জেসমিনের মৃত্যু নিয়ে ১১ র‌্যাব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ

আগের সংবাদ

ঢাকায় নিয়ন্ত্রণহীন শব্দসন্ত্রাস : উপেক্ষিত হাইকোর্টের নির্দেশনা > কানে কম শোনেন ৫৬ ভাগ ট্রাফিক পুলিশ

পরের সংবাদ

‘বিতর্কে থেকে পরিচয় তৈরি করায় বিশ্বাসী নই’

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সদা মিতভাষী তিনি। সচেতনভাবেই বিতর্ক এড়িয়ে চলেন। ব্যক্তিগত জীবন নয়, বরং কাজের মাধ্যমে পরিচিতি পেতে চান শিল্পী অনুপম রায়। ২৯ মার্চ ছিল এই শিল্পীর ৪১তম জন্মদিন। তার আগে ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে সংগীত, প্রেম, বিয়ে, জীবন নিয়ে আলাপচারিতায় অনুপম রায়। তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য

উইকিপিডিয়া বলছে ৪০-এ পা দিলেন?
৪০ নয়, ৪১-এ পা দিলাম এবার।
জীবনের এই চার দশক পার করে জন্মদিনের উপলব্ধি কী?
উপলব্ধির সংখ্যা বেশ অনেকটা। তবে যেটা আমার মনে হয়, যা আমার জীবন দিয়ে বুঝলাম, সেটা হলো পৃথিবীতে বিচার বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই।
আপনার সঙ্গে তেমন কোনো অবিচার হয়েছে? যার ফলে এমন উপলব্ধি?
না, আমি তো খুব ক্ষুদ্র। পৃথিবীর ইতিহাস ও মানুষের যে ইতিহাস, সেটা দেখার পরই এমন ধারণা তৈরি হয়েছে।
এমন কোনো একটা কাজ যা প্রত্যেক জন্মদিনে করে থাকেন?
প্রতি বছর জন্মের তিথি দেখে মা পায়েস খাওয়ান। এটাই ছোটবেলা থেকে হয়ে আসছে, নড়চড় হয়নি। ৪০ বছর ধরে পেয়ে এসেছি।
জন্মদিনে বিশেষ কারো শুভেচ্ছাবার্তার প্রত্যাশায় থাকেন?
না, কারো প্রত্যাশায় থাকি না। জন্মদিনটা আসলে মা-বাবার। আমাকে পৃথিবীতে আনার সব থেকে বড় কৃতিত্ব তাদের।
অনুপম তো শুধু গায়ক নন, সুরকার, লেখক অনেকগুলো পরিচয়। কিন্তু আপনার নিজের ভালো লাগা কোনটা?
আসলে বলাটা মুশকিল। প্রথমে তো কবিতা লিখেছিলাম, তাই শব্দটাই আসে প্রথম। তার পর সুর। আসলে আমি গান বাঁধার লোক। কথা দিয়ে, সুর দিয়ে সবটা নিয়ে কাজ করতে চাই। শুধু সুর কিংবা শুধুই শব্দ দিয়ে কাজ করলে তৃপ্তি পাই না। যদিও হিন্দিতে তেমনটাই করতে হয়। তবে আমি নিজে যখন পুরোটা করতে পারি, পূর্ণতা আসে।
জীবনে সাফল্য তো দেখছেন, কিন্তু যে সময়টা ব্যর্থতা এসেছে কীভাবে নিজেকে সামলেছেন?
আসলে সব সময় যে মানুষ সাফল্যই পাবে, এটা যেমন হয় না। তেমন দিনের পর দিন ব্যর্থতা থাকবে, সেটাও নয়। তবে যেটা পারি সেটা হলো, মেনে নিতে পারি। আমি মনে করি, সাফল্য যেন আমাকে নমনীয় করে, মাটির কাছাকাছি থাকতে সাহায্য করে। অন্যদিকে কোনো ব্যর্থতাই যাতে আমাকে অন্ধকারে না ঠেলে দেয়, সেটা দেখার চেষ্টা করি। ব্যর্থতা যখন আসে, আশার স্বপ্ন দেখি। সাফল্য যখন আসে, তখন সর্তক হই। মনে হয়, যে কোনো সময় পড়ে যেতে পারি। এই দুইয়ের সমতা নিয়ে বাঁচতে ভালোবাসি।
বর্তমানে শিল্পীর অস্তিত্বর জন্য সমাজমাধ্যমের গুরুত্ব ঠিক কতটা?
সোশ্যাল মিডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আমি মনে করি, শিল্পীর শিল্পকর্মটা সব থেকে বড়। তবে এখনকার দিনে এত মানুষ এত কিছু করছেন যে, চোখে পড়ার জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। না হলে অনেক সময় ভালো শিল্পকর্ম সঠিক কদর পায় না।
বর্তমানে ছোট-বড় সব তারকারই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার থাকে। আপনার রয়েছে তেমন কেউ?
না, যতটা সমাজমাধ্যমে উপস্থিতি রয়েছে, সবটাই নিজেই করি। এই তো সে দিন অনেক কষ্ট করে একটা রিল বানিয়েছি সবে।
এতগুলো বছরে নিজের মধ্যে কী পরিবর্তন লক্ষ করলেন?
