প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : ‘ওয়াহিদ, কাদের, মাহফুজ শহীদদের আমরা তোমায় ভুলি নাই’ এই সেøাগানের প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্তে সংঘর্ষের ২৩ বছর পূর্তি পালন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সাবেক এমপি রুহুল আমিনের সহযোগিতায় এলাকাবাসীর আয়োজনে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবসে শহীদদের পুষ্পমাল্য অপর্ণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন সাবেক এমপি রুহুল আমিন, কলাবাড়ি বিবিসি উচ্চ বিদ্যালয়, বড়াইবাড়ী গ্রামবাসীর পক্ষে, কুটিরচর স্কুল এন্ড কলেজ, বারবান্দা সূর্য সংঘ, বীরযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম লাল, শহীদ পরিবারের পক্ষে, বড়াইবাড়ী ব্যবসায়ীসহ এলাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। ২০০১ সালের এই দিনে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বড়াইবাড়ী গ্রামে অবৈধভাবে প্রবেশ করে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। অকুতোভয় তৎকালীন বিডিআর ও গ্রামবাসীর মিলিত প্রতিরোধে পিছপা হয় আগ্রাসনকারী ভারতীয় জোয়ান (বিএসএফ)। নিহত হন বাংলাদেশের তিন বীর বিডিআর ও আহত হন ৫ জন বিডিআর সদস্য। ভারতীয় পক্ষে নিহত হন ১৬ ও আটক হয় ২ বিএসএফ সদস্য। সেই থেকে ঐতিহাসিক এই দিনটি পালিত হয় ‘বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবস’ হিসেবে। বিজিবি ক্যাম্পের সামনে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, চলমান নির্মিত ব্রিজ ও রাস্তা তিন শহীদদের নামে নামকরণ ও ঐতিহাসিক দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
পবিত্র মাহে রমজান মাসের কারণে সীমিত পরিসরে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বড়াইবাড়ী, চুলিয়ারচর, বারবান্দা উদযাপন কমিটির আয়োজনে বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২৮ কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার স্মৃতি, রাজিবপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ মোকলেছুর রহমান, রৌমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম জীবন, শৌলমারী ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিল, চরশৌলমারী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কে এম ফজলুল হক মণ্ডল, রাজিবপুর উপজেলার মহনগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিডিআর (অব.) আজিজুর রহমান, যুদ্ধে আহত বিডিআর হাবিলদার আব্দুল গণি, সিপাহি হাবিবুর রহমান, নিহত ওয়াহিদুজ্জামানের ছেলে দেলোয়ার ওয়াহিদ ও শহীদ সিপাহি আব্দুল কাদেরের সহধর্মিণী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোররাতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশি সীমান্তে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বড়াইবাড়ী গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালায় ও বাড়ি-ঘর নির্বিচারে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিন হামলার দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিল বিডিআর-জনতা। আর সেই প্রতিরোধে বিএসএফের ১৬ জনের লাশ ফেলে পালিয়ে যায় এবং ২ জন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ বিডিআরের কাছে আটক হয়। শহীদ হয়েছিলেন ৩৩ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহি মাহফুজার রহমান এবং ২৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সিপাহি আ. কাদের। এছাড়া আহত হন বিডিআরের হাবিলদার আব্দুল গনি, নায়েক নজরুল ইসলাম, ন্যান্স নায়েক আবু বকর সিদ্দিক, সিপাহি হাবিবুর রহমান ও সিপাহি জাহিদুর নবী। বিএসএফের তাণ্ডবে পুড়ে ছাই হয়েছিল বড়াইবাড়ী গ্রামের ৮৯টি বাড়ি। সরকারি হিসেবে মোট ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ টাকা। কাটেনি সীমান্তের আতঙ্ক। গ্রামের মানুষ এখনো দুঃসহ স্মৃতিতে হঠাৎ রাতে আঁতকে ওঠে। শেষ হয়নি তাদের দুঃখের দিন।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।