রাজধানীতে ধারণক্ষমতার ৬ গুণ যানবাহন চলাচল করে : ডিএমপি কমিশনার

আগের সংবাদ

মাছ সংরক্ষণ কর্মসূচি : জেলেদের প্রতিও নজর দিতে হবে

পরের সংবাদ

নতুন রূপে শাড়িতে

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেফালী সোহেল

যান্ত্রিক শহরের মধ্যে হারিয়ে ফেলা ঐতিহ্য হচ্ছে তাঁত। আর সেই তাঁতের তৈরি শতভাগ দেশীয় ঐতিহ্যের মোটিফে তৈরি শাড়ির আবেদন এখনও সার্বজনীন। নানা ধরনের শাড়িতে অনেকেই অনায়াসেই মানিয়ে নিচ্ছে এ আবহাওয়ায়। প্রতিটি শাড়ি বুননের পেছনে থাকে বয়নশিল্পীদের ধৈর্য আর অক্লান্ত পরিশ্রম। আর তাই তো প্রতিটি শাড়িই হয়ে ওঠে একেকটি গল্প।

যুগটা যেমনই হোক, শাড়ির আবেদন চিরন্তন ও সর্বজনীন। বাঙালি নারীর শাড়ির প্রতি রয়েছে অন্য রকম ভালোবাসা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি নারীর ফ্যাশনে অনেক কিছুর সংযুক্তি আর বিযুক্তি ঘটলেও এই একটি পোশাক কখনোই পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। নতুন নতুন রূপে ফিরে এসেছে বারবার।
তবে টেক্সটাইল বিপ্লবের এই যুগে সবাই এখন ঝুঁকছে যন্ত্রে তৈরি কাপড়ের পোশাকের দিকে। শাড়ির ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য।
তাই আমাদের হাতে বোনা দেশীয় তাঁতের শাড়ি, যা একান্তই আমাদের দেশের নিজস্ব পরিচয় বহন করে, সেগুলোর জনপ্রিয়তাও আগের থেকে অনেক কমে গেছে। শাড়ি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পোশাকগুলোর একটি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার নারীরা শাড়ি পরে থাকেন। তবে আমাদের দেশীয় শাড়ির রয়েছে আলাদা একটা ইতিহাস। এসব শাড়ি আমাদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বহু বছর ধরে বংশপরম্পরায় আমাদের দেশের বয়নশিল্পীরা এসব শাড়ি বুনে আসছেন। যুগে যুগে পরিবর্তনের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে তাঁতশিল্পও। হাতে তৈরি থেকে এখন অনেক কিছুই চলে যাচ্ছে মেশিনের মধ্যে। তাঁত হাতে তৈরি শিল্পমাধ্যম। ‘তাঁত বোনা’ শব্দ দুটি এসেছে ‘তন্তু বয়ন’ থেকে। তাঁত মূলত হচ্ছে এক ধরনের যন্ত্র- যা দিয়ে তুলা বা তুলা হতে উৎপন্ন সুতা থেকে কাপড় বানানো যায়। খুব ছোট আকারের হাতে বহনযোগ্য তাঁত থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির স্থির তাঁত দেখা যায়।
আধুনিক বস্ত্র কারখানাগুলোয়ও তাঁত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।বাঙালি নারীর সৌন্দর্য চেতনা বরাবরই একটু আলাদা এবং অবশ্যই শিল্পময়।
তাদের সাধারণ সাজগোজ, পোশাক-আশাকে যেমন থাকে চলমান সময়ের নিপুণ প্রকাশ, তেমনি বাঙালিয়ানাকে ধারণ করে সব সময় নিজস্ব সংস্কৃতির বৃত্তের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর এখানেই বাঙালি নারী হয়ে ওঠেন অনন্য।বাঙালি নারীর পছন্দের পোশাকের প্রথম দিকেই তাঁতের শাড়ির নাম থাকে। তবে তাঁত বলতে আবার সব তাঁতের শাড়ি নয়, ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি যুগ যুগ ধরে বাঙালি নারীর ফ্যাশনের প্রতীক হয়ে আছে। এ শাড়িতেই যেন ফুটে ওঠে বাঙালি নারীর চিরায়ত রূপ। ঐতিহ্যবাহী শাড়িতে এসেছে কারুকাজের নিখুঁত ছোঁয়া।
সম্পূর্ণ লাল তাঁত আর আড়াআড়ি ডুরে শাড়িতে ফুটে ওঠে বাঙালি নারীর চিরায়ত রূপ। তবে এখন তাঁতের শাড়িতে কিছুটা দেখা যাচ্ছে প্রিন্টেড, ব্লক, বাটিকের ছোঁয়া। শাড়ির সঙ্গে চন্দ্রি কিংবা খদ্দরের ব্লাউজও পরা যায়। গোল গলার ব্লাউজে শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে লাগিয়ে নেওয়া যায় সুতির লেইস। আবার ঘটিহাতার ব্লাউজও ভালো দেখাবে তাঁতের শাড়ির সঙ্গে।

উৎসবে-পার্বণেও নিজেকে ভিন্নমাত্রায় উপস্থাপন করতে বেছে নিতে পারেন তাঁতের পোশাক ও কম্বিনেশনে খাদি বা কটন রাখে নিজের ফ্যাশন ফুটিয়ে রাখতে পারেন।
কৈশোর থেকে তরুণী
শাড়ি ছাড়া এ দেশের নারীদের কেনাকাটা যেন সম্পূর্ণ হয় না। একসময় ফ্রক ছেড়েই শাড়ি ধরতেন নারীরা।
সেই বারো-তেরো বছর বয়স থেকেই শাড়ি নিয়ে তাদের ভাবনা শুরু হতো। তখন এত রঙ-বেরঙের শাড়ির বাহার ছিল না, ছিল না হাজার অলঙ্করণ; বরং সাদামাটা একরঙা আর চিকন পাড়ের শাড়িতে সাজতেন নারীরা। এর পরে এলো চেক আর প্রিন্টের শাড়ি। তখন ব্লক, বাটিক, টাই-ডাই, মেশিন এমব্রয়ডারি, পুঁতি, চুমকি এত কিছুর সঙ্গে পরিচয় হয়নি শাড়ির। অলঙ্করণ বলতে তখন হাতের কাজের নকশাকেই বুঝত নারীরা। শাড়ির এত রকমারি ছিল না বললেই চলে।
এখন পেশাকের ক্ষেত্রে এসেছে বিভিন্নতা। এখনকার নারীদের সুযোগ আছে নানা ধরনের পোশাক বেছে নেওয়ার। কিন্তু এত রকমারির মধ্যে একটুও কমেনি শাড়ির চাহিদা; বরং এখন শাড়ির প্রতি নারীর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বেশ। অনেকেই শখ করে কিনছেন শাড়ি। কিশোরী থেকে তরুণী, যুবতী, মধ্য বয়স কিংবা বৃদ্ধ বয়স সব বয়সেই এখন বেছে নিতে দেখা যাচ্ছে সুন্দর সব শাড়ি।
শাড়িতে এখন ক্রেতারা কী খুঁজছেন- রঙ, নকশা, নাকি আরাম, জানতে কথা বলেছিলাম নকশাকার হ্রিতি রুবাইয়ার সঙ্গে। তিনি বললেন, এখনকার সময়ে ক্রেতারা খুঁজছেন আরাম।
তাই শাড়ির নকশা ও অলঙ্করণে নজর রাখা হচ্ছে বিশেষভাবে, যাতে শাড়িতে আরামের কোনো কমতি না হয়ে যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়