১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ : হোমল্যান্ড লাইফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

আগের সংবাদ

মনোনয়নে আ.লীগের গুরুত্ব তৃণমূল : চ্যালেঞ্জে শতাধিক এমপি, চাপের মুখে সাংগঠনিক সম্পাদকরা, জেলার পর উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

পরের সংবাদ

গল্প : জিন্দা লাশ কাব্য সুমী সরকার

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অহন কান্দস কে হাসুর মা? ছেড়াডা তো গেরামেই ভালা আছিন। তহন ত শান্তি দেছ নাই। অহন কান্দস কে?
আনহে আল্লা চুপ হরবাইন? আনহে না জমিলার চাচা হওর এরুম হইরা কইতাছুইন যে, বেহি নাহি জমিলার দোষ। কতগুলা আবুদুব। জমিলা কি আর কাশেমরে এইবাই ঢাহা শহর যাইবার কইছে। গেরামে চুক্তি কাম হইরা কি ভাত জুটছে ছেড়াডার।
– অহন যে জেতা ছেড়াডা লাশ অইয়া আইলো। এতগুলা পুলাপাইনের কি অইবো?
জমিলা চিক্কার পাইড়া কান্দে। আনহে কই গেলাইন আমগরে ছাইরা। আমি এহন কি করাম। আনহের আবুদুব কই যাইবো। হাসুর বাপ গো। আহনে আমারে কি কইয়া গেলাইন গো…
জমিলার কান্দুন হুইন্না গেরামের ভেবাক মানুষ টাসকি লাগছে। এরুম একটা গডনা! লাশ আইতাছে ভ্যান গাড়িত হইরা। দড়িদে পেঁচাইয়া, দারিদা বান্ধা।
ওডানে লাশ রাহুনের লগে লগে বেক মানুষ হুমড়ি খাইয়া পড়ে। পরান খা বেহেরেই হরবার কয়। এই লাশ তরা দেকবার পাইবি না। মুক থ্যাতলাইয়া গেছে।
শইলের এক পাশের গোশত হইরা গেছে।
হুইন্নাই মানুষ ডরে সইরা পড়ে।
চেয়ারম্যানে পরান খা লাশ দাফন কাফনের ব্যবস্থা হরতে কয়। জমিলা কতা হুনে না। হেরে দেহাইন লাকবই লাশ।
চেয়ারম্যান বেহেরে হরাইয়া কেরামতরে কয় লাশের মুহের কাপড়ডা হরাইবার। লাশ দেখখাই জমিলা আক্তা চিক্কার মারে। বেহেই জমিলারে ধইরা ঘর তুলে। জমিলার আতে চেয়ারম্যানের বউ একডা পলিটিনের কাগজ দেয়। হেই কাগজ জমিলার একটা ফডো কয়ডা ট্যাহা। আতে লইয়া জমিলা কানতেই থাহে। কাশেমের লাশের লগে এই ফডোখানই শেষ চিহ্ন আছিন। পোলাপাইনগুলা ছেওড়া মাইনষের লাহান ঘুরতাছে। ৫ টা পুলাপাইন। ছোডডা তো কোলের। বড়ডা আত পাগলার লাহান। বয়স ১৫ অইলেই কি অবো। মাথাত কোন বুদ্ধিই নাই।
কাশেম মরছে দুই মাস। জমিলা কানতে কানতে চোখ ডুইডার পানি হুগাইয়া গেছে। চেয়ারম্যান, মেম্বার জোর হইরা ধইরা জুয়াখুর দেবরের লগে হাঙ্গা দে দিছে।
এহন জমিলার আরও জ্বালা। দিন রাইত ভেবাক সময় কাইজ্জা হইরা দিন কাডে। জমিলার চাচি হরি আইয়া কয়।
– এইডা একডা কাজ হরলো গেরামের মাইনষে। পলাইশা অইছে জুয়াখুর। হের লগে বে দেওনের কি আছিন। এর চেয়ে তরে কাইট্টা গাঙদে ভাসাইয়া দিলেই অইত।
জমিলা কাইন্দা হের চাচি হরির উরপে পরে।
– চাচিম্মা গো…আমার আবিদুবটির কি অইবো? হেগরে আমি কি খাওয়াইবাম কি পড়াইবাম? হে তো আমারে কিছু কইয়া গেল না।
