টিসিবির জন্য চিনি ও ভোজ্য তেল কিনবে সরকার

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোন পথে : মূল্যস্ফীতি > ডলার সংকট > বৈদেশিক ঋণের সুদ ও ভর্তুকি ব্যয় > কর ও ব্যক্তি করদাতা বাড়ানো

পরের সংবাদ

দুর্নীতি কমাবে ‘ক্যাশলেস লেনদেন’ : পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সেমিনারে বক্তারা

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আমাদের দেশে একটার পর একটা বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছে। ডিজিটাল অর্থনীতিতেও এখন বিপ্লব এসেছে। অর্থনীতির অনেক অংশজুড়েই এখন মোবাইলের অবস্থান বলে জানিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার। তিনি বলেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে সারাদেশে বেশির ভাগ লেনদেন সম্পন্ন হবে ক্যাশলেস মাধ্যমে। আর মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন হলে তার একটা পদচিহ্ন রয়ে যায়। এর মাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতি শনাক্ত করা সহজ।
গতকাল বৃহস্পতিবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। ‘স্কোপ এন্ড পসিবিলিটিজ অব ডিজিটাল ফাইন্যানসিয়াল সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই কর্মশালা রাজধানীর বনানীতে পিআরআইর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকারসহ অন্যরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ জাহেদী সাত্তার বলেন, রেমিট্যান্সের কারণে অর্থনীতি বেঁচে আছে। এটা আসতে দিতে হবে। বেশি কড়াকড়ি করলে বেঁকে যাবে। ৭ থেকে ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো। ৩১ শতাংশ বিনিয়োগ না হলে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হতে পারে না। এটা করতে কমপক্ষে হলেও ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ লাগবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরাও দীর্ঘদিন থেকে ডলারের রেট বাড়াতে বলে আসছি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা ডলারের রেট রাখে। শেষ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ টাকার অবমূল্যায়ন করে ১০৬ থেকে ১০৮ টাকায় এনেছে। বাংলাদেশ প্রতিয়োগিতামূলক বাজার হয়ে গেছে। তাই ধরে রাখা সম্ভব নয়। বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। অনুষ্ঠানে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে গ্রামে যেতে বললেও যায়নি। তাই তৃণমূলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবা পৌঁছে গেছে ৯০ শতাংশ। পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রচলিত (ট্রাডিশনাল) ব্যাংকিং থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ৮৬ শতাংশ কম খরচ হচ্ছে। কারণ, লেনদেনে এজেন্টদের মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। এজেন্ট ব্যাংকিং আরো ভালো করতে হলে ব্যাংকিং সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে।
এজেন্ট ব্যাংকিং এন্ড ফিন্যানসিয়াল ডিপেনিংয়ের উপস্থাপনায় ড. আহসান মনসুর বলেন, কৃষিতে বিনিয়োগ করায় গ্রামীণ অর্থনীতি বদলে গেছে। গরুর গাড়ি দেখা যায় না। পাওয়ারটিলারে জমি চাষ হচ্ছে। ধান ভানতে ঢেঁকিও দেখা যায় না। মেশিনে অল্প সময়ে তা করা হচ্ছে। তাই গ্রামের কৃষক ও এসএমই উদ্যোক্তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রয়োজনীয় লেনদেন করছে। তবে গ্রামের অর্থনীতি আরো চাঙা করতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ ৭০-৮০ দশকের গ্রামের অর্থনীতি বর্তমানে আর গ্রামে নেই।
তিনি বলেন, গ্রামেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের ব্যবসা গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। কারণ কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতির কারণে লেনদেন বাড়ছে। ব্যাংকের সুদ হচ্ছে ৯ শতাংশ। যেখানে এনজিওগুলো এখনো সুদ নিচ্ছে ২৩ থেকে ২৫ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, করোনাকালে বিভিন্ন শাখা বন্ধ থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিং সমর্থন দিয়েছে। অল্প সময়ে খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। প্রায় গ্রামেই এজেন্ট ব্যাংকিং ছড়িয়ে যাবে এটা খুব দেরি নেই। একে আরো কার্যকর করতে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ও প্রশিক্ষণ খুবই দরকার। স্বচ্ছতা, সততা ও কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ডিজিটাল শিক্ষা পেলে গ্রামীণ অর্থনীতি পাল্টে যাবে বলেও জানান তিনি। তবে এখনো দুই কারণে মানুষের শহরমুখী প্রবণতা কমেনি বলে জানান এ অর্থনিীতিবিদ।
প্রথমত, বাচ্চাদের লেখাপড়া ও নদীতে কারো ঘর ভেঙে গেলে শেষ সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার আশায় শহরে চলে আসে। এ প্রবণতা শুধু আমাদের দেশে নয়, চায়না, ভারতসহ প্রায় দেশে এটা দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার বলেন, এনজিওগুলো এখনো ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ সুদ আদায় করছে। যেখানে ব্যাংক মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। তারপরও গ্রামের মানুষ বিভিন্ন সমস্যা থাকায় ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে না বা ব্যাংকে যাচ্ছে না। এখনো ৬৭ শতাংশ মানুষ এনজিও (এমএফআই) থেকে ঋণ নেয়। আর মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। তিনি আরো বলেন, স¤প্রতি আমরা ৮টি বিভাগে একটি সার্ভে করে দেখেছি। তাতে দেখা গেছে, মাত্র ১১ শতাংশ মানুষ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। তাদের মাত্র ১৮ শতাংশ ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখতে পেয়েছে। ৫৬ শতাংশ বলেছে ব্যাংক হিসাবের দরকার নেই। দবে ৪০ শতাংশ বলেছে তারা ব্যাংকে সঞ্চয় করে। তিনি আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাংকের সহায়তা পাচ্ছে ১২ শতাংশ। ৭৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। তবে এখনো ১২ শতাংশ মানুষ কোনো ফোন ব্যবহার করে না। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করছে মাত্র ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্টের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ হয়েছে ৩১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশির ভাগই জমা করেছেন গ্রামাঞ্চলের জনগণ। অন্যদিকে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৮৫১ কোটি। মার্চ মাসে ২৫৭৮ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। হিসাব বলছে বর্তমান এজেন্ট সংখ্যা ১৫ হাজার ৪০৯ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়