এটা অন্যরা ভালো বলতে পারবেন। তবে বলতে পারি এখন অনেক বেশি ধৈর্যশীল হয়েছি, উচ্চাকাক্সক্ষা কমেছে। আগে জীবনের স্বপ্নগুলো ছিল ঢেউয়ের মতো। সেই ঢেউয়ের উচ্চতা ও গহ্বর কমেছে।
অনুপম তো ভীষণ চুপচাপ! কিন্তু আনন্দ হলে বহিঃপ্রকাশ করেন কীভাবে?
আমার একটা খুব আনন্দের মুহূর্ত ছিল যখন ‘পিকু’ ছবিতে ‘বে-জুবান’ গানটা রাখতে সুজিত দা (সরকার, পরিচালক) সম্মতি দেন। ভীষণ খুশি হয়েছিলাম সে দিনটা। সে দিন বন্ধুদের সঙ্গে সারা রাত গানবাজনা করি। আসলে যখন মন ভালো থাকে, আমি আশপাশে বেশি করে লোকজন চাই।
কোন ধরনের সংগীতের কাছে ফিরে ফিরে যান?
ছোটবেলায় রবীন্দ্রসংগীতে ডুবেছিলাম। কারণে বাড়ির পরিবেশ তেমনই ছিল। সেই ছিল সংগীতের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। তার পর একটু বড় বয়স থেকে সিনেমার হিন্দি গান। শুনতে ভালোই লাগত। তার পর যখন কবীর সুমন, নচিকেতা, অঞ্জন দত্তরা এলেন, ওগুলোই শোনা হতো। আর কিছুই শুনতাম না।
কোন শিল্পী আপনাকে ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
আমি পিঙ্ক ফ্লয়েডের দ্বারা ভীষণ অনুপ্রাণিত। এক-একটা গানের দাঁড়িকমা পর্যন্ত মুখস্থ। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমেরিকান সংগীতশিল্পী জেমস টেলরের গান শুনছি। ভীষণ ভালো লাগে। তবে শুধু গান নয়, সিনেমা, বই সবই আমার জীবনে প্রভাব ফেলেছে। আসলে শিল্পকে পুঁজিবাদী সমাজ কখনই মানতে পারেনি। শিল্পের কাছে মানুষকে নতজানু হতে হয়েছে বিশেষ বিশেষ সময়ে।
জীবনে কোনো আফসোস রয়েছে?
আমি সারা জীবন অঙ্ক করেছি, গানটা অনেক পরে শুরু করেছি। সেটা একদিক থেকে যেমন আফসোস।
তেমনই আবার মনে হয়, জীবনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়টাও নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে আজকের এই মানুষটাকে গড়ে তুলেছে। নিশ্চয়ই একটা অবদান রয়েছে। তবে ৪১ বছরে এসে মনে হয়েছে, সে অর্থে আফসোস বলতে, জীবনে যদি একটু ফাঁকি দিতে পারতাম তা হলে ভালো হতো। বাইরে যদি বন্ধুদের সঙ্গে আরো একটু ফুর্তি করতে পারতাম। অনেক কিছুই হয়তো মিস করে গিয়েছি।
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে সত্যি কি কোনো লবি রয়েছে?
সবাই একা এসেছি, একাই যেতে হবে। আমি কোনো লবিতে নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। তবে আগের চেয়ে পার্টি একটু কম হচ্ছে।
সচেতনভাবে বিতর্ক এড়িয়ে চলেন বলেই কি কোনো লবিতে নেই?
আমার কাজই যেন আমার পরিচয় হয়। বিতর্কে থেকে পরিচয় তৈরি করায় আমি বিশ্বাসী নই।
অনুপম রায় কি ভবিষ্যতে কোনো গানের স্কুল খুলবেন? এখন তো জনপ্রিয় শিল্পীদের অনেকেরই প্রতিষ্ঠান রয়েছে…।
না, আসলে আমি এমন কোনো একাডেমিতে নিজে শিখতে যেতে চাই। আমি ছাত্র হওয়াটা ভীষণ উপভোগ করি, আমার জানার খিদেটা রয়েছে।
প্রায় এক বছর হলো আপনার বিবাহবিচ্ছেদের, বিয়ের ওপর আস্থা রয়েছে এখনো?
আসলে এটা কোন মানুষটা কেমন, তার ওপর নির্ভর করে। সব মানুষকে যে বিয়ে করতে হবে এমনটা নয়, যে বিয়ে করতে চায় করতেই পারে। তবে বিয়ে নিয়ে আমি স্থবির। বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতি কোনো বিতৃষ্ণা নেই।
আর প্রেমের ওপর?
কোনো একটা ঘটনা দিয়ে গোটা প্রতিষ্ঠানটাকে বিচার করা যায় না। আমার জীবনের ছোট একটা হেরে যাওয়া দিয়ে গোটা জীবনটাকে বিচার করা যায় না। সেটা মনে হয় নেতিবাচক হয়ে যাবে। সম্পর্কে বিশ্বাস রাখি, শ্রদ্ধা করি।
ফের কি ঘর বাঁধার পরিকল্পনা রয়েছে?
এই মুহূর্তে সেটা ভাবার পরিস্থিতিতে নেই।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়