমার তালুকদার। হাঁটু পানিতে নেমে একাকী একমনে ডেমিধানের গোছায় কাঁচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মধ্যদুপুরের দাঁতাল রোদের কামড়ে উদোম গা বেয়ে ঝরছে ঘাম। তার কাছে জানতে চাইলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, এ জমির মালিক পার্শ্ববর্তী পলমাটি গ্রামের সচ্ছল কৃষক মৃত লাল হোসেনের ফকিরের পরিবার। জমির মালিকের অনুমতি নিয়েই তিনি ডেমিধান কাটছেন। এ পর্যন্ত প্রায় কিয়ার (৩২ শতক) খানেক জমির ধান কেটেছেন। পেয়েছেন প্রায় ৪ মণ। দেখা গেছে, হাওড়জুড়ে তার মতো আরো অনেকেই নিজের বা কোনো ধনী কৃষকের জমিতে অনুমতি নিয়ে ডেমিধান কাটছেন। এ যেন ধান কাটার ছোটখাটো অনাড়ম্বর আরেকটি উৎসব।
রংচী গ্রামের কৃষক সাইকুল ইসলাম জানালেন, টাঙ্গুয়ার হাওড়ে প্রায় ৫ কিয়ার জমির ডেমিধান তিনি কেটেছেন। কিয়ারপ্রতি প্রায় ৩ মণ ধান পেয়েছেন। তার মতো ওই গ্রামের আরো ৭০-৮০ জন দরিদ্র কৃষক ও ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক ডেমিধান কেটেছেন। সদর ইউনিয়নের বোয়ালার হাওড়ের কৃষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার বলেন, হাওড়াঞ্চলে দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য এ সময়ে সাধারণত কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকে না। ফলে গ্রামের শ্রমজীবী মানুষরা কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাড়ি জমাত। কিন্তু এ বছর হাওড়ে দেরিতে পানি আসায় এসব মানুষ ডেমিধান কাটতে পারছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতে পারায় তাদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মধ্যনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না ভোরের কাগজকে বলেন, হাওড়ে এখনো পানি না আসায় আগাম জাতের ধান ক্ষেতগুলোতে দ্বিতীয় দফার ফলনে কৃষক লাভবান। কারণ দ্বিতীয় দফার এ ফলনের জন্য কৃষকের অর্থ বা শ্রম কোনোটাই বিনিয়োগ করতে হয়নি। তাই একে কৃষকের বোনাস হিসেবে অভিহিত করা যায়। তিনি আরো জানান, মধ্যনগর উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ডেমিধানের ফলন হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১ টন হিসাবে এ থেকে প্রায় দেড় হাজার টন ধান কৃষকের ঘরে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়