চট্টগ্রামে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার স্বামী পলাতক

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সংস্কার জরুরি : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ দেখছে আইএমএফ

পরের সংবাদ

ঘূর্ণিঝড় মোকার বার্তায় দুশ্চিন্তায় উপকূলবাসী : বিষখালীর ভাঙনে বেতাগী শহর রক্ষাবাঁধের সড়কে ফাটল

প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি : বরগুনার বেতাগীতে পৌর শহরের মূল রক্ষাবাঁধের প্রধান সড়কটি বিষখালী নদীর ভাঙনে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে কাটছে শহরের হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও সাধারণ বাসিন্দার সময়। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র বার্তা রীতিমতো দেশের উপকূলীয় এ উপজেলাবাসীকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এ আভাসে ভারি বর্ষণ আর জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে এই শহর রক্ষাবাঁধের এ সড়কটি কতটা টিকে থাকবে তা নিয়ে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেতাগী পৌর শহর। প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ¡াস থেকে পৌরবাসীকে মায়ের মতো আগলে রাখে ও রক্ষা করে এ বাঁধটি। কিন্তু ভাঙনরোধ প্রকল্পের ধীর গতির কারণে বর্ষার আগে কাজ শুরু না হওয়ায় নতুনভাবে লঞ্চঘাটের পশ্চিম দিকে শহর রক্ষাবাঁধের ওপর নির্মিত পাকা সড়কের একাধিক স্থানে ভয়াবহ আকারে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় সড়কের দেবে যাওয়া অংশসহ সড়কের দুপাশের স-মিল, আসবাবপত্র ও কাঠের দোকান, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশর্প ও ছোট-বড় মিলিয়ে চায়ের দোকান এবং লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা রক্ষাই এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নদীর তীরবর্তী বসবাসরত বাসিন্দাদের কাটছে নির্ঘুম রাত। ভাঙন যেভাবে ধেয়ে আসছে তাতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করা না হলে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাবে। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকাসহ আশপাশের কয়েক এলাকার মানুষ। জোয়ার-ভাটার সময় এখানকার বেশির ভাগ মানুষকে সতর্ক থাকতে হয়।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইতোপূর্বে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লঞ্চঘাট, বন্দর, ছোট ছোট কলকারখানা, শত শত দোকানপাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে গেছে বেড়িবাঁধ, ধানক্ষেত, মসজিদ ও মাদ্রাসা। আর এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নবনির্মিত মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লঞ্চ ঘাটের যাত্রী ছাউনি, শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী কালী মন্দির, বেড়িবাঁধ ও শহরের বাকি এলাকা। জানা গেছে, ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পের দৃশ্যমান যেটুকু রয়েছে তা শুধু ভিত্তিপ্রস্তর ফলক। যা এখন ভাঙনের মুখে পড়ে নদীতে বিলীন হতে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সর্বশেষ গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ১১তম সভায় বরগুনা জেলাধীন পোল্ডার নং ৪১/৭ এ বেতাগী শহর রক্ষাসহ বিষখালী নদীর অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অংশের প্রতিরক্ষা কল্পে ৪০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু দিন দিন নদীর ভাঙন তীব্রতর হলেও অদ্যাবধি ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ শুরু করেনি। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তাও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তবে বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করে, বিষখালী নদীর ভাঙন রোধে শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
শহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা মো. শাহআলম রুবেল বলেন, ‘ভাঙনের কবলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি, বাপ-দাদার বসতভিটাও চলে যাচ্ছে। এখনো ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ শুরু না করে এভাবে চলতে থাকলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?’
নদীর পাড়ের বাসিন্দা শ্রমজীবী আব্দুর রব বলেন, বর্ষা মৌসুম চলছে, জানি না এবার আমাদের কপালে কী আছে। বিষখালী এখনই যেভাবে ভাঙছে, বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ ধেয়ে এলে কী অবস্থা হবে ভেবেই বুক কাঁপছে। সড়কের পাশে ঝালকাঠি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশর্পের মালিক মো. সোহেল হাওলাদার বলেন, গত কয়েক মাস ধরে তার দোকান এলাকায় ভাঙন বেড়েছে। বর্তমানে পাকা সড়কে ফাটলে তার প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে আসায় নদীতে বিলীন হতে তা আর সময়ের ব্যাপার মাত্র। কাঠ বাজারের করাত কলের মালিক আব্দুল হালিম বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম যত এগিয়ে আসছে তত ভাঙন আরো ভয়ংকর আকার ধারণ করবে। এভাবে অব্যাহত থাকলে ভাঙনের কারণে তাদের নিঃস্ব হয়ে পড়তে হবে। স্থানীয়দের বিকল্প অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হবে। বহুদিন ধরে শুধুই শুনে আসছি কাজ শুরু হচ্ছে, কাজ শুরু হবে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখছি না।
বেতাগী পৌরসভার মেয়র এ বি এম গোলাম কবির জানান, নানা জটিলতায় বেতাগী শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটি আটকে ছিল। তবে আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা কার্যালয়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, সেখানে অনেক জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় সরজমিন গিয়ে রক্ষাবাঁধের সড়কের ভাঙনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করে এসেছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং জরুরি মেরামতের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া বিষখালী নদীর ভাঙন রোধে শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রেড কোর্ট বেশি হওয়ায় ঠিকাদার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবুও খুব শিগগিরই পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। উল্লেখ্য, সম্ভাব্য ১২ মে দুপুর ১২টার পর কিংবা ১৩ মে দুপুর ১২টার পর বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়