পলাশ আইয়া ডাক মারে।
– এই তুই কান্দস কে? বেদা মাইরা বাইর হইরা দেম। ভাত ভাইরা আন। তরে কুবুদ্ধি দিবার আইয়া পড়ছে জেডি?
– যাই রে জমিলা। এই ছেড়া তর আবুদুবরে কি খাওয়াইব। তগরে শুদ্ধা গিল্লা খাইব দেকতাছি।
– যাইন যাইন। মাইনষের বাড়িত ঘুরাইন না পাইরা নিজের ঘরের কাইজ্জা সামলাইন গা। পলাশে কয়।
গেরাম শুদ্ধা ভেবাক মানুষ একলগে আইয়া গেছে। এক্কেবারে কাশেমের লাহান দেকতে এক বেডা গেরামে ডুকতাছে এইডা প্রথম দেকছে পূর্ব পাড়ার কাইল্লা। কাইল্লা ত লগে লগে ফিড অইয়া গেছে। বেহেই তারে এইযে পানি ডালে বেডার য়ুশ আর ত ফিরে না।
চেয়ারম্যান বেহেইরে লইয়া বয়। মাতা নিচা হইরা এক কোণাত বইয়া রইছে কাশেম। সব হুনার পর গেরামের কেউ মানতাছেই তা এইডা কাশেম। কাশেম হের বউরে কয়, তুই আমারে চিনবার পাইতাছস না। পলাশ কুদুন মারে আমার বউয়ের বুগলো গেলে তরে হালার ভাই শেষ হইরা হালাম। মেভাইয়ের মরার খবর সব হুইন্না ভাবের পাগল সাইজ্জা গেরামে ডুকছস। কাশেম পোলাপাইনের দিগে আগাইয়া যায়, পোলাপান ডরে থরথরি কাইপ্পা দৌড় দেয়।
কাশেম চেয়ারম্যানের পায়ে পইড়া কয়, আমারে গেরাম ছাড়া হরুন না যে। আমি যারে কবর দিছুইন আমার নামে হেই কবরের লগেই আমি ছাইলা তুইল্ল্যা থাহুম। আমি ত এইবাই ভেবাক আরাইছি। আর কোনহান গে কি হরুম।
হুইন্না পলাশে মারবার যায়। বেহেই হেরে ফিরায়।
আশপাশের গেরাম থাইক্যা পরের দিন মাইনষের লাইন লাগে। মুদ্দা কাশেম জেতা অইয়া গেছে। মাইনষে গেলাস হইরা পানি বতুল হইরা তৈল লইয়া লাইন ধরে।
বাবা এইহান এককান ফুঁ দিয়া দেও।
কাশেম ফুঁ দেয়।
গেরামের কয়ডা বেডা কাশেমের পায়ের বুগল পইড়া থাহে।
মাইনষে কাশেমের সামন কত টেহা ফালায়। সইন্ধ্যা অইতেই কবরডার মাদ্ধে আগরবাতি ধইরা কয়ডা ঘুরাইন দে। রাইত অইলেই কাশেমের কান্দন হুনা যায়। পলাশরে ডাইক্কা কয়। টেহা লইয়া যা, আবুদুবটিরে ঠিকমতো খাওয়াইস। তরে ভাবীরে বহিস না। ঠিকমতো ভাত কাপড় দিস।
পলাশ দাঁত বাইর হইরা আইসসা টেহা নেয়। কয় আমার মেভাই মইরাও আমাগর চিন্তা হইরা দরবেশ অইয়া আইছে।
দূর থেইক্কা মুখে কাপড় দিয়া কাশেমের দিগে চাইয়া থাহে জমিলা। কিছুই আর মিলাইবার পারে না জমিলা।
সহাল থেক্কা বাবার এনু লাইন। বাবা খালি পানিপড়া দে আর তেলের শিশিত ফুঁ মারে…
গেরামে- গ্রামে।
আল্লা- এখন
চুপ হরবাইন- চুপ করবেন
আবুদুব- ছেলে-মেয়ে।
চুক্তি কাম- চুক্তিতে সারাদিনের কাজ।
ছেড়াডা- ছেলেটা
জেতা- জ্যান্ত
দাড়ি- বাঁশের তৈরি বিশেষ পাটি
শইলের-শরীরের
লাকবই- লাকবেই
বেদা মাইরা- লাথি দিয়ে।
য়ুশ- জ্ঞান
মুহের- মুখের
ফডো- ছবি
কুদুন মারে-জোরে ডাকে।
কাইট্টা- কেটে

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়