বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘সবুজ মানব প্রাচীর’ তৈরি করল জিএলটিএস

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়ায় জোটের মিশন

পরের সংবাদ

দ্রুত ডাকসু নির্বাচন চায় ছাত্র সংগঠনগুলো : অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষায় প্রশাসন

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাফিউজ্জামান লাবীব : দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ২৩ মার্চ দায়িত্ব নেন ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। ২০২০ সালের ২২ মার্চ নির্ধারিত ৩৬৫ দিনের মেয়াদ পূর্ণ করার পর ২২ জুন গঠনতন্ত্রে থাকা অতিরিক্ত ৯০ দিনও অতিক্রম করে ডাকসুর কমিটি। ২৩ জুন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভেঙে যায় সেই কমিটি। ওই নির্বাচনে ২৫ পদের ২৩টিতেই জয় পায় ছাত্রলীগ। শুধু ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয় পায় ছাত্র অধিকার পরিষদ।
ডাকসুর কমিটি ভাঙার প্রায় তিন বছর পরও নির্বাচন হচ্ছে না। নতুন নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কোনো উদ্যোগ নেই। এদিকে নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো বারবার দাবি জানালেও অনুকূল পরিবেশ ও নির্বাচনের স্টেকহোল্ডারদের পারস্পরিক সুসম্পর্কের অভাবে ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে না বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। দ্রুততম সময়ে নির্বাচন না হলে মাঠে নামারও ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রনেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়মিত চাপ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলে নিয়মিত নির্বাচন দেয়া সম্ভব বলে ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ২৮ বছর পরে ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় ছাত্ররাজনীতিতে একটা ইতিবাচক হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। কিন্তু সরকার সেটাকে ইতিবাচকভাবে দেখেনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই দলের রাজনীতি গত ৩০ বছর ধরেই চলছে। তারা কেউই ডাকসু চায়নি। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনটি হয়েছিল আদালতের রায় ও ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আন্দোলনের সেরকম কোনো তেজ দেখছেন না তিনি।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইলে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন তাই সরকার চাইবে একটি ইতিবাচক মেন্টালিটি তৈরি করতে। আগামী জাতীয় নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ হবে এটা ডাকসু নির্বাচন দিয়ে সরকার বোঝাতে পারে।
ক্যাম্পাসে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রসংগঠনও ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে ডাকসুর সাবেক এজিএস ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ক্যাম্পাস ডেমোক্র্যাসি নিশ্চিত করাসহ শিক্ষার্থীরা যে ধরনের ক্যাম্পাস চান সেটা নিশ্চিত করতে ডাকসুর ভূমিকা অতুলনীয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেন দক্ষ গ্রাজ্যুয়েট হতে পারে, আধুনিক সিলেবাসে লেখাপড়া করতে পারে এবং তাদের আবাসন সমস্যা নিরসনে ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন। আমরা প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশাসনকেও জানিয়েছি। ডাকসু নির্বাচন দেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আইনগত, নৈতিক ও গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক সংকটের কারণে ডাকসুর নির্বাচন নিয়ে একটি ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ডাকসু নির্বাচন দ্রুত দেয়া প্রশাসনের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন হয় কিন্তু শিক্ষার্থীদের নির্বাচন হয় না। আমরা এর আগেও কয়েকবার এটার দাবি জানিয়েছি। পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে মাঠে নামার ঘোষণা দেন তিনি। ডাকসু নির্বাচন দেয়ার পরেও সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান তৈরি হয়নি। তবে ২০১৯ এর নির্বাচনের পরে সংগঠনগুলো সাংগঠনিকভাবে ক্যাম্পাসে ‘মুভমেন্ট’ করতে পারতো বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে তানভীর আল হাদী মায়েদ নামের এক নেতা বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ফলে আমরা ক্যাম্পাসে সাংগঠনিকভাবে চলতে পারতাম। কিন্তু, বর্তমানে সেই নিরাপত্তাটুকুও নাই। সহাবস্থান আগেও ছিল না, বর্তমানেও নেই।
এ বিষয়ে সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল বলেন, গত ৩ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও হতাশ ও ক্ষুদ্ধ। আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। মূলত অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি টিকিয়ে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন দিতে চায় না মন্তব্য করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বাধীন কোনো সত্ত্বা নেই।
সরকার চাচ্ছে না বলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ডাকসুর নির্বাচন দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিপদে পড়ে। যেমন, শিক্ষার্থীদের একটি মত প্রকাশের স্থান তৈরি হয়। সিনেটে ছাত্রপ্রতিনিধিরা থাকে। তারা শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কথা বলে। আমরা মনে করছি, ডাকসু নির্বাচন জরুরি। ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনকে কয়েক দফা স্মারকলিপি দিয়েছি।
তবে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর বক্তব্যকে একদিকে রেখে অনুকূল পরিবেশের অভাবের কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। নির্বাচন সম্পর্কিত বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্কের অভাব রয়েছে, যার ফলে বর্তমানে নির্বাচন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দিকে নজর দিতে হয়। জাতীয় রাজনীতিও স্থিতিশীল না। তবে আমরা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ভাবছি ও বিবেচনায় রেখেছি।
প্রসঙ্গত, ১৯২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪-২৫ সালে প্রথম ডাকসুর ভিপি মনোনীত করা হয়। ১৯৫৩ সালের আগ পর্যন্ত ভিপি মনোনীতই হতো। প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়