‘প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অন্তরায়’

আগের সংবাদ

রাজনীতির ছায়ায় ব্যবসার জাল : জামায়াতের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক দেশ জুড়ে বিস্তৃত, গোপনে চলছিল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, এবার প্রকাশ্যে মাঠে নামার হুংকার

পরের সংবাদ

বাজেটে পুঁজিবাজার না থাকায় হতাশ বিএমবিএ-ডিএসই

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে নতুন কোনো আলোচনা না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করে আগের দাবিগুলোই পুনরায় তুলে ধরেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন কোনো কিছু আরোপ করা না হলেও কোনো প্রণোদনাও দেয়া হয়নি। বিশেষ করে বাজেটে পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোনো আলোচনা না থাকায় আমাদের মনে হচ্ছে এ খাতটি সরকারের কাছে একেবারেই অবহেলিত। এতে বিনিয়োগকারীরাসহ খাতসংশ্লিষ্ট সবাই হতাশ হয়েছে। এদিকে দেশের বিকাশমান অর্থনীতিতে মূলধনের জোগান দিতে পারে শক্তিশালী পুঁজিবাজার। তাই বাজেটে ক্যাপিটাল মার্কেট অবহেলিত হওয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
গতকাল রবিবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) যৌথ উদ্যোগে সিএমজেএফ অডিটরিয়ামে বাজেট-পরবর্তী আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান। সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় ‘বাজেট ২০২৩-২৪ : প্রেক্ষিত পুঁজিবাজার’ শীর্ষক সভায় সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান। সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ডিবিএ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টিনেজারের সঙ্গে তুলনা করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের অর্থনীতি টিনেজার অর্থনীতি। টিনেজার হওয়ায় এর একটা উদ্যম রয়েছে, কিছুটা লাফালাফিও রয়েছে, তাই এটিকে নজরদারি করতে হচ্ছে। টিনেজারদের যেমন মা-বাবাকে নজরদারি করতে হয়, তেমন আমাদেরও গ্রোয়িং অর্থনীতিকে নজরদারি করতে হচ্ছে, এটাকে ফিডিং করতে হচ্ছে। আর এ ফিডের প্রধান উপকরণই হচ্ছে ক্যাপিটাল। তিনি বলেন, যে যাই বলুক না কেন অর্থনীতির দরকার মানি, মানি এবং মানি। মানি কয়েক রকম হয়- তরল মানি, এসেট ও ফ্রোজেন মানি। এসব অর্জন হবে যদি আমরা ক্যাপিটাল মাকের্টে শক্তি বাড়াতে পারি।
মন্ত্রী পুঁজিবাজার বিষয়ক দাবিগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমি মনে করি এখন আমরা যে পর্যায়ে পৌঁছেছি আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগের তুলনায় অনেক দক্ষ, আমাদের বেটার টেকনোলজি, বেটার বিজনেস কমিউনিটি রয়েছে, তাই এখন আর অগ্রিম আয় কর (এআইটি) দরকার নেই, এটি তুলে দেয়া যায়। সংশ্লিষ্ট অথরিটির সবার সঙ্গে আলোচনা করে এটি তুলে দিতে পারে। দ্বৈত কর থাকা উচিত নয় বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এটি কেন হবে, একজন মানুষ ট্যাক্সতো একবারই দেবে। এটির কারণ ব্যাখ্যা হওয়া করা উচিত, এর গভীরে গিয়ে দেখা উচিত।
এছাড়া মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে লিস্টেড হওয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এ আলোচনা সাত-আট বছর আগেও শুনেছি। এখনো শুনছি, কিন্তু বছরের পর বছর তারা লিস্টেড না হয়েই ব্যবসা করছে আমাদের দেশে। এ বিষয়ে আমাদের আরো চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, ট্যোবাকো ইত্যাদি খাত এর আওতার বাইরে। মাত্র ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কর রেয়াত উদ্যোক্তাদের তালিকাভুক্তি হতে উদ্বুদ্ধ করছে না। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য বাড়ানোর দাবি করেন বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান। এছাড়া তিনি লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বন্ডের ওপর অগ্রিম চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা, লেনদেন কর নামিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ করা, যা বর্তমানে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ। বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডকে পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখলে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি দাবি জানান। ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটের ভালো দিক হলো নতুন করে কোনো কিছু আরোপ করা হয়নি। তবে হতাশার ও খারাপ দিক হলো পুঁজিবাজারের জন্য কোনো প্রণোদনাই নেই, এমনকি পুঁজিবাজর সম্পর্কে কোনো আলোচনাও নেই।
পৃথিবীর অনেক দেশই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পুঁজিবাজার। কিন্তু সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেন যেন আমাদের দেশের পুঁজিবাজার সেই অবস্থানে যেতে পারছে না জানিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, সরকারের একটু নীতি সহায়তা পেলে আমাদের পুঁজিবাজার অনেক কিছুই দিতে পারবে। এখানে সেই সম্ভাবনা রয়েছে। রাজস্ব আহরণ পুঁজিবাজার থেকেই বড় জোগান দিতে পারবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে পুঁজিবাজার বিষয়ে কিছু থাকবে। কিন্তু এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছুই রাখা হয়নি। অথচ ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই। রোজারিও বলেন, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হলে আমাদের ছোট ছোট কোম্পানিগুলোর দিকে নজর দিতে হবে এবং তাদের পুঁজি সংগ্রহের সুযোগ দিতে হবে।
বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব না। এটি একটি রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে হয়ে থাকে জানিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, বাজেটে যখন পুঁজিবাজারের উপস্থিতি থাকে না, তখন বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি বার্তা যায়- সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবছে না। আমরা আশা করব প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় এটি স্থান পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়