গণতন্ত্র মঞ্চের হুঁশিয়ারি : সমাবেশে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না

আগের সংবাদ

পাহাড় কাটার হিড়িক, দুই ফসলি জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ভাটায়

পরের সংবাদ

ফলন বিপর্যয়েও দাম পেয়ে খুশি ঈশ্বরদীর লিচু চাষিরা : মৌসুমে উপজেলায় ৫৫০ কোটি টাকার লিচু বিকিকিনির সম্ভাবনা

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোস্তাক আহমেদ কিরণ, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে : প্রকৃতির বৈরী আচরণে চলতি বছর মৌসুমি ফল লিচুর ফলন কম হওয়ায় খানিকটা আক্ষেপ ছিল চাষিদের। কিন্তু বাজারে ওঠানোর পর ভালো দাম পাওয়া খুশি লিচু চাষি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ঈশ্বরদীতে চলছে মৌসুমি ফল লিচু ভাঙা ও বাজারজাতকরণের উৎসব। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকারের ধারণা, এ বছর ঈশ্বরদীতে ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকার লিচুর ব্যবসা হবে।
ঈশ্বরদী এখন পাকা লিচুর রঙে লাল। উপজেলার সলিমপুর, সাহাপুর, ল²ীকুন্ডা ও দাশুড়িয়া ইউনিয়নে বাড়ি বাড়ি চলছে লিচুর উৎসব। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল বর্ণের রসালো ফল লিচু। এসব গাছ থেকে কেউ লিচুর আহরণ, কেউ বাছাই-বাচাই, কেউ ব্যস্ত প্যাকেট করতে। শুধু বাগান নয় হাটের অবস্থাও একই। চোখ যেদিকে যাবে সেই দিকেই রসালো ফল লিচুর ঝুড়ি। কারো মাথায় ঝুড়ি আবার কারো ভ্যানভর্তি লিচু। বেচাকেনাতেও লিচুর জমজমাট অবস্থা। সবমিলে সরগরম ঈশ্বরদীর লিচুর হাট ও বাগানগুলোতে।
দেশের সব জায়গাতেই ঈশ্বরদীর লিচুর কদর রয়েছে। চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এটির চাষ ব্যাপকহারে বাড়ছে। দিনাজপুরসহ দেশের কয়েকটি জেলায় লিচুর উৎপাদন হলেও ভৌগোলিক কারণে ঈশ্বরদীর লিচুর বাজারজাত শুরু হয় একটু আগেই।
সরজমিনে দেখা যায়, বাগান থেকে লিচু পেড়ে তা ঝুড়িতে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। ফলে তৈরি হয়েছে উৎসবের আবহ।
রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ট্রাকবোঝাই করে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে- এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন কিছুটা কম। যখন মুকুল এসেছিল তখন অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে, ফলে মুকুল ঝরে গেছে। আবার যখন লিচু বৃদ্ধির সময় ছিল তখন বৃষ্টির অভাব ছিল, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ছিল। ফলে লিচু আকারে ছোট হয়েছে এবং ফলন অনেক কম হয়েছে। গত বছর যে গাছে ৫-১০ হাজার লিচু হয়েছে সেই বাগানে এবার ৩-৭ হাজার লিচু হয়েছে।
তবে ফলন বিপর্যয় হলেও দামে খুশি চাষিরা। লিচুর বেচাকেনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে হাটগুলো। প্রথম দিকে মোজাফফর (স্থানীয় নাম আটি) জাতের লিচু বিক্রি হয়েছে হাজারে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, পরে অবশ্য সেই একই জাতের লিচু বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এখন চলছে আরেক জাত বোম্বাই লিচু কেনাবেচা। এ জাতের লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার ওপরে।
ঈশ্বরদীর সলিমপুরের লিচু চাষি সাহেব আলী বলেন, এ বছর তার ৮০টি লিচু গাছের মধ্যে ৪৫ থেকে ৫০টি গাছে ভালো ফলন হয়েছে। মুকুল আসার সময় অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বৃদ্ধির সময় বৃষ্টির অভাবে ভালো ফলন পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। এদিকে চলমান প্রচণ্ড তাপদাহে গাছে থাকা লিচু বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রচুর লিচু গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক শাহজাহান আলী পেঁপে বাদশা ভোরের কাগজকে বলেন, এবার লিচুর ফলন কম কিন্তু দাম খুব ভালো। তাই আমরা খুশি। আমি প্রতিদিন ৪-৫ হাজার লিচু নিয়ে আসি এ হাটে। এই দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা কিছু লাভবান হবেন। তবে হাটের তুলনায় বাগানেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কারণ- বাগান থেকে ব্যাপারীরা সরাসরি লিচু কিনছেন বাগান মালিকদের থেকে।
শিমুলতলা লিচু হাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও আড়তদার আদর্শ ফলভাণ্ডারের মালিক লিটন প্রামাণিক বলেন- গত কয়েক দিন থেকে দেশের বিখ্যাত ও সুস্বাদু বোম্বাই লিচু হাটে ওঠা শুরু হয়েছে। চায়না লিচুও আসছে। দেশি লিচুর চেয়ে বোম্বাই ও চায়না লিচুর দাম বেশি। খেতেও সুস্বাদু। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার লিচু শুধু শিমুলতলা হাট থেকেই বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকারের বলেন, স্বাভাবিকভাবেই যে গাছে ৯০-৯৫ শতাংশ লিচু ধরে পরের বছরে সেই গাছে ৬০-৬৫ ভাগ গাছে মুকুল আসে। এজন্য এবার ফলন কম। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় দমন বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়েছিলাম। বৈরী আবহওয়ার কারণে গাছে স্প্রে করারও পরামর্শ দিয়েছিলাম। কৃষকরা পরামর্শ গ্রহণ করেছেন তাই ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়