বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘সবুজ মানব প্রাচীর’ তৈরি করল জিএলটিএস

আগের সংবাদ

ভোটের হাওয়ায় জোটের মিশন

পরের সংবাদ

ডিবির অভিযানে গ্রেপ্তার ৩ : গে-অ্যাপস গ্রাইন্ডারই কাল হলো ইমতিয়াজের

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া হত্যা মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. মিল্লাত হোসেন মুন্না (১৯), মো. আনোয়ার হোসেন (৩৮) ও তৃতীয় লিঙ্গের এহসান ওরফে মেঘ (২৩)। হত্যার পর লাশ বহনে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানিয়েছে, গ্রাইন্ডার (এৎরহফৎ) নামে একটি গে চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে স্থপতি ইমতিয়াজের সঙ্গে অলিফ নামের একজনের পরিচয় হয়। ঘটনার দিন ভুক্তভোগী তার সঙ্গে দেখা করতে কলাবাগান যান। সেখানে দুজন আপত্তিকর অবস্থায় থাকাকালীন গ্রেপ্তারকৃতরা প্রবেশ করে ভুক্তভোগীকে মারধর শুরু করে টাকা দাবি করে। মারধরের এক পর্যায়ে ইমতিয়াজ মারা যায়। পরে তার মরদেহ মেঘের প্রাইভেটকারে উঠিয়ে সিরাজদিখান থানা এলাকার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোপে ফেলে দেয়া হয়। মূলত সমকামী প্রতারক গ্রুপের ফাঁদে ভুক্তভোগী পা দেয়ায় এমন ঘটনা ঘটে।
ইমতিয়াজ ঢাকার তেজগাঁও থানা এলাকার মোহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। স্থপতি ইমতিয়াজ তেজগাঁও থানার ডমিসাইল এলাকায় নিজের ফ্ল্যাটে সপরিবারে বসবাস করতেন। গত ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
স্থপতি ইমতিয়াজ হত্যার ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল সোমবার কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ইমতিয়াজ নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। তাতে ভুক্তভোগীর বাসার ঠিকানা তেজগাঁও থানাধীন হওয়ার ডিবি তেজগাঁও বিভাগ ৯ মার্চ থেকে ছায়া তদন্ত শুরু করে। ভুক্তভোগীর সন্ধান চলাকালীন সময়ই গত ৮ মার্চ সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানার চিত্রকোট ইউনিয়নের কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশের ঝোপ থেকে ভুক্তভোগী ইমতিয়াজের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ৯ মার্চ সিরাজদিখান থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।
তিনি আরো বলেন, তদন্তের ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তি ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরাফাত ওরফে ফয়সাল আহমেদ ওরফে হৃদয়, মিল্লাত হোসেন মুন্না, আলিফ, এহসান ওরফে মেঘ ও মো. আনোয়ার হোসেনদের শনাক্ত করতে সমর্থ হয় ডিবি। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত রবিবার সিরাজগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে মো. মিল্লাত হোসেন মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেদিন রাতেই কলাবাগান থানা এলাকা থেকে মো. আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই দুজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানা এলাকা থেকে হিজড়া এহসান ওরফে মেঘকে গ্রেপ্তার ও লাশ বহনে ব্যবহৃত টয়োটা কারিনা (ঢাকা মেট্রো-গ-১১-১৯৪৪) প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করা হয়।
আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা সমকামী ও হিজড়া সদস্য। গে চ্যাটিং অ্যাপস গ্রাইন্ডার-এর মাধ্যমে আগে থেকে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে রুম ডেটের কথা বলে টার্গেট করে বাসায় ডেকে নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় ব্ল্যাকমেইল করে টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে আসছে। অ্যাপসের মাধ্যমে ইমতিয়াজের সঙ্গে আলিফের সম্পর্ক হয়। ৭ মার্চ দুপুরে ইমতিয়াজ আলিফকে ফোন করলে আলিফ তাকে কলাবাগান থানার ৭৯/৩, ক্রিসেন্ট রোডের আরাফাতের বাসায় যেতে বলে। রুমের ভেতর ইমতিয়াজ ও আলিফ আপত্তিকর অবস্থায় থাকাকালীন পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার রুমে ঢুকে মারধর ও বড় অংকের অর্থ দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় প্রচণ্ড মারধরের কারণে ইমতিয়াজের মৃত্যু হয়। নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে তার লাশ ফেলে দেয়ার পর আলিফকে বাসাবো ও আনোয়ারকে গ্রিন রোড নামিয়ে দেয়া হয়। আর আরাফাত, মেঘ ও মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ এবং পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যায়। ভারতে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হলে তারা আবার একই উপায়ে দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হয়।
ডিবি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. এনামুল হক মিঠু জানান, পলাতক আলিফ ও এ চক্রের হোতা আরাফাতকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত আরাফাত গত ৮ বছর ধরে সমকামিতার মতো অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িত। সে মুন্না, আলিফ ও মেঘ হিজড়াকে দিয়ে ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করত। এরপর সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে রুম ডেটের কথা বলে বাসায় ডেকে নিয়ে আসত।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গে চ্যাটিং অ্যাপসটির সদস্য প্রায় ৫০ মিলিয়ন। আমরা হত্যা মামলার আসামিদের খোঁজ করতে গিয়ে ভয়াবহ তথ্য পেয়েছি। আন্তর্জাতিক এই অ্যাপসটি মূলত সমকামীরা ব্যবহার করেন। অ্যাপসে অনেক বাংলাদেশি চিকিৎসক, আইনজীবী, বিচারপতি ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ সদস্য হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছি। এরই মধ্যে আমরা উকিল, চিকিৎসক ও ভিন্ন পেশার মোট তিনজনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়