সিজার হত্যায় গ্রেপ্তার ৬ : অটোরিকশা ছিনতাই করা তাদের পেশা

আগের সংবাদ

বৃষ্টি ও জোয়ারের অপেক্ষায় হালদা নদীতে মাছের পোনা সংগ্রহকারীরা

পরের সংবাদ

খাপছাড়া

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বন্ধুরা, স্কুলের পাঠ্যবইয়ে তোমরা ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’, ‘ছুটি’, ‘বীরপুরুষ’সহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের লেখা বেশ কিছু ছড়া-কবিতা পড়েছ। এর বাইরেও তোমাদের জন্য আরো অনেক মজার মজার ছড়া-কবিতা,
গল্প ও নাটিকা লিখেছেন তিনি। ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চলো আজ পড়ি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ
‘খাপছাড়া’র কয়েকটি চমৎকার ছড়া-কবিতা। ‘খাপছাড়া’ প্রকাশিত হয়েছিল আজ থেকে ৮৬ বছর আগে, ১৯৩৭ সালে।
এই বইয়ের অলঙ্করণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ নিজেই। তার কয়েকটি ছাপা হলো এখানে। কিছু কিছু বানান দেখে
তোমাদের ভ্রæ কুঁচকে যেতে পারে। কারণ আমরা ওই সময়ের বানানরীতিই অনুসরণ করেছি।

কন্কনে শীত তাই
চাই তার দস্তানা;
বাজার ঘুরিয়ে দেখে,
জিনিষটা সস্তা না।
কম দামে কিনে’ মোজা
বাড়ি ফিরে গেল সোজা
কিছুতে ঢোকে না হাতে,
তাই শেষে পস্তানা।

২.
উজ্জ্বলে ভয় তার,
ভয় মিট্?মিটেতে,
ঝালে তার যত ভয়
তত ভয় মিঠেতে।

ভয় তার পশ্চিমে,
ভয় তার পূর্ব্বে,
যে দিকে তাকায়, ভয়
সাথে সাথে ঘুরবে;
ভয় তার আপনার
বাড়িটার ইঁটেতে,
ভয় তার অকারণে
অপরের ভিটেতে।

ভয় তার বাহিরেতে,
ভয় তার অন্তরে,
ভয় তার ভূত প্রেতে,
ভয় তার মন্তরে।
দিনের আলোতে ভয়
সামনের দিঠেতে,
রাতের আঁধারে ভয়
আপনারি পিঠেতে।

৩.
জিরাফের বাবা বলে,-
“খোকা তোর দেহ
দেখে দেখে মনে মোর
কমে যায় স্নেহ।
সামনে বিষম উঁচু,
পিছনেতে খাটো,
এমন দেহটা নিয়ে
কী ক’রে যে হাঁটো।”
খোকা বলে, “আপনার
পানে তুমি চেহো,
মা যে কেন ভালোবাসে
বোঝে না তা কেহ।”

৪.
বেলা আটটার কমে
খোলে না তো চোখ সে।
সামলাতে পারে না যে
নিদ্রার ঝোঁক সে।
জরিমানা হলে বলে,
“এসেছি যে মা ফেলে,
আমার চলে না দিন
মাইনেটা না পেলে।
তোমার চলবে কাজ
যে ক’রেই হোক্ সে,
আমারে অচল করে
মাইনের শোক সে।”
৫.
পাঠশালে হাই তোলে
মতিলাল নন্দী,
বলে, “পাঠ এগোয় না
যত কেন মন দি।”
শেষকালে একদিন গেল চড়ি’ টঙ্গায়,
পাতাগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে ভাসালো মা গঙ্গায়;
সমাস এগিয়ে গেল,
ভেসে গেল সন্ধি;
পাঠ এগোবার তরে
এই তার ফন্দি।

৬.
নাম তার ডাক্তার ময়জন্।
বাতাসে মেশায় কড়া পয়জন্।
গণিয়া দেখিল, বড়ো বহরের
একখানা রীতিমতো শহরের
টিঁকে আছে নাবালক নয়জন।
খুশি হয়ে ভাবে এই গবেষণা
না জানি সবার কবে হবে শোনা,
শুনিতে বা বাকি র’বে কয়জন।

৭.
হাতে কোনো কাজ নেই,
নওগাঁর তিনকড়ি
সময় কাটিয়ে দেয়
ঘরে ঘরে ঋণ করি।
ভাঙা খাট কিনেছিল,
ছ’ পয়সা খর্চ্চা—
শোয় না সে- হয় পাছে
কুঁড়েমির চর্চ্চা।
বলে, “ঘরে এত ঠাসা
কিঙ্কর-কিঙ্করী,
তাই কম খেয়ে খেয়ে
দেহটারে ক্ষীণ করি।”

৮.
“সময় চ’লেই যায়”
নিত্য এ নালিশে
উদ্বেগে ছিল ভুপু
মাথা রেখে বালিশে।
কব্?জির ঘড়িটার
উপরেই সন্দ,
একদম ক’রে দিল
দম তার বন্ধ,
সময় নড়ে না আর,
হাতে বাঁধা খালি সে,
ভুপুরাম অবিরাম-
বিশ্রামশালী সে।
ঝাঁ-ঝাঁ করে রোদ্দুর-
তবু ভোর পাঁচটায়
ঘড়ি করে ইঙ্গিত
ডালাটার কাঁচটায়;
রাত বুঝি ঝক্?ঝকে
কুঁড়েমির পালিশে।
বিছানায় প’ড়ে তাই
দেয় হাততালি সে।
৯.
ভূত হয়ে দেখা দিল
বড়ো কোলা ব্যাঙ,
এক পা টেবিলে রাখে,
কাঁধে এক ঠ্যাঙ।
বনমালী খুড়ো বলে-
“করো মোরে রক্ষে,
শীতল দেহটি তব
বুলিয়ো না বক্ষে;”
উত্তর দেয় না সে,
বলে শুধু- “ক্যাঙ”।
১১.
টাকা সিকি আধুলিতে
ছিল তার হাত জোড়া;
সে-সাহসে কিনেছিল
পানতেয়া সাত ঝোড়া।

ফুঁকে দিয়ে কড়াকড়ি
শেষে হেসে গড়াগড়ি;
ফেলে দিতে হোলো সব-
আলুভাতে পাত জোড়া।

১২.
নাম তার চিনুলাল
হরিরাম মোতিভয়,
কিছুতে ঠকায় কেউ
এই তার অতি ভয়।

সাতানব্বই থেকে
তেরোদিন ব’কে ব’কে
বারোতে নামিয়ে এনে
তবু ভাবে, গেল ঠ’কে।

মনে মনে আঁক কষে,
পদে পদে ক্ষতি-ভয়।
কষ্টে কেরানি তার
টিঁকে আছে কতিপয়।

১৩.
ভোলানাথ লিখেছিল,
তিন-চারে নব্বই,
গণিতের মার্কায়
কাটা গেল সর্ব্বই।

তিন-চারে বারো হয়
মাস্টার তারে কয়;
“লিখেছিনু ঢের বেশি”
-এই তার গর্ব্বই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়