১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ : হোমল্যান্ড লাইফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

আগের সংবাদ

মনোনয়নে আ.লীগের গুরুত্ব তৃণমূল : চ্যালেঞ্জে শতাধিক এমপি, চাপের মুখে সাংগঠনিক সম্পাদকরা, জেলার পর উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

পরের সংবাদ

ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে লাভজনক সূর্যমুখী চাষ

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, সোনাগাজী ফেনী থেকে : প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপবান উদ্ভিদ সূর্যমুখী, গুণেও অনন্য। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, সূর্যমুখীতে তা নেই। বরং উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। আমাদের খাদ্য তালিকায় সয়াবিন অথবা সরিষার তেল বহুল ব্যবহার করে থাকি। এসব তেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সূর্যমুখী ফুল থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
পুষ্টিবিদদের তথ্য মতে, সূর্যমুখী তেলে আছে মানবদেহের জন্য উপকারী ওমেগা ৯ ও ওমেগা ৬, আছে অলিক অ্যাসিড। সূর্যমুখীর তেলে আছে শতকরা ১০০ ভাগ উপকারী ফ্যাট। আরো আছে কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ও পানি। সূর্যমুখীর তেল সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলমুক্ত। আছে ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, আছে মিনারেল। মুখের যতেœ ও দাঁতের জন্য উপকারী একমাত্র তেল। হৃদরোগী, ডায়াবেটিসের রোগী উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। চমৎকার এনার্জির উৎসও সূর্যমুখীর তেল। সূর্যমুখী ফুল ৬ মাসি একটি ফসল। এটি বপনের উপযুক্ত সময় হলো কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কর্তন চলে।
১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশে সূর্যমুখী ফুল চাষ হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত সূর্যমুখীর ৩টি জাত উদ্ভাবন হয়েছে। পরিপক্ক পুষ্পমঞ্জুরি বা শাখার ব্যাস হলো ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। প্রতি মাথায় বীজের সংখ্যা ৪০০ থেকে ৬০০ এর মতো। এই জাতের বীজগুলো কালো বর্ণের হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে ৬০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে ফেনীর ৬টি উপজেলায় ৫৫টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। রাজস্ব অর্থায়নে ও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় জেলার ৬টি উপজেলায় ৫৫টি প্লটের ৬০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এবার সুর্যমূখির চাষ করেছেন। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিস জানায়, এ কর্মসূচির আওতায় ফেনী সদরে ১৫টি, সোনাগাজীতে ১৫টি, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৭টি, ফুলগাজীতে ৫টি, পরশুরামে ৬টি ও দাগনভূঞায় ৭টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। নবাবপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল হক লিটন বলেন গত বছর পরীক্ষামূলক এক একর জমিতে সুর্যমুখী চাষ করেছি। দ্বিগুণ লাভবান হওয়ায় এবার দুই একর জমিতে চাষ করেছি। ফলন ভালো হলে এবারো দ্বিগুণ লাভ হবে।
সোনাগাজীর দক্ষিণ চর ছান্দিয়ায় ২ হেক্টর জমিতে সুর্যমুখী চাষ করেছেন মো. রুবেল নামে এক কৃষক। ভোরের কাগজকে তিনি জানান- বিগত বছর গুলোতে কৃষকরা উপকুলীয় এসব জমিতে রবি মৌসূমে তেমন কোন ফসল করতেন না। কিছু জমিতে খাল-বিল থেকে পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে শাক সবজি, ডাল, আলু জাতীয় ফসল চাষ করতেন। রবি মৌসূমে বাকী জমি থাকত পতিত। কিন্তু কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় এবার পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করছেন । ফলন ভালো হওয়ায় লাভও হয়েছে। আগামীতেও চাষ করবেন।
ফুলগাজীর জহিরুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, দুই বছর আগে সূর্যমুখীর চাষ করেছিলাম। কৃষি দপ্তরের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগীতা পাইনি। এখানকার মাটি রবিশষ্যে জন্য উপযোগী নয়। তাই ফলন তেমন ভালো হয়নি। তবে উপকুলীয় এলাকায় সুর্যমুখিসহ সব রবিশষ্য ভালো হয়। কৃষি দপ্তরের সহায়তা পেলে কৃষকরা এই লাভজনক চাষাবাদে ঝুঁকবে।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার ভোরের কাগজকে জানান, সূর্যমুখীর চারা রোপণের ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুলের দানা থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হয়। এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এক একরে সূর্যমুখী উৎপাদন হয় ৩৩-৩৫ মণ। একমণ সূর্যমুখী ফুলের বীজের বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা। একরপ্রতি উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের প্রায় কমবেশি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। এছাড়াও সূর্যমুখী ফুলের বীজ সংগ্রহ করার পর গাছগুলো জমিতে পচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈবসারের ঘাটতি পূরণ হয়। অনেক কৃষক পরিবার তার দৈনন্দিন জীবনে রান্নার কাজের জ্বালানি হিসেবে সূর্যমুখীর খড়ি ব্যবহার করে থাকে।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোনাগাজী অঞ্চলে সরকারিভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। গত ৩ বছর সোনাগাজীতে বাণিজ্যিকভাবে সুর্যমুখির চাষাবাদ হচ্ছে। এবার সোনাগাজীতে ৬৫ হেক্টর জমিতে সুর্যমুখির চাষাবাদ হয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুর্যমুখিসহ অন্যান্য রবিশষ্য চাষের উপযোগী। তাই ফলনও ভালো হয়েছে। হেক্টর প্রতি লক্ষমাত্র অনুযায়ী ২ টন উৎপাদন হয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, কৃষকের জমি এবং পরিশ্রম ছাড়া সব সার, বীজ ও ব্যবস্থাপনা করেছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর। তিনি বলেন, ফেনী সদরের ২ হেক্টর জমিতে ১২টি প্রদর্শনীর জন্য সরকার ৯০ হাজার ২৫৬ টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। এসব প্রণোদনার অর্থ দিয়ে কৃষকদের মাঝে উন্নত মানের বীজ, সার ও নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আকরাম উদ্দিন ভোরের কাগজকে জানান, ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরিষা ও সূর্যমুখী চাষের উপর গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এ কর্মসূচিতে দেশে তেলের চাহিদা পূরণ করতে সূর্যমুখী আবাদে কৃষকদের উৎসাহ ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ কর্মসূচির আওতায় ফেনীতে ৬০ হেক্টর নির্বাচিত জমিতে ৫৫টি প্রদর্শনীতে